দেশে মৃতের সংখ্যা ১৬৮
আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬৬৭
সব চেয়ে বেশী আক্রান্ত ঢাকায়
মহসীন আহমেদ স্বপন : বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেয়া করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই লম্বা হচ্ছে। তবে আশার কথা হলো এখন পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি মানুষ এ মারণ-ভাইরাসের কবল থেকে সুস্থও হয়ে উঠেছেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়ার্ল্ডোমিটারে বৃহস্পতিবার সকালে এ সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়।
এরই মধ্যে ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৩২ লাখ ২০ হাজার ১৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে প্রাণহানি ঘটেছে ২ লাখ ২৮ হাজার ২১৫ জনের।
আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ লাখ ৩০৩ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ১৯ লাখ ৯১ হাজার ৬৩০ জন। এদের মধ্যে ১৯ লাখ ৩১ হাজার ৮১৯ জনের শরীরে মৃদু সংক্রমণ থাকলেও ৫৯ হাজার ৮১১ জনের অবস্থা গুরুতর।
ভাইরাসটির আক্রমণে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার ৬৬৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৩ জন।
মৃতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরে অবস্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। দেশটিতে এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৬৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৩ হাজার ৫৯১ জন।
মৃত্যুর তালিকার তিন নম্বরে উঠে এসেছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৬ হাজার ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬৫ হাজার ২২১ জন। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে স্পেন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ২৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে অবশ্য ২য় অবস্থানে রয়েছে এ দেশটি। এখানে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৯ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুর তালিকায় এর পরের অবস্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২০ জন।
এদিকে জার্মানিতে ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৩৯ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৪৬৭ জনের। তুরস্কে ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এখানে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজারের বেশি মানুষের। রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৯৯ হাজার ৩৯৯ জন হলেও মৃত্যু হয়েছে মাত্র ৯৭২ জনের। কানাডায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫১ হাজার ৫৯৭ জন, মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৯৯৬ জনের।
ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয় চীনে। সেখানে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৮৬২ জন এবং মারা গেছেন ৪ হাজার ৬৩৩ জন।
এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ইরানে। এখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩ হাজার ৬৫৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ জনের।
বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরো ৫৬৪ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬৬৭। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছেন আরো ৫ জন। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ১৬৮। মারা যাওয়াদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা। মারা যাওয়াদের মধ্যে দুইজন ষাটোর্ধ্ব। বাকি তিনজন ৪০-৫০ বছর বয়সী। এর মধ্যে একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও একজন পুলিশ সদস্য।
২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৬২৬টি নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে পরীক্ষা করা হয় ৪ হাজার ৯৬৫টি নমুনা। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১০ জন এবং এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৬০ জন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, যারা দেশবাসীর পাশে বিভিন্ন দাঁড়িয়েছেন তাদের সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
তথ্যমতে, দেশের ৬৪ জেলার ৬২টিতেই করোনা রোগী পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকা জেলায়। যেখানে মোট রোগীর প্রায় ৭৩ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে। ঢাকার চার জেলার মধ্যে পর্যাক্রমে সংক্রামণে হার বেশি নায়ারণগঞ্জে। এরপর রয়েছে গাজীপুর। গাজীপুরের পর সংক্রামণের হারে এগিয়ে কিশোরগঞ্জ এবং চতুর্থ জেলা নরসিংদী।
ঢাকা সিটির যেসব জায়গায় সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে: ১) রাজারবাগ, ২) মোহাম্মদপুর, ৩) লালবাগ, ৪) যাত্রাবাড়ি, ৫) বংশাল, ৬) চকবাজার, ৭) মিরপুর, ৮) উত্তরা, ৯) তেজগাঁ, ১০) মহাখালী।
বৃহস্পতিবার ২৯টি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। নতুন যুক্ত হয়েছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ। এছাড়া বেসকারি হাসপাতালের মধ্যে অ্যাপেলো হাসপাতালের পরীক্ষার তথ্য আজ সংযুক্ত করা হয়েছে। আরো বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হবে। তবে, তাদের শর্তসমূহ যথাযথ পূরণ করতে হবে।
ঢাকায় যেসব হাসপাতাল রয়েছে তাতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী ভর্তি হয়েছে ৯৫ জন এবং এ পর্যন্ত ঢাকার হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি আছেন ৯৫৬ জন। এছাড়া এ পর্যন্ত হাসপাতালগুলো থেকে চিকিৎসা পেয়েছেন ১ হাজার ৭৩১ জন।
প্রসঙ্গত, বিগত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে বৈশ্বিক মহামারিতে পরিণত করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩৩ লাখ ছুঁই ছুঁই। মারা গেছেন দুই লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। তবে ১০ লাখ ৬ হাজারেরও বেশি রোগী ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এপ্রিলের শুরু থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে; যার মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মানুষকে ঘরে রাখতে রাজপথের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব ও পুলিশ।
তবে ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য মার্চেই ব্যবস্থা নেয় সরকার। বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। পঞ্চম দফায় বাড়িয়ে সেই ছুটি করা হয়েছে আগামী ৫ মে পর্যন্ত।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের পদক্ষেপ অনেকটা এ রকমই। তবে এর মাঝেও কিছু কিছু দেশ তাদের দেয়া লকডাউন কিছুটা শিথিল করছে। স্পেন, জার্মানি ও ভারত সেই পথে হেঁটেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালিও তেমনটাই ভাবছে।