বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ
মহসীন আহমেদ স্বপন : বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়ছেই। গেল ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে দেশে করোনায় মারা গেছেন ১১ জন। এ নিয়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৩৯ জনে। এদিন সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছে ১০৩৪ জন। করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হলেও তা মূলত প্রকাশ্যে আসে জানুয়ারিতে। ফেব্রুয়ারিতে চীনে যখন এটি ভয়াবহ রূপ নেয়, তখন ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে। সবাই প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়া শুরু করে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও বিদেশ ফেরতদের ক্ষেত্রে স্ক্রিনিংসহ নানা পদক্ষেপ নেয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা নতুন সংযুক্ত একটিসহ মোট ৩৭টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও সাত হাজার ২৬৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় সাত হাজার ২০৮টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো এক লাখ ২৯ হাজার ৮৬৫টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও এক হাজার ৩৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এটি ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৬৯১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ১১ জন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৩৯-এ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২৫২ জন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুই হাজার ৯০২ জন।
গত রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় বিগত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাঁচ হাজার ৭৩৮টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও ৮৮৭ জনের দেহে, যা সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও হয়েছে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের রেকর্ড।
বুলেটিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
চীনের উহান শহরে গত ডিসেম্বরে প্রথম শনাক্ত হলেও এখন গোটা বিশ্বই করোনাভাইরাসের কবলে। মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪২ লাখ। মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ৮৪ হাজার প্রায়। তবে প্রায় ১৫ লাখ রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
তবে এত কিছুর পরও ৮ মার্চ দেশে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম ভাইরাসটির সংক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর ক্রমেই বাড়তে থাকে এর প্রাদুর্ভাব। এপ্রিলে এসে ভাইরাসটি যেন মারাত্মক রূপ ধারণ করে। যার ফলশ্রুতিতে মৃতের সংখ্যা পেরিয়ে যায় দুই’শ।
বিশ্বের অন্যান্য দেশ যখন এর করাল গ্রাসে দিশেহারা তখন অনেকটাই যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিল চীন। অনেকদিন ধরে সেখানে মৃত্যুর তথ্যও পাওয়া যায়নি। এছাড়া ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি অনেকদিন। কিন্তু রোববার (১০ মে) সেখানে আবার নতুন করে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন।
এছাড়া ভাইরাস দমনে অনেকটাই সফল জার্মানি লকডাউন শিথিল করে বিপাকে পড়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত লকডাউন শিথিল করার পর থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। এরপর থেকে বারবার ঘুরে ঘুরে বিশেষজ্ঞদের সতর্ক বাণী সামনে আসছে। তারা বলেছিলেন, ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক যতদিন বাজারে না আসবে ততদিন লকডাউনই একমাত্র ভরাস।
এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী এ ভাইরাসটিতে সংক্রণের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে ৪১ লাখ ৮১ হাজার ২১৮ জনের শরীরে। এছাড়া এতে মারা গেছেন ২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭৭ জনের শরীরে।
ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন ১৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯২ জন।
