নিজস্ব প্রতিবেদক : পণ্য ও সেবা রপ্তানির লক্ষ্য অর্জনে দেশীয় পণ্যের গুণগতমান আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার তাগিদ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে অ্যাক্রেডিটেশন একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ছাড়া বর্তমান সরকার ব্যবসা ও শিল্পবান্ধব সরকার। ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে সরকার ইতোমধ্যে অনেক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। এর ফলে দেশে ক্রমেই বেসরকারিখাতের বিকাশ ঘটছে। বেসরকারিখাতের টেকসই বিকাশে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। রোববার শিল্প মন্ত্রণালয়ে ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০১৯ উদযাপন’ উপলক্ষে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি) আয়োজিত আলোচনায় সভায় তিনি এ কথা জানান। শিল্পসচিব মো. আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ওসামা তাসীর। এতে বক্তব্য রাখেন বিএবির মহাপরিচালক মো. মনোয়ারুল ইসলাম, রূপপুর পারমাণবিক মেগা প্রকল্পে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রির মান টেস্টিং ল্যাবরেটরি ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মাদ আলমগীর এবং জার্মানভিত্তিক টেক্সটাইল টেস্টিং ল্যাবরেটরি হোহেন্সটেইন ল্যাবরেটরিজ বাংলাদেশ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জনি ইয়াসমিন কান্তা। নূরুল মজিদ মাহমুদ বলেন, শিল্পায়নের মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান সরকার অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করছে। শিল্পখাতে বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য প্রকৃত অর্থেই ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ নিশ্চিত করা হবে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মতো একই সুবিধা দেওয়া হবে। তৈরি পোশাকের পাশাপাশি চামড়া, প্লাস্টিক, হালকা প্রকৌশলসহ উদীয়মান শিল্পখাতগুলোতে কর সুবিধা দিতে শিল্প মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান। শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি) ইতোমধ্যে ৭১টি দেশি-বিদেশি ল্যাবরেটরি, সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন সংস্থাকে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ প্রদানে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে ৬২টি দেশীয় এবং বহুজাতিক টেস্টিং ও ক্যালিব্রেশন ল্যাবরেটরি, ২টি মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি, ২টি ইন্সপেকশন ও ৫টি সনদ প্রদানকারী সংস্থা রয়েছে। বর্তমান সরকারের নীতি সহায়তার ফলে বিএবির পরিচিতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে এশিয়া অঞ্চলসহ আন্তর্জাতিক পরিম-লে ছড়িয়ে পড়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য অর্জনে ২০৩০ সাল নাগাদ জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এ লক্ষ্যে দেশীয় পণ্যের মানের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি ঘটাতে হবে। তারা বিএবির প্রাতিষ্ঠানিক পরিচিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশীয় মানসম্মত পণ্যের প্রচারে ইতিবাচক ভূমিকা পালনের জন্য গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মানের ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি তফাৎ করার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে তারা যেকোনো পণ্য উৎপাদনে আন্তর্জাতিকমানের বিষয়টি চিন্তায় রাখার পরামর্শ দেন। তারা নির্ধারিত কোনো সেক্টরের পরিবর্তে সম্ভাবনাময় সবখাতের জন্যই আসন্ন বাজেটে সমান সুযোগ রেখে আর্থিক নীতি গ্রহণের সুপারিশ করেন। অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী বহুজাতিক ও দেশীয় ক্যাটাগরিতে দু’টি টেস্টিং ল্যাবরেটরি এবং একটি পরিদর্শন সংস্থার প্রতিনিধির হাতে বিএবির অ্যাক্রেডিটেশন সনদ তুলে দেন। অ্যাক্রেডিটেশন সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো- জার্মানভিত্তিক টেক্সটাইল টেস্টিং ল্যাবরেটরি হোহেন্সটেইন ল্যাবরেটরিজ বাংলাদেশ লিমিটেড, দেশের রূপপুর পারমাণবিক মেগা প্রকল্পে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রির মান টেস্টিং ল্যাবরেটরি ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও দেশীয় পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টেস্টিং, ক্যালিব্রেশন অ্যান্ড ইন্সপেকশন সার্ভিসেস লিমিটেড (এনটিসিএল)। এর আগে সকালে বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শিল্পসচিবের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি মতিঝিলে অবস্থিত শিল্প ভবন চত্বর থেকে শুরু হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ে এসে সম্পন্ন হয়। শোভাযাত্রায় শিল্প মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন করপোরেশন ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে কর্মরত ব্যবস্থাপক, টেকনিশিয়ানসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা অংশ নেন।