নিজস্ব প্রতিবেদক : সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিগণের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল এর পরিবর্তে সংসদের হাতে ন্যস্ত হয়েছিলো।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপীল বিভাগ কর্তৃক ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষিত হলেও এ সংক্রান্ত রিভিউ দরখাস্তটি অনিষ্পন্ন থেকে যায়। গত বছরের ২০ অক্টোবর আপীল বিভাগ কর্তৃক উক্ত রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হলে বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত হয়।
এরপর বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্য বিশিষ্ট সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল কার্যক্রম শুরু করে। কাউন্সিলের অপর দুই সদস্য হলেন আপীল বিভাগের বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম এবং বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী।

সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, কাজী রেজা-উল হক এবং এ কে এম জহিরুল হক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে নিজ স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে স্বীয় পদ হতে পদত্যাগ করার ইচ্ছা পোষণ করলে গত বছরের ১৯ নভেম্বর, তাঁদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়।

এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ইতোমধ্যে গত বছরের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতির বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি তাদের বেঞ্চ প্রদান হতে বিরত থাকেন। তাদের মধ্যে একজন (বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন) চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে নিজ স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে পদত্যাগ করেন।
এছাড়া, দুইজন বিচারপতি ( বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম এবং বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন) হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাননি। ২০২২ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে তাঁরা নিয়োগ পেয়েছিলেন।
গত বছরের ৩০ জুলাই, তাদের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে আরও ছয় মাসের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি।
চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি, তাদের সেই বর্ধিত মেয়াদও শেষ হয়। এছাড়া, অপর দুইজন বিচারপতি মোঃ আতাউর রহমান খান এবং বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস) ইতোমধ্যে অবসর গ্রহণ করেছেন।
এর মধ্যে বিচারপতি মোঃ আতাউর রহমান খান গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এবং বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস বিগত ৩০ জানুয়ারি, তাঁদের চাকরিকালীন মেয়াদ পূর্ণ করে অবসরে যান।
এছাড়া, সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর রাষ্ট্রপতি দুইজন বিচারপতিকে অপসারণ করেন। এর মধ্যে বিচারপতি খিজির হায়াতকে গত ১৮ মার্চ, এবং বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে গত ২১ মে, অপসারণ করা হয়।
অপর পাঁচ (৫) বিচারপতির বিষয়ে বর্তমানে কাউন্সিলের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই পাঁচ বিচারপতির মধ্যে মাননীয় বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে গত ২৩ মার্চ, রাষ্ট্রপতি সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলকে নির্দেশনা দেন।
পরবর্তীতে গত ২৫ জুন, বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান এর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখা দিতে তাঁকে সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে তলব করা হয়।
গত ১ জুলাই, বিচারপতি আখতারুজ্জামান কাউন্সিলের সামনে হাজির হয়ে নিজের বিরূদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী আগামী ২৬ আগস্ট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক মো: আখতারুজ্জামান এর বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানীর দিন ধার্য করেছেন।