দেশের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে শেখ হাসিনা জানেন : নানক

রাজধানী রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। নেতাকর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেছেন, মামুন-টামুন (মাওলানা মামুনুল হক) যারা আছে, তাদের লম্ফঝম্প মাঝে মাঝে হয়। পেছন থেকে কেউ বাতাস দেয়, উসকানি দেয় আর মামুন-টামুন নুরু-ফুরুর ফুড়ফুড়ানি শুরু হয়। ওদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে।

বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আওয়ামী স্বেচ্ছসেবক লীগের গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ সব কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন

১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্মরণ করে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘সেদিন আওয়ামী লীগের মাথার ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ১৫ আগস্টের খুনি মোশতাক, জিয়াউর রহমান, ডালিম শাহরিয়ার নূররা। বিভ্রান্ত করে দেশের মানুষকে। সেই বিভ্রান্তির বেড়াজালের মধ্য দিয়ে আমাদের পথ চলতে হয়েছে। এ পথচলা অত্যন্ত কঠিন ছিল। কারণ তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ছিল, নেতৃত্বর দ্বন্দ্ব ছিল।’


বিজ্ঞাপন

জাতির পিতার কন্যা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে দলের হাল ধরার কথা তুলে ধরেন এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক নতুন যাত্রা শুরু হলে আবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বপ্ন দেখা শুরু করে বলেও অবহিত করেন তিনি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লড়াই সংগ্রামের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে নানক বলেন, ‘বারবার ক্ষমতায় পালাবদল। জিয়াউর রহমান থেকে জেনারেল এরশাদ। সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের পর ক্ষমতার পালাবদলে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসল স্বৈরাচার খালেদা জিয়া। কত মানুষ আমরা হারালাম, কত মানুষ জীবন দিলো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা স্বপ্নে প্রদত্ত কোনো মহাষৌধে আজকের এ জায়গায় আসিনি। লড়াই করতে হয়েছে, মরণপণ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দুঃসাহসী নেত্রী। তিনি বারবার মৃত্যুও মুখোমুখি হয়েছেন। সবশেষ হাওয়া ভবনের মালিক তারেক রহমান-খালেদা জিয়ারা গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল।’

‘আমরা গণতন্ত্রকে পাকাপোক্ত করেছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছি আর ওরা বলে নাকি আমরা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছি। মির্জা ফখরুলরা যে গণতন্ত্র চায়, সেই গণতন্ত্র হলো ওই হত্যাকারীদের গণতন্ত্র, হাওয়া ভবনের লুটপাটের গণতন্ত্র, যুদ্ধাপরাধীদেও অবাধ বিচরণের সুযোগ করে দেওয়ার গণতন্ত্র, ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকারীদের অবাধ বিচরণের গণতন্ত্র’- বলে দাবি করেন নানক।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে নানক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করবেন আপনি, লজ্জা-শরম কোনোকিছু যদি না থাকে তাহলে এরকম কথা আপনি বলতে পারেন না। ১২টা বছর যাবৎ দিনক্ষণ, ঈদ-কোরবানি, অমাবস্যা-পূর্ণিমা কত সময় দিলেন? আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়নি। ধ্বংস হয়ে গিয়েছেন ভুল রাজনীতির কারণে। ধ্বংস হয়েছেন আপনারা। এখনো যদি ভুল করতে থাকেন তাহলে রাজনীতির আস্তাকুঁড়ে আপনারাই নিক্ষিপ্ত হবেন।’

‘এই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার ৫২ দিনের মাথায় বিডিআর বিদ্রোহ ঘটিয়ে দিয়ে সেদিন আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগকে উৎখাত করা যায়নি। আর আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা একজন বিচক্ষণ সাহসী নেত্রী হিসেবে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে জানেন। আমরা ভুলে যাইনি, শাপলা চত্বরকে ঘিরে সেদিন খালেদা জিয়া-এরশাদ একসঙ্গে চেষ্টা করেছিলেন এ আওয়ামী লীগকে উৎখাত করার জন্য। আওয়ামী লীগ উৎখাত হয়নি। শাপলা চত্বরে আপনারা উৎখাত হয়ে গিয়েছেন।’

সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে সতর্ক থাকতে হবে। মামুন-টামুন যারা আছে, তাদের লম্ফজম্প মাঝে মাঝে হয়। পিছন থেকে কেউ বাতাস দেয় উসকানি দেয়, আর মামুন-টামুন নুরু-ফুরুর মাঝে মাঝে ফুড়ফুড়ানি শুরু হয়। সতর্ক থাকতে হবে, ওদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে। যে কোনো সময় ডাক দিলে এক ঘণ্টার নোটিশে দশ হাজার কর্মী নিয়ে ঢাকার রাস্তায় বের করতে হবে। এমন প্রস্তুতি থাকতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্ব করোনাকালে দেশকে সঠিক পথ নির্দেশনা দিয়ে স্থিতিশীল অবস্থায় রেখেছেন সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের করোনাকালে লাশ দাফন-কাফনসহ, কৃষকের ধান কেটে দেওয়া, লকডাউন পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের মাঝে পাশে দাঁড়ানোর কথাও স্মরণ করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আজকে গণতন্ত্রের মানস কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রের বিজয় দিবসের পালন করছি। হত্যাকারীদের সকল ষড়যন্ত্র আমরা এ বাংলার মাটিতে সফল হতে দিব না। কোনো অপশক্তি এই গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে পারবে না।’

বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু। সভায় বক্তব্যে রাখেন সংগঠনের সহ সভাপতি দেবাশীষ বিশ্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণযোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুল হক খান, দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ,গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক কেএম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সম্পাদক অানোয়ার পারভেজ টিংকু।