নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা’র ২৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার ।

সভাপতিত্ব করেন সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ওবায়দুল হক।বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, মাননীয় উপদেষ্টা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব জনাব মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে ১৭৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৪৬ বছরের ইতিহাসকে গর্বের সাথে স্মরণ করেন।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। আমরা চাই এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী, বাস্তবমুখী এবং আধুনিক রূপে গড়ে তুলতে।

তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার ঐতিহ্যে যুক্তিবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, বিজ্ঞানচর্চা ও ধর্মবিদ্যা একসাথে ছিল। আমরা চাই এই ধারাকে পুনরুজ্জীবিত করে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে ধর্মীয় শিক্ষার একটি সমন্বিত রূপ তৈরি করতে।
অধ্যাপক ড. সি আর আবরার আরও বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা অবশ্যই মাদ্রাসা শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু থাকবে, তবে শিক্ষার্থীদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে আধুনিক শিক্ষার উপাদানগুলো সংযোজন করতে হবে। এজন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একাধিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
তিনি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের (এলামনাই) সম্পৃক্ততার প্রশংসা করে বলেন, এলামনাইদের অংশগ্রহণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে এক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। রাষ্ট্রের পাশাপাশি সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রগতিতে অবদান রাখতে।
বক্তব্যে তিনি শিক্ষক সংকট, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা, বিশুদ্ধ পানি ও পরিবহন সংকটসহ বিভিন্ন বিষয় দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ২৪৬ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসাকে আরও আধুনিক ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে হবে। এটি শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জ্ঞানের ধারক।”
তিনি তাঁর বক্তব্যে সকল ধর্ম ও পেশার মানুষের প্রতি সম্মান ও মর্যাদার সাথে বসবাসের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতার আহ্বান জানান।
তিনি ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “সমাজে বিভেদ নয়, সহমর্মিতা ও যুক্তিবাদী চিন্তাই আমাদের পথপ্রদর্শক হবে। ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে আলিঙ্গন করে আমরা উন্নত ও কর্মক্ষম নাগরিক হিসেবে দেশ ও সমাজে অবদান রাখতে পারব।”
বক্তব্য শেষে এই বিশাল আয়োজনের জন্য আয়োজক কমিটি, বিশেষ করে এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও শিক্ষা অনুরাগীরা উপস্থিত ছিলেন।