নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমলে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফ্যাসিস্টমুক্ত হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকে তার ছোঁয়া লাগেনি। এ সব প্রতিষ্ঠানে এখনো আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদী কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করছেন। তারা এখন ভোল পাল্টে বিএনপি-জামায়াত সাজার চেষ্টা করছেন। এইসব কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের স্ব,স্ব দায়িত্বে রেখে প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কার করা আদৌ সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন।

এরা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থাকায় পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা আবার দেশে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছে। ৫ আগষ্টের পর থেকে অনেক আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের সরকারী চাকুরীজীবি আত্মীয় স্বজনের বাসায় আত্মগোপন করে আছেন। তাদেরকে সুরক্ষা দিচ্ছেন এই সব সরকারী কর্মকর্তারা। ফলে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন যুগ্ম পরিচালকের ফ্ল্যাটে একাধিক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র হত্যা মামলার আসামী ও আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের গোপন বৈঠক ও টাকা পয়সা লেনদেন এবং মোবাইলে বিদেশে পলাতক একজন আওয়ামী লীগের এমপির সাথে কথা বলার অভিযোগ পাওয়াগেছে।

এটি একটি রাষ্ট্রদ্রোহীমূলক অপরাধ হলেও ওই যুগ্ম পরিচালক শেখ হাসিনার প্রতি অধিক আনুগত্যশীল থাকায় নির্দিধায় এই ঝুঁকি নিয়েছেন। এ ছাড়াও এই যুগ্ম পরিচালকের বিরুদ্ধে আয়ের সাথে সংগতিহীন বিপুল পরিমান অর্থ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়াগেছে।
শতভাগ আওয়ামীমনা এই যুগ্ম পরিচালকের নাম এ কে এম মাসুম বিল্লাহ । তিনি বর্তমানে ঢাকার মতিঝিলস্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। প্রাপ্ত অভিযোগ সুত্রে জানাগেছে, এ কে এম মাসুম বিল্লাহ ১৯৯৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা ক্ঠোায় বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক পদে চাকুরী পান।

তার পিতা: মরহুম আব্দুল কুদ্দুস বিশ^াস একজন মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। সে সুবাদেই তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় চাকুরী লাভ করেন। মাগুরা জেলার সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পাকাকাঞ্চনপুর গ্রামে তার পৈত্রিক বাড়ি। তার এক ভাইয়ের নাম আলী আহমেদ বিশ^াস। তিনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা পার্টির নেতা ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিএনপি নেতা।
একটি বিশ^স্থ সুত্রে জানাগেছে, তার ভাই বিএনপি নেতা আলী আহমেদ প্রায়ই ঢাকায় এসে যুগ্ম পরিচালক এ কে এম মাসুম বিল্লাহ’র পান্থপথের ফ্ল্যাটে অবস্থান নেন। তিনি যে কয়দিন ঢাকায় থাকেন সেই কয়দিন এই ফ্ল্যাটটিকেই গোপন বৈঠকের কাজে ব্যবহার করেন। সম্প্রতি তিনি এই ফ্ল্যাটে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (যার নামে মাগুরা ও ঢাকায় ৪/৫ টি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র হত্যা মামলা রয়েছে।) সেই হুমায়ুন রশীদ মুহিত চেয়ারম্যানের সাথে গোপন বৈঠক করেন।
এ সময় সেখানে আরো দুজন আওয়ামীলীগ নেতা কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এই ফ্ল্যাটে বসেই তিনি শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস-২ ও মাগুরা -১ আসনের সাবেক এমপি দেশ মাফিয়া সাইফুজ্জামান শিখরের সাথে মোবাইলে আধা ঘন্টা যাবত কথা বলেন।
শুধু কথায় নয়, শিখর প্রদত্ত একটি মোবাইল ফোন সেটও গ্রহণ করেন। এই ফোন ব্যবহার করে তিনি শিখরের সাথে যাতে সব সময় কথা বলতে পারেন সেজন্য মুহিত চেয়ারম্যানকে দিয়ে শিখর ফোনটি পাঠান বলে জানা যায়। আওয়ামী লীগ নেতা মো: সাইফুজ্জামান শিখরের নামেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র হত্যার ৭/৮ টি মামলা রয়েছে ঢাকা ও মাগুরায়।
এই বৈঠকে শিখর ও মুহিতের মাগুরার সব সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব নেন আলী আহমেদ। উল্লেখ্য যে, শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস-২ মো: সাইফুজ্জামান শিখর এখন স্বপরিবারে ভারতে পালিয়ে রয়েছেন। কিন্তু তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে আলী আহমেদ বিশ্বাসের ।
মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা শিখর ও মুহিতের সম্পদ রক্ষা ও তাদের নেতা কর্মীদের সুরক্ষা দিচ্ছেন। পরবর্তীতে ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা দুইজন আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীই এ ঘটনাটি প্রকাশ করে দেন। পান্থপথের ওই ভবনের আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর ২০২৫ মাসের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করলেই এ তথ্যের প্রমান পাওয়া যাবে।
এ দিকে যুগ্ম পরিচালক এ কে এম মাসুম বিল্লাহ সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে জানাগেছে, তিনি অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থে ঢাকার পান্থপথে যৌথ উদ্যোগে একটি ১০ তলা এপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণ করেছেন। এই ভবনে তার ৩-৪ টি ফ্ল্যাট রয়েছে। একটিতে তিনি বসবাস করেন।
বাকীগুলো ভাড়া দিয়েছেন। অপরদিকে ঢাকার ধানমন্ডি,বসিলা ও উত্তরায় তার একাধিক ফ্ল্যাট ও আবাসন ব্যবসা রয়েছে। এই সব আবাসন কোম্পানীর তিনি শেয়ারহোল্ডার পার্টনার। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন এই আবাসন ব্যবসায়। তিনি তার ভাই আলী আহমেদকে একখানা গাড়িও কিনে দিয়েছেন বলেও সতীর্থদের কাছে স্বীকার করেছেন।
যুগ্ম পরিচালক এ কে এম মাসুম বিল্লাহ’র বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি দেশের বেশ কিছু আবাসন,এ্যাগ্রো, ডেইরী,বীজ উতপাদন, ফিসারিজ এবং কুষি ভিত্তিক বিশেষ প্রকল্পে সুদমুক্ত এবং আংশিক সুদের লোন পাইয়ে দিয়ে ওই সব কোম্পানীর কাছ থেকে মোটা অংকের কমিশন নিয়েছেন।
যে সব কোম্পানী কমিশন দিতে পারেনি সেগুলোতে তিনি শেযার বা আংশিক মালিকানা নিয়েছেন। তার এই বাণিজ্য এখনো অব্যাহত আছে। তার ইনকামট্যাক্স ফাইল বা সরকারী দপ্তরে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণী পরীক্ষা করলেই এসব তথ্যের সত্যতা মিলবে।
এখন প্রশ্ন হলো যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মত আর্থিক খাতের একটি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানে সরকারি চাকুরী করে কিভাবে তিনি তার ফ্ল্যাটে আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে তার ভাই আলী আহমেদ বিশ^াসকে গোপন বৈঠক করার সুযোগ দিলেন? এটা কি রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ নয়? অন্যদিকে কোন পথে তিনি এতো টাকা উপার্জন করলেন যে, পান্থপথের মত জায়গায় এ্্যাপার্টমেন্ট ভবন তৈরি করলেন? অন্যদিকে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানীতে তার শেয়ার বা বিনিয়োগ (অংশিদারিত)¡ কিভাবে সম্ভব হলো?
এ বিষয়ে পত্রিকার পক্ষ থেকে যুগ্ম পরিচালক এ কে এম মাসুম বিল্লাহ’র সাথে তার সেল ফোনে কল দিলে তিনি প্রথমে কোন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে এ প্রতিবেদককে নিজেই ফোন দিয়ে তার অফিসে দেখা করতে বলেন।
এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা,স্বরাষ্ট উপদেষ্টা, অর্থ সচিব,বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ও রাষ্ট্রিয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের পদক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।