কেউ মানছে না সরকারী নির্দেশনা
আমিনুর রহমান বাদশা : সরকার তিন পর্যায়ে (হিমাগার, পাইকারি ও খুচরা) আলুর দাম বেঁধে দিলেও অস্থির আলুর বাজার। কেউ মানছে না নির্ধারিত দাম। বিভিন্ন জেলায় এখনো খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিতের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি দামে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলু ১৫-২০ টাকা ও হিমাগারে ৭ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
সরকার খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও আলুর রাজ্য মুন্সীগঞ্জে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। একই মূল্য ঢাকায়ও। লাল আলুর জন্য বিখ্যাত বগুড়ায়ও খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। গত ১৪ অক্টোবর সরকার তিন পর্যায়ে আলুর দাম বেঁধে দেয়। কেজি প্রতি খুচরা ৩০, পাইকারি ২৫ ও হিমাগার থেকে ২৩ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। এ দামে আলু বিক্রি না করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়। সরকারের এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয় সব জেলা প্রশাসককে।
দাম বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামলেও কমেনি আলুর দাম। অভিযান শুরু হলেই কমে যাচ্ছে আলুর দাম। কোথাও আবার দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে গেলে ফের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, সিন্ডিকেটের কারসাজিতেই অস্থির আলুর বাজার। হিমাগারে সংরক্ষণ করা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণেই আলুর দাম কমছে না। উত্তরবঙ্গের ছোট ব্যবসায়ীরা বাজারে আলু ছাড়লেও বড় ব্যবসায়ীরা ছাড়ছেন না। মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোয় আলু নেই বলে দায় সারছেন ব্যবসায়ীরা। বগুড়ার হিমাগারগুলো থেকেও ছাড়া হচ্ছে না আলু। হিমাগার থেকে আলুর সরবরাহ না থাকায় রাজশাহীর অনেক আড়ত এখন ফাঁকা।
এদিকে দেশের আলুর রাজ্য হিসেবে পরিচিত মুন্সীগঞ্জ ও বগুড়ায় খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। ঢাকায় খুচরা বাজারেও একই দামে বিক্রি হচ্ছে আলু। বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে সাদা আলু ৪৯-৫০ ও লাল আলু ৫৮-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে ৫০-৫৫, রাজশাহীতে ৪০-৪৫,
সিলেটে ৪৫-৫০, খুলনায় ৪৫-৫০, বরিশালে ৪৫-৫০, ময়মনসিংহে ৪৩-৪৫, রংপুরে ৪০-৪৫ টাকায়। ঢাকার কারওয়ান বাজারে ৫০ কেজি আলুর বস্তা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকায়। প্রতি কেজির দাম ৪২ টাকা। আবার প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। এতে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৪৪ টাকা। পাইকারি বাজারের পাশেই খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। কচুক্ষেত পাইকারি বাজারে ৫৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১৫০ টাকায়। প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৩৯ টাকা।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-
মুন্সীগঞ্জ : পাইকারি আড়তে ৪০-৪২ ও হিমাগারে ৩৬-৩৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি আলু। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। জানা গেছে, জেলায় ৬৬টি হিমাগারে ৫ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলুর মজুদ শেষের দিকে। বেশির ভাগ আলু বিক্রি হয়ে গেছে।
বগুড়া : বগুড়ার খুচরা বাজারে জাতভেদে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। হাটে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩২-৪০ টাকা কেজি। আড়তে ৪২-৪৪ টাকায়। হিমাগার গেটে বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩০ টাকা কেজি।
রাজশাহী : বাজারের অনেক আড়ত ফাঁকা হয়ে আছে হিমাগার থেকে আলুর সরবরাহ না থাকায়। ফলে খুচরা বাজারে এখনো আলুর কেজি ৪০-৪৫ টাকা। জানা গেছে, রাজশাহীর উত্তরা ও আমান এগ্রো হিমাগারে প্রায় দেড় হাজার বস্তা আলু আছে মোবারক আলীর। এই ব্যবসায়ীর দাবি, আগের ছয় বছর দাম কমে যাওয়ায় তারা লোকসানে পড়েন। তখন কেউ খোঁজ নেয়নি। এবার দাম বেশি হওয়ায় সরকার দাম বেঁধে দিয়েছে। তিনি এ অবস্থায় হিমাগার থেকে আলু বের করতে চান না।
সিলেট :
গতকাল সিলেট মহানগরের পাইকারি ও খোলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কালিঘাট বাজারে পাইকারি পর্যায়ে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি। সেখান থেকে কিনে আনা আলু ৪৫-৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাট-বাজারে গতকাল খুচরা পর্যায়ে আলু বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা কেজি। কোথাও কোথাও নিম্নমানের আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। রিয়াজউদ্দিন বাজার ও পাহাড়তলী পাইকারি আড়তে ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি আলু।
বরিশাল : খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা কেজি। পাইকারি বাজারে প্রতি ৩৩-৪০ টাকায়। মহানগরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের খান সড়কের মুদি দোকানি কাজী জহুরের দোকানে ৫০ টাকা কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে। কাজী জহুর জানান, ৪৪ টাকা কেজি দরে আড়ত থেকে আলু কিনেছেন। আড়তদারি ও লেবার খরচ প্রতি কেজিতে আরও ৫০ পয়সা। ভ্যান ভাড়া প্রতি কেজিতে ১ টাকা। প্রতি বস্তায় অনেক আলু পচা বের হয়। ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি না করলে লাভ থাকে না।
রংপুর : হিমাগারে ৮৭ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। প্রতি কেজির মূল্য পড়ছে ২৮ টাকা ৭৭ পয়সা। পাইকারি আড়তগুলোয় ৫ কেজির পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকায়। প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৩০-৩৪ টাকা। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি।
ময়মনসিংহ : পাইকারি পর্যায়ে হল্যান্ড আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা কেজি। খুচরা ৪৩-৪৫ টাকায়। দেশি বড় আলু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৬ টাকা আর খুচরা ৫০-৫২ টাকায়।