নরসিংদীর কমিশনার মানিক হত্যাকান্ডের খুনিদের ফাঁসির দাবি

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিনিধি : ২০ বছরেও বিচার হয়নি নরসিংদীর ভেলানগরের মৃত আজিজ মিয়ার ছেলে নরসিংদী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত কমিশনার মোঃ মানিক মিয়া হত্যাকান্ডের। মামলার এজাহার ও চার্জশিটভুক্ত অন্যতম আসামী নরসিংদীর পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল ও মাদক সম্রাজ্ঞী পাপিয়ার স্বামী খুনি মফিজুর রহমান ওরফে মতি সুমনগংদের দ্রুত বিচার ও ফাঁসির দাবি জানিয়েছে নরসিংদী পৌরবাসী ও নিহত মানিক মিয়ার ছোট ভাই আমিরুল ইসলাম আমু। আজ বুধবার (২৮ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ভুক্তভোগী পরিবারবর্গের সদস্যবৃন্দ ও নরসিংদীর সাধারণ জনগণ এ দাবি জানান।
মানববন্ধনে আমিরুল ইসলাম আমু বলেন, বিগত ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি নরসিংদী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত কমিশনার মোঃ মানিক মিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পরে ২ জানুয়ারি নরসিংদী থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং- ০১। উক্ত মামলার এজাহার ও চার্জশিটভুক্ত অন্যতম ১নং আসামি নিহত সাবেক মেয়র লোকমান হোসেন, ২নং আসামি বর্তমান নরসিংদী পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল, ৩নং আসামি আলোচিত মাদক সম্রাজ্ঞী পাপিয়ার স্বামী খুনি মফিজুর রহমান ওরফে মতি সুমনগং। মামলাটি বর্তমানে ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল-১ এ বিচারাধীন রয়েছে। দুঃখজনক প্রায় ২০ বছর অতিক্রম হলেও এখন পর্যন্ত আসামিদের বিচার হয়নি। যখন কমিশনার মানিককে হত্যা করা হয় তখন কামরুল ও তার বড়ভাই নিহত মেয়র লোকমান নরসিংদী শহরের গডফাদার হিসেবে খ্যাত ছিলেন। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে শহরে সর্বত্রই আতংক বিরাজ করতো। মানিক কমিশনারকে হত্যার মাধ্যমে তারা শহরে আধিপত্য ও আতংক সৃষ্টি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, জমি দখল করে রাতারাতি শত শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমার বড় ভাই মানিক কমিশনারকে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে হত্যা করার পর আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে চার্জশীট দিয়ে আদালতে বিচারের জন্য প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে উক্ত মামলা সিআইডি আরো দুই দফা তদন্ত করে চার্জশীট দেন। বর্তমানে মামলা ১৩/৭ ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারাধীন রয়েছে। মামলার আসামি সন্ত্রাসীদের গডফাদার পৌর মেয়র খুনি কামরুজ্জামান কামরুলের বাহিনীর জন্য প্রাণের ভয়ে স্বাক্ষীরা আদালতে গিয়ে স্বাক্ষী দিতে পারছে না। স্বাক্ষ্য দেয়ার দিনক্ষণ ঠিক হলে কামরুলের সন্ত্রাসী বাহিনী আদালত চত্বর ঘিরে রেখে স্বাক্ষীদের ভয়-ভীতিসহ প্রাণনাসের হুমকি দেয়। যেনো তারা স্বাক্ষী দিতে না পারে। শুধু তাই নয়, খুনি কামরুলের সন্ত্রাসী বাহিনী স্বাক্ষীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রাণনাসের হুমকি দেয়, যার প্রেক্ষিতে বাদীসহ স্বাক্ষীরা তাদের নিজ বাড়িতে বসবাস করতে পারছে না। খুবই দুঃখ ও ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানাচ্ছি যে, আলোচিত কমিশনার মানিক হত্যাকান্ডের প্রায় ২০ বছর অতিক্রম হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামির বিচার হয়নি। বরং আসামিরা বীর দাপটে প্রকাশ্যে থেকে আরো বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী চরম ক্ষুব্দ। এছাড়া মানিক হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ায় নরসিংদীবাসীর মনে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। আমরা অবিলম্বে খুনি মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল ও মাদক সম্রাজ্ঞী পাপিয়ার স্বামী খুনি মফিজুর রহমান মতি সুমনসহ মানিক হত্যাকান্ডের সকল আসামিদের দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। আমরা সকল আসামিদের ফাঁসি চাই। যেনো এমন হত্যাকান্ড নরসিংদীবাসিকে আর দেখতে না হয়। উপরোক্ত সকল আসামীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মানববন্ধনে এলাকাবাসী জানান, নরসিংদী পৌর মেয়র কামরুলের বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগগুলো হলো- ১৯৯২ সালে আন্তঃজেলা ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার হন কামরুজ্জামান কামরুল। নরসিংদী মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলা নং ৯(৬)৯২, ধারা ৩৯৫/৩৯৬। ঐ মামলায় কামরুল, তৎকালীন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট দিল জুয়ারা বেগমের নিকট ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ১৯৯৭ সালে বাসাইল লায়ন চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণ কাজের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীকে অপহরণ করে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবি করলে তৎকালীন পুলিশ সুপার মুখলেসুর রহমান অপহৃত প্রকৌশলীকে উদ্ধার করেন এবং কামরুলকে গ্রেপ্তার করে ১৯৯৭ সালের ১৫ নভেম্বর কামরুলের বিরুদ্ধে নরসিংদী থানায় দন্ডবিধি ৪৪৮/৩৬৫/৩৮৫/৩৪ ধারায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ২৮। এছাড়াও ১৯৯৮ সালে শহরের বাসাইল এলাকায় কুলসুম নামের এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে বর্তমান মেয়র কামরুলের বিরুদ্ধে।
মানববন্ধনে এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- নিহত কমিশনার মানিক মিয়ার ভাই আমিরুল ইসলাম আমু ও মো. হিরন মিয়া, মো. শাজাহান, মো. বেদন ভূইয়া, মো. জাকারিয়া, মো. ইয়ার আলামিনসহ প্রায় ৫ শতাধিক নরসিংদীবাসী।


বিজ্ঞাপন