পীরেরবাগের পীরের ভন্ডামী

অপরাধ এইমাত্র রাজধানী

মিরপুরে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে

জড়িত থাকার অভিযোগ

 

বিশেষ প্রতিবেদক : মিরপুরের দক্ষিণ পীরেরবাগ ভন্ডপীর বরকত উল্লাহ কাছেমীর বিভিন্ন অসামাজিক, অনৈতিক ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকালাপসহ মসজিদ-মাদ্রাসার নামে দান-অনুদানের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী জানমালের রক্ষায় ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মিরপুর বিভাগে অভিযোগ দিয়েছে।
দক্ষিণ পীরেরবাগ বাড়ির মালিক সমিতির অভিযোগে জানা যায়, বরকত উল্লাহ কাছিমী একজন ভন্ডপীর, প্রতারক, মিথ্যাবাদী। তিনি এলাকার জনগনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের নামে জমি ক্রয় করে মাদ্রাসা ও মসজিদ করেছেন। কিন্তু ওয়াকফ করে দেওয়ার কথা বললেও অদ্যাবধি ওয়াকফ করে দেননি। এ নিয়ে এলাকার জনগন ও বাড়ির মালিক কল্যাণ সমিতির সাথে দন্দ্ব দেখা দিলে সে তার সন্ত্রাসীবাহিনী দিয়ে এলাকার কিছু জনগনকে মারধর করে এবং বাড়িঘর ভাংচুর করে। তার বিরুদ্ধে বাড়ির মালিক কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত নং-৩১, মিরপুর থানার মামলা নং-৩৮ (১) ১৮ ধারা ৩২৩/৪২৭ পেনালকোর্টে মামলা করা হয়। পুলিশী অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী এবং মানিলন্ডারিং এর প্রতিবেদন দেওয়া হয়। মুফতি বরকত উল্লাহ কাছেমী আদালতে হাজির হয়ে তার সমস্ত দোষ শিকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আদালত তাকে অর্থদন্ড ও অনাদায়ে জেল প্রদান করেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বরকত উল্লাহ কাছেমী দক্ষিণ পীরেরবাগ বায়তুন নূর জামে মসজিদের খতিব থেকে বহিস্কৃত হন। এছাড়া কাছেমী স্বঘোষিত পীরেরবাগের পীর নাম ধারণ করে দীর্ঘদিন থেকে প্রতারণা ও ত্রাস সৃষ্টি করছে। এসব প্রতারণা কাজে তাকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি যথারীতি একদল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন। এসন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে এলাকায় লোকজন তার অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। পানি পড়া, ভুয়া তাবিজপড়া ও কুফুরি কালাম এর মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করার ভায়ভীতি দেখিয়ে টাকা পয়সা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
২৭/০৯/২০১৭ইং তারিখে দূর্নীতি দমন কমিশন ১নং সেগুনবাগিচা, ঢাকা বরাবর তার বিরুদ্ধে আর একটি অভিযোগ দেয়া হয়। অভিযোগে দেখা যায় বরকত উল্লাহ কাছেমী বিভিন্ন দূর্নীতি, প্রতারনা ও আত্মসাতের মাধ্যমে বিরাট অংকের চাঁদা সংগ্রহের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ও অবৈধভাবে বিপুল পরিমান সম্পদ অর্জন করেন। তিনি খতিব থাকা কালীন পীরেরবাগ নামাপাড়া এলাকায় মসজিদ ও মাদ্রাসা করার নামে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সাহায্য করার আহ্বান করেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এলাকার সহজসরল ধর্মপ্রাণ লোকজন জমি ক্রয় করার জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা তার হাতে প্রদান করেন। তিনি উক্ত টাকা দিয়ে নামাপাড়ায় ২ (দুই) শতক জমি নিজ নামে ক্রয় করে এলাকাবাসীকে জানায় যে মসজিদের নামে তিনি জমি ক্রয় করেছেন। প্রকৃতপক্ষে মসজিদ ও মাদ্রাসার নামে তিনি কোন জমি ক্রয় করেন নাই। এ ভাবে প্রতারণার মাধ্যমে তিনি মসজিদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে নিজ নামে জমি রেজিষ্ট্রী করেন। এছাড়াও মসজিদ মাদ্রাসার নাম ভাঙ্গিয়ে লঞ্চঘাট, বড় বড় বাজার, বড় বড় মার্কেট, মাদ্রাসার এতিম ছাত্র দিয়ে চাঁদা ও সাহায্য আদায় করে নিজের নামে বাড়ি ফ্ল্যাট ও অট্টালিকা গড়ে তুলেছেন। তার ১৪২/৮এ দক্ষিণ পীরেরবাগ মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ এই ঠিকানায় ১ (এক) কোটি টাকা ২টি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠির সাথে জড়িত এমন অভিযোগ আছে। তার একটি সরকার বিরোধী বিবৃতি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় গত ২৪/০৪/২০১২ ইং তারিখে প্রকাশিত হয়েছিল। ২৪/০৮/২০১৭ তারিখে তার বিরুদ্ধে ডিএমপির মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পীরেরবাগস্থ কাছেমীয়া মাদ্রাসা মসজিদের পরিচালক বরকত উল্লাহ কাছেমীর বিভিন্ন অসমাজিক ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকালাপ রোধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের উচ্চ মহলে জানান।
এ ছাড়াও আরো বহুসম্পদ নামে বেনামে আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৪১/১ গ্রীন টাওয়ার দক্ষিণ পীরেরবাগ, মিরপুর, ঢাকা এই হোল্ডিং নাম্বারের একজন অংশীদার এবং ১৪১/১/বি/৫ এই ঠিকানায় ২.২৫ (সোয়া দুই কাঠা) জমি ও ৪ তলা বিল্ডিং তার নামে রয়েছে। এছাড়াও মোহাম্মাদপুর থানার কাঁটাশুরে তার জমি রয়েছে বলে জানা যায়। ইসলামী, জনতা ব্যাংকসহ তার নিজের নামে ও আত্মীয়দের নামে কোটি কোটি টাকা আছে বলে জানা যায়। বরকত উল্লাহ কাছেমী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী গোষ্ঠীর সাথেও সম্পৃক্ততা থাকায় ডিএমপি কমিশনার ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তার কর্মকান্ড নজরদারিতে রাখার নির্দেশ প্রদান করেছেন। মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমদের কথা বলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ব্যাপারে বরকত উল্লাহ কাছেমীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সবকিছু অস্বীকার করেন।


বিজ্ঞাপন