মোস্তফা আল মাসুদ, (বগুড়া) : বগুড়ার আদমদীঘিতে আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের নাশকতা মামলায় নাম না থাকায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। স্বজনপ্রীতি দেখিয়ে মামলা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সান্তাহার পৌর বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে। এতে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একশ্রেণির বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মী। ফলে অনেকেই বলছেন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করার পিছনে বিএনপি ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। আর তাদের ছত্রছায়ায় রয়েছেন পদধারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, বিস্ফোরক, অফিস পোড়ানো ও হত্যাসহ নানা অপরাধের কারণে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানায় এই মামলাগুলো হয়েছে।
তারই ধারাবাহিকতায় বগুড়ার আদমদীঘিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে বিস্ফোরক ও অফিস পোড়ানোর ঘটনায় ৩টি মামলা হয়েছে।

এরমধ্যে সান্তাহার হয়েছে একটি। গত বছরে ১৯ আগষ্ট সোমবার রাতে সান্তাহার পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডের তিওরপাড়া মোড় নামক স্থানে যুবদলের কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২১ আগষ্ট বুধবার রাতে ওই ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসিক বাদী হয়ে থানায় ৭৭ জনের নাম সহ অজ্ঞাত প্রায় দুইশতাধিক আসামী করে মামলা দায়ের করেন।

অভিযোগ উঠেছে সান্তাহার পৌর বিএনপি প্রভাবশালী নেতারা স্বজনপ্রীতি দেখিয়ে আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাকর্মীর নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করেনি। বিশেষ করে সান্তাহার পৌরসভায় আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা অধিকাংশ ছিলেন কাউন্সিলরের দায়িত্বে। ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির বাদশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল কুদ্দুস সান্তাহার পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জার্জিস আলম রতন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিস্কৃত) পরে তাকে অজ্ঞাত হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলাউদ্দিন তিনিও ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি।
৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামরুল তিনিও ওই ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলম তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। সূত্র বলছে, ওই সময়ে সান্তাহার পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু।
এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শেখ কুদরত-ই-এলাহী কাজল, যুগ্ম সম্পাদক নিসরুল হামিদ ফুতু, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ আহসান পিয়াল, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান মন্টি, সান্তাহার পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক চন্দন কুমার কুন্ড, জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুজ্জামান সোহেল, পৌর যুবলীগের আহবায়ক মেহেদী হাসান রিগান, যুগ্ম আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম। এসব প্রত্যেক পদধারী নেতাদের সান্তাহার বাড়ি হওয়ায় পৌর বিএনপিসহ বিভিন্ন সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।
যারমধ্যে অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতারা সান্তাহার পৌর বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের আত্বীয়, বন্ধু, ঠিকাদারিসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী পার্টনার থাকার কারনে তাদের থেকে গোপনে সুবিধা নিয়ে আশ্রয় দিয়েছেন। তাদের ছত্রছায়ায় নিজ বসতবাড়িতে দিনযাপন করে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
এদিকে সান্তাহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর খান, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য সমাজ খান।
আদমদীঘি সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান, ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জালাল উদ্দীন, একই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি উজ্জ্বল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা উজ্জ্বল, একই ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুল হাই লুলু, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমু এসব পদধারী নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়নি।
অথচ বিএনপি নেতাদের ইশারায় প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার করা হচ্ছে অজ্ঞাত নামা ওয়ার্ডের কর্মী সাধারণ দর্জি শ্রমিক, আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দেওয়া ব্যক্তি। এতে আওয়ামী লীগের পদধারী বেশিরভাগ নেতাকে প্রতিষ্ঠিত করছেন বিএনপি এমন টাই বলছেন স্থানীয়রা।
আদমদীঘি থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নাশকতা মামলায় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের বহু নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কতগুলো গ্রেপ্তার করা হয়েছে তালিকা দেখে বলতে পারবো।
সান্তাহার পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌরসভা মেয়র তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে চাননা। বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা জানান, এ বিষয়ে আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি।