কাজী আরিফ : আকবরের আমলে বলেই জানা যায়। বৎসাচার্য নামে এক ঋষিপুরুষ বাদশাহী সূত্রে পুঠিয়ার জমিদারি লাভ করেন।এই এলাকায় পুঠিমারির বিল ছিল বলে নাম পুঠিয়া হয়েছে বলে ধারনা করা হয়। এছাড়াও লোকমুখে শোনা যায়, এই জমিদারদের এক আশ্রিতা ছিল পুঠিবিবি নাম্নী এক রুপবতী আর ধার্মিক মহিলা।তিনি যা বলতেন তাই ফলে যেত।কোন এক যুদ্ধে যাবার আগে জমিদারদের বলেন জয় হবেই। জয় হলে পুঠিবিবির কি চাই । এ শুনে পুঠিবিবি নাকি বলেছিলেন ‘এমন কিছু আমায় দিও যাতে এলাকার মানুষ যুগ যুগ ধরে আমাকে স্বরণ করে’। যুদ্ধে জয়লাভের পর তখন রাজবংশের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন এলাকার তার নামানুসারেই রাখা হবে ।তাই নাম দেন ‘পুঠিয়া’।
মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের ( ১৬০৫-২৭)থেকে পুঠিয়ার জমিদার নীলাম্বর ‘রাজা’ খেতাব লাভ করে।এবং তখন থেকে পুঠিয়া রাজবাড়ি হিসাবে পরিচিতি লাভ করে ।১৭৪৪ সালে জমিদারী ভাগ হলে বড় ছেলে পান সাড়ে পাঁচ আনা। বড় ছেলের এই পাঁচ আনা নিয়ে প্রধান জমিদারি চালু থাকে বলে একে পাঁচআনি জমিদারিও বলা হয়।এই পাঁচ আনির জমিদারিত্বের শেষের দিকে বা ১৮৮০ সালে এই বংশের জমিদার পুত্র যতীন্দ্র নারায়ন হেমন্তকুমারীকে বিয়ে করে আনেন। আর তিনিই সর্বশেষে সুরম্য একটি রাজবাড়ি নির্মাণ করেন যা এখনো সগৌরবে বিদ্যমান। কিন্ত জমিদারেরা আগে এই জমিদারবাটিতে নির্মান করেন পঞ্চরত্ন জোড়বাংলা গোবিন্দ মন্দির যা অনেকটা কান্তজিউ মন্দিরের মত। এবং অসংখ্যা টেরেকোটার সমন্বয়ে এটার সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। এ মন্দিরের দ্বিতল আজো অক্ষত আছে যা কান্তজির মন্দিরে নেই।
শিব মন্দির, গোপাল মন্দিরও দারুনভাবে উল্লেখযোগ্য।। এ ছাড়াও এলাকা জুড়ে ১৩/১৪টা মন্দির স্থাপন করেন যা আজও পর্যটকদের নজর কাড়ে।
রাজশাহীর এই পুঠিয়া রাজবাড়ীকে পাঁচ আনি জমিদারবাড়ীও বলা হয়। ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্ত কুমারীদেবী নতুনকরে বর্তমান সুরম্য রাজবাড়িটি নির্মাণ করেন।ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে নির্মাণ করা হয়।
হেমন্তকুমারী ঢাকার মানিকগঞ্জের বিশিষ্ট জমিদার ভূবনমোহন রায়ের মেয়ে।পুঠিয়ার জমিদারপুত্র যতীন্দ্র নারায়নের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের তিন বছরের মাথায় স্বামী মারা গেলে এবং শ্বাশুড়ি মহারানী শরৎ সুন্দরী কাশি চলে গেলে হেমন্ত কুমারী মাত্র ১৮ বছর বয়সে পুঠিয়া জমিদারী গ্রহন করেন।
লর্ড কার্জনের আমলে এবং লর্ড আর উইনের আমলে তিনি মহারানী উপাধীতে ভূষিত হন। তার আমলে শিক্ষার্থী, বহু বিধবা, অনাথেরা তার থেকে মাসোহারা পেত। রাজশাহী শহরে প্রথম হিন্দু ছাত্রাবাস তার অবদান।এছাড়া সমাজকল্যানমূলক কার্যক্রম যেমন রাজশাহী শহরে সুপেয়পানি, কলেজ, চিকিৎসালয়, ডাকঘর, স্নানঘর, আশ্রম, মন্দির স্থাপন ইত্যাদিতে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
কিন্ত এ তো গেল হেমন্তকুমারীর কথা।
এখন বলি আমার কথা। একাই ঘুরতে গেলাম ( অক্টোবর,২০১৮ ) পুঠিয়া রাজবাড়ি। রাজশাহী থেকে নাটোরের দিকে ১৪/১৫ কিলোমিটার গেলেই
জমিদারবাড়ির বিরাট এলাকা। রাস্তার পাশেই বলা যায়।
বিকালটা দারুন কাটল। গোবিন্দ মন্দিরের টেরেকোটাগুলো ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে যা হয়ত এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর ওদিকে শিব মন্দিরের মুর্তিগুলাও ক্ষয়ে গিয়ে শুধু এখন একটা অবয়ব হয়ে আছে যা আর কিছুকাল পরেও থাকবেনা। কিন্ত এসব রক্ষার ব্যাপারে আমদের নত্ব বিধান আর ষত্ব বিধান। অনেক আইন কানুন !!
আমরা এমন ইতিহাস বিমূখ জাতি কেন ????
কেন ? কেন?? কেন???