বাগমারা (রাজশাহী) প্রতিনিধি : দলীয় লোকদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগের দাবিতে ও ভূয়া ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণের অভিযোগ এনে রাজশাহীর বাগমারার দুই কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে প্রথম আলোর প্রতিনিধির মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। পরে তা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
আউচপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি ওই ইউনিয়ন শাখার সভাপতি নেতা ডিএম শাফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আজ দুপুরে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

ডিএম শাফিকুল ইসলাম বাগমারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডিএম জিয়াউর রহমানের ছোট ভাই।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সোমবার দুপুর একটার দিকে আউচপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা ডিএম শাফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একদল ক্যাডার বাগমারা উপজেলা পরিষদে আসেন।
চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদের দোতলায় একটি কক্ষে অবস্থান করেন। তাঁর অনুসারী ১৫-২০ জন উপজেলা কমপ্লেক্সের চারতলায় উঠে উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কক্ষে যান।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক পরিস্থিতি বুঝতে পেরে পাশের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে আশ্রয় নেন। সেখানে গিয়ে চেয়ারম্যানের লোকজন খাদ্য কর্মকর্তাকে সনাক্ত করে তাঁর কাছে আউচপাড়া ইউনিয়নে তাঁদের দলীয়
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ডিলার (পরিবেশক) নিয়োগের দাবি জানান। একই সঙ্গে পূর্বে নিয়োগ পাওয়া দুই পরিবেশকের বিরুদ্ধে ট্রেড লাইসেন্স জালিয়াতির অভিযোগ আনেন।
খাদ্য কর্মকর্তা পরিবেশক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কেন তা বাস্তবায়ন করছেন না এমন প্রশ্ন করে তাঁর ওপর চড়াও হয়। উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানালে ঘরে থাকা বিএনপির লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে লাঞ্চিত করেন।
এসময় পাশের কক্ষে থাকা খাদ্য দপ্তরের খাদ্য পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম (৫৯) খাদ্য কর্মকর্তাকে উদ্ধারের জন্য আসেন। এসময় সেখানে থাকা চেয়রাম্যানের লোকজন আমিরুল ইসলামের গলা টিপে ধরেন।
এসময় খবর পেয়ে প্রথম আলোর বাগমারা প্রতিনিধি মামুনুর রশিদ ওই হামলার ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। পরে চেয়ারম্যান শাফিকুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে খাদ্য কর্মকর্তার ওপর তিনিও চড়াও হন এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। পরে তিনি সাংবাদিকের মুঠোফোন ফেরত দেন।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক নবী নওয়াজেস আমিন জানান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতয়া পরিবেশক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তবে আগের পরিবেশকরা উচ্চ আদালতে মামলা করলে কার্যক্রমটি স্থগিত হয়ে যায়।
এই বিষয়টি চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজনদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁরা আগের পরিবেশকদের বাদ দিয়ে নিজেদের অনুগত লোকদের নিয়োগের দাবি করে। অফিস কক্ষে ঢুকে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে। এরকম ঘটনা ঘটবে বুঝতে পারেননি।
আউচপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা ডিএম শাফিকুল ইসলাম লোকজন নিয়ে উপজেলা পরিষদে আসার কথা স্বীকার করে বলেন, ঘটনার সময় আমি নিচে ছিলাম, পরে উপরে গিয়ে ছেলেপেলেদের সরিয়ে এনেছি।’ তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর স্বাক্ষর জাল করে দুই পরিবেশক শামীম আল মামুন ও শাহাদাত হোসেন ভূয়া ট্রেড লাইসেন্স জমা দিয়েছেন। খাদ্য কর্মকর্তা এটা গ্রহণ করেছেন। এটা জানার জন্য লোকজন নিয়ে এসেছিলেন।
তবে তিনি এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। বাগমারা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাশেদুল হক ফিরোজ জানান, পরিচয় দেওয়ার পরেও সাংবাদিকের মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, পরে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম জানান, বাগমারা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের ডেকে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা আর ঘটবে না বলে চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য এর আগে বিভিন্ন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে চেয়ারম্যান ডিএম শাফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতে মামলা করে কয়েক মাস আগে তা ফেরত পান। গত বছরের ৫ আগস্টের পর বড়ভাই বিএনপির সভাপতির দাপটে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
হামলা, ভাঙচুর ও মারামারির অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে বলে বাগমারা থানার পুলিশ নিশ্চিত করেছে।