# দুর্নীতির শিখরে পৌঁছে দেওয়া প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারকে সরাতে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ # নতুন নেতৃত্বে ভাঙবে সিন্ডিকেট

নিজস্ব প্রতিবেদক : আজকের দিনটি গণপূর্ত অধিদপ্তরের জন্য হতে পারে মোড় ঘোরানোর দিন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারকে যেকোনো সময় সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ আসতে পারে। স্বৈরশাসনের ১৬ বছরের অন্ধকারে যিনি এক ভণ্ডপীরের বেশে এই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদে বসে ছিলেন, আজ তার পতনের ক্ষণ ঘনিয়ে এসেছে।
পদোন্নতির নাটকীয় ইতিহাস : ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর। শেখ রেহানার সরাসরি তদবিরে ১৫ ব্যাচের প্রথম আশরাফুল আলমকে সরিয়ে, ৬ জন সিনিয়রকে পাশ কাটিয়ে প্রধান প্রকৌশলী বানানো হয় শামীম আখতারকে। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত এই প্রকৌশলী তখন থেকেই নিজেকে “পীর” হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন। কিন্তু পীরের আবরণে ঢেকে রাখেন ভয়ঙ্কর এক সিন্ডিকেট—যেখানে দুর্নীতি, তদবির আর কমিশন বাণিজ্য ছিল প্রতিদিনের রুটিন।

কেক কাটার আড়ালে লুটপাটের সাম্রাজ্য : প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় কেক কাটার সংস্কৃতি। মুজিবের জন্ম ও মৃত্যুদিনে তো বটেই, এমনকি শেখ হাসিনার জন্মদিনেও কেক কেটে চেয়ার বাঁচানোর চেষ্টা করেন তিনি। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের জন্মদিনে একদিনে তিনবার কেক কাটেন শামীম আখতার!

ধর্মীয় পোশাকে ঢাকা পীরের লেবাসের আড়ালে তিনি প্রতিমন্ত্রীদের তোষণ করেন, এমনকি একজন নির্দিষ্ট সাপ্লায়ার বসিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রীকে খুশি রাখার জন্য। দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ সাংবাদিকদের বলেন, “প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ নারী ও মদের আসরের নায়ক আর তার ক্যাশিয়ার ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু গং। শামীম আখতার তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন।”
মুজিববাদ চাপিয়ে দেওয়ার অভিলাষ : ছাত্রলীগের রাজনীতিতে বেড়ে ওঠা শামীম আখতার প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার পর থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর চাপিয়ে দেন তথাকথিত “মুজিবীয় দর্শন”। শোক দিবসে জোর করে একদিনের বেতন কেটে নেন।
২০২৩ সালে কক্সবাজারের কর্মশালায় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন: “রাজাকারের সন্তানরা অপতৎপরতা চালালে প্রতিরোধ করবেন, শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবেন।”
২০২৪ সালে কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে কর্মকর্তাদের বলেন: “সরকারি সম্পদ বিনষ্টকারীদের প্রতিহত করতে হবে।” এভাবে প্রধান প্রকৌশলী পদটি হয়ে ওঠে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার।
পদায়নের বাণিজ্য: রেকর্ড গড়েছিলেন ভণ্ডপীর : দায়িত্ব নেয়ার মাত্র ৪৩ কর্মদিবসে তিনি বদলির রেকর্ড গড়েন। ৩৫টি সার্কুলারে বদলি হন ১৩৫ জন কর্মকর্তা। প্রতি আড়াই ঘন্টায় একজন করে বদলির নজির গড়ে শামীম আখতার। জোনভিত্তিক বদলির জন্য আলাদা আলাদা রেট নির্ধারণ করা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বসানো হয় দুর্নীতিবাজ অফিসারদের। সৎ কর্মকর্তাদের নির্বাসিত করা হয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ফলে মেরামত ও নির্মাণকাজে দুর্নীতি মহামারী আকার ধারণ করে। ঢাকায় প্রকল্পের কাজের মান দাঁড়ায় মাত্র ২০–২৫ শতাংশে, বাকিটা চলে যায় হরিলুটে। এই সিন্ডিকেটের কেন্দ্রে ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম আতিক ও তার সহযোগীরা।
নতুন নেতৃত্বে আশা : সরকারি মহল থেকে পাওয়া ইঙ্গিত অনুযায়ী, প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালনে আলোচনায় আছেন দুইজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী—আবুল খায়ের ও খালেকুজ্জামান চৌধুরী। দুজনেই ছাত্রদলীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং এজন্য দীর্ঘ ১৭ বছর প্রত্যন্ত অঞ্চলে পদায়িত ছিলেন। ফলে তারা ভণ্ডপীরের সিন্ডিকেটের বাইরে ছিলেন সবসময়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এদের মধ্যে কেউ দায়িত্ব নিলে দুর্নীতির সিন্ডিকেট ভেঙে গণপূর্ত অধিদপ্তর আবারও জনসেবার প্রতিষ্ঠানে রূপ নিতে পারবে। গণপূর্ত অধিদপ্তর একসময় ছিল দেশের অন্যতম স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। কিন্তু স্বৈরশাসনের আঁধারে, ভণ্ডপীর শামীম আখতার ও তার সিন্ডিকেটের হাতে এটি পরিণত হয় দুর্নীতির আখড়ায়। আজ তার পতনের ঘন্টা বাজছে। প্রশ্ন এখন একটাই—নতুন নেতৃত্ব কি সত্যিই সিন্ডিকেট ভেঙে সৎ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটিকে ফিরিয়ে আনতে পারবে, নাকি ভণ্ডপীরের উত্তরসূরিরা আবারও গণপূর্তকে অন্ধকারে ঠেলে দেবে?