নিজস্ব প্রতিবেদক : কালবের গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জস্থ কুচিলাবাড়ীতে রিসোর্ট এন্ড ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট সমবায় প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের বোঝা আরো ভারি করেছে। কালব প্রতিমাসে প্রায় ২ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। সদস্যদের আপত্তি, ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও কেবল নিজেদের পকেট ভারি করার জন্যে পর্যায়ক্রমে প্রায় ১০০ কোটি বিনিয়োগ করেছে। অথচ এখান থেকে আয় বলতে তেমন কিছুই নেই। ভবিৎষতেও আয়ের তেমন কোন সম্ভাবনা না থাকলেও বিনিয়োগ করা বন্ধ নেই। কালবের সচেতন ডেলিগেটদের মতে , এখান থেকে আয় না হলেও জোনাস ঢাকী সহ কর্তা ব্যক্তিদের পকেটভারি ও নিজেদের প্রমোদকুঞ্জ বানানোর ব্যবস্থা হয়েছে ঠিকই। রিসোর্ট সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে , এখানে কোন বাণিজ্যিক কার্যক্রম নেই। কেউ ভাড়াও নেয়না। তবে জোনাস ঢাকী, কালবে তার অনুগত কর্মকর্তা ও তাদের অপকর্মে সহায়তাকারী লোকজন রিসোর্ট কে ব্যক্তিগত আনন্দ ফ’র্তির নিরাপদ জায়গায় পরিনত করেছেন। সব কিছুর জন্যে এই রিসোর্ট নিরাপদ কারন এখানে পুলিশ তল্লাশী অভিযান চালায় না। যেমন টা অন্যত্র পুলিশ করে থাকে।
সঙশ্ল্ষ্টি সূত্রে জানাগেছে, রিসোর্ট নির্মানের শুরুটাই হয়েছে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে। নির্মানে পূর্বের বোর্ডের পদাংক অনুসরন করে বর্তমান বোর্ডও সমবায়ীদের অর্থলোপাটে যুক্ত হয়েছে।আগের বোর্ড মুল ভবন নির্মান করেছেন। বর্তমান বোর্ড নতুন করে রিসোর্ট নির্মান করে। রিসোর্ট ও ভবনের ইন্টেরিয়র কাজে প্রায় ১৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। দরপত্রে হয়েছে চরম অনিয়ম। কৌশলে সর্বনি¤œ দরদাতাকে কাজ না দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়ে কাজ দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় দরদাতাকে। আর এই ভাগ্যবান ঠিকাদার হচ্ছেন জাহাঙ্গির আলম। তিনি নামে-বেনামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রিসোর্ট,ইন্টেরিয়র ওর্য়াক্স ও দেয়াল নির্মানের কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন। জে এন ট্রেডার্স, রিট কন্সট্রাকশন ও ফাউন্টেক নামে আলাদা তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মুলত: তিনিই। জে এন ট্রেডার্স নিজের নামে আর রিট কন্সট্রাকশন তার আত্মীয় লিটন এর নামে ও ফাউন্টেক কামাল এর নামে দেখানো হয়েছে। তিনটি প্রতিষ্ঠানেরই দরপত্রে অংশ গ্রহনের যোগ্যতা ছিলনা। ভুয়া কাগজ পত্র দিয়ে দরপত্রে অংশগ্রহন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ঠিকাদার জাহাঙ্গির আলম কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন ঠিকই। আর এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ বাদ দিয়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে অকাতরে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কালবের চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকী, সদ্য সাবেক সেক্রেটারী এমদাদ হোসেন মালেক, ফিন্যান্স ম্যানেজার ফিরোজ আলম ও প্রজেক্ট কনসালট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার আবু তাহের।উল্লেখ্য,দুর্নীতির অভিযোগে ফিরোজ আলম-কে সাইমনের বোর্ড চাকুরী থেকে বরখাস্ত করে। ঢাকী-মালেক দায়িত্ব নেয়ার পর দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ফিরোজ আলম-কে পুনরায় নিয়োগ দিয়ে ফিন্যান্স ম্যানেজারের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।রিসোর্ট নির্মান দরপত্র কমিটির সদস্য সচিবও করা হয়েছে ফিরোজ-কে।ঢাকী-মালেকের ডান হাত তিনি। ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজারকে নিস্ক্রীয় করে রেখে ফিরোজ আলম-কে দিয়ে সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ করান চেয়ারম্যান।এই সুবাদে পুনরায় নিয়োগ পাওয়া ফিরোজ আলমও প্রচুর অর্থ বিত্তের মালিক বনে গেছেন।
ঠিকাদার জাহাঙ্গির আলম নিম্নমানের কাজ করে কমিশনের বিনিময়ে অধিকাংশ টাকা ইতিমধ্যে তুলে নিয়েছেন। বিনিময়ে কমিশন পেয়েছেন চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকী, সদ্য সাবেক সেক্রেটারী এমদাদ হোসেন মালেক ও একাউন্টস ম্যানেজার ফিরোজ আলম ও কনসালটেন্ট আবু তাহের।ভবন বুঝে নেয়ার জন্যে গঠিত কমিটি অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিল পরিশোধ না করার পরামর্শ দিলেও তা আমলে নেয়া হয়নি।এই প্রকল্পে ভুমি ক্রয় ও ভবন নির্মানে চরম দুর্নীতির অভিযোগ ছিল একদা মালেক গংদের।এখন তারাই কমিশন ভাগাভাগির জন্যে রিসোর্ট স্থাপনের জন্যে আরো ১৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। কুচিলাবাড়ী ভবন নির্মানে আরো বিনিয়োগের বিষয়ে বোর্ড সভায় সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও কয়েক জন বোর্ড সদস্য বিরোধিতা করল্ওে ঢাকী-মালেক তার তোয়াক্কা করেননি।বরং দায়িত্ব গ্রহনের পরই বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া ঢাকী-মালেক কুচিলাবাড়ীতে নতুন রিসোর্ট প্রকল্প শুরু করে।এবিষয়ে ইন্টারনাল অডিট কমিটির রিপোর্টেও আপত্তি করা হয়। এমনকি নতুন-পুরাতন কোন বিনিয়োগের বিষয়ে সমবায় অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত কোন অনুমোদন দেয়নি। নিশ্চিত লোকসানী প্রকল্প জানা সত্ত্বেও কেবল টাকা কামানোর জন্যে রিসোর্ট করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। কুচিলাবাড়ী রিসোর্ট নির্মানে প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুন ব্যয় ও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বর্তমান বোর্ড ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করে যাচ্ছে।এমতাবস্থায় ঠিকাদারের বাকি বিল ও সিকিউরিটি মানি ফেরত না দেয়ার দাবি জানিয়েছেন কালবের সচেতন ডেলিগেটগণ।
ইন্টারনাল অডিট কমিটির রিপোর্টে অনুযায়ী, কাল্ব রিসোর্ট এ- ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট নির্মাণে এজিএম-এ অনুমোদিত বাজেট ছিল ১৪কোটি টাকা। অডিটরিয়াম ও মূল ভবনের ইন্টেরিয়র কাজ সম্পাদনের জন্য ৩১-১০-২০১৮ তারিখে দৈনিক পত্রিকায় ঠিকাদার তালিকাভূক্তির বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। ৭টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভূক্তির আবেদন করে। ৪টি প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভূক্ত করা হয়।
২৮-১১-২০১৮ থেকে ০৪-১২-২০১৮ পর্যন্ত সময দিয়ে ২৭-১১-২০১৮ তারিখে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৪টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে মূল ভবনের ইন্টেরিয়র কাজ সম্পাদনের জন্য ২৩-১২-২০১৮ তারিখে ‘ফাউন্টেক’-কে ৫,২৬,৭৮,১০০/- টাকা এবং অডিটরিয়াম ইন্টেরিওর কাজের জন্য ১৯-১২-২০১৮ তারিখে ‘রিট কনস্ট্রাকশন’-কে ৩,৯৪,৭২,২২০/- টাকার কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।
সিভিল (পুল,লেক,রাস্তা ও অন্যান্য) কাজের জন্য পূর্বে তালিকাভূক্তি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে ২৮-১১-২০১৮ থেকে ০৪-১২-২০১৮ পর্যন্ত সময দিয়ে ২৭-১১-২০১৮ তারিখে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৪টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। সর্বনি¤œ দরদাতা হিসাবে ১৯-১২-২০১৮ তারিখে মেসার্স জে এন ট্রেডার্স-কে ২,২৮,৪৭,১৪০/- টাকার কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। মুলত: উক্ত ৩টি প্রতিষ্ঠানের প্রতক্ষ-পরোক্ষভাবে মালিক জাহাঙ্গির আলম। আসলে এই প্রতিষ্ঠানসমুহ সর্বনি¤œ দরদাতা ছিলনা। সর্বনি¤œ দরদাতাকে কৌশলে বাদ দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি ভুয়া কাগজ পত্র দিয়ে দরপত্রে অংশ গ্রহন করে। বোর্ড সভায় পরিচালক অমুল্য চন্দ্র দাস প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে আপত্তি তুল্লেও চেয়ারম্যান-সেক্রেটারী তা গ্রাহ্য করেনি।
উক্ত দরপত্র খোলা কমিটির সদস্যগণ ছিলেন – মি. ফ্রান্সিস পি. রোজারিও-আহ্বায়ক, এ্যাড. উত্তম হালদার, সদস্য, মি. ফিরোজ আলম- সদস্য সচিব। ০৮-১২-২০১৮ তারিখ দরপত্র খোলা হয় এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মূল্যায়ন কমিটিতে প্রেরণের সুপারিশ করা হয়। মূল্যায়ন কমিটির সদস্যগণ হলেন- মি. হরিপদ চন্দ্র নাগ- আহ্বায়ক, মি. ফ্রান্সিস পি, রোজারিও, সদস্য, মো. সুলতান উদ্দিন, সদস্য, ইঞ্জি. আবু তাহের, সদস্য, মি. ফিরোজ আলম-সদস্য সচিব। কমিটি ১০-১২-২০১৮ তারিখ মূল্যায়ন করে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদানের সুপারিশ প্রদান করেন।
কিন্ত ১৩তম বোর্ড সভায় বোর্ড সদস্য মি. অমূল্য চন্দ্র দাস উপ-কমিটির কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং ‘ফাউন্টেক’-এর কাগজপত্র ভুয়া এবং প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই বলে অভিযোগ করেন। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান হিসেবে ‘ফাউন্টেক’-এর কাগজপত্র যাচাই করার জন্য ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেত্বত্বে ডিরেক্টর আব্দুর রাজ্জাক ও ট্রেজারার এম. জয়নাল আবেদীনের সমন্বয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি যাচাই কমিটি গঠন করেন। উল্লেখ্য যে, তিনজন ডিরেক্টর মি. আলফ্রেড রায়, মি. কুতুব উদ্দীন ও মিসেস্ শারমিন জাহান মঞ্জু উক্ত প্রকল্পে কাজের স্বচ্ছতার প্রশ্ন তুলেন এবং তারা উক্ত নির্মাণ কাজের কোন দায়ভার নিবেন না বলে উক্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ করার প্রস্তাব করেন।
অথচ উক্ত যাচাই কমিটি প্রতিবেদন জমা হওয়ার পূর্বেই ‘ফাউন্টেক’ সহ সকল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। অডিটরিয়াম ইন্টেরিয়র কাজের জন্য ১৯-১২-২০১৮ তারিখে ‘রিট কনস্ট্রাকশন’-কে ৩,৯৪,৭২,২২০/- টাকা, সিভিল (পুল, লেক, রাস্তা ও অন্যান্য) কাজের জন্য ১৯-১২-২০১৮ তারিখে মেসার্স জে এন ট্রেডার্স-কে ২,২৮,৪৭,১৪০/- টাকা এবং মূল ভবনের ইন্টেরিয়র কাজ সম্পাদনের জন্য ২৩-১২-২০১৮ তারিখে ‘ফাউন্টেক’-কে ৫,২৬,৭৮,১০০/- টাকার কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয় নিয়ে ০৪-০২-২০১৯ খ্রীঃ তারিখে ১৪তম বোর্ড সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গঠিত যাচাই কমিটি অধিকতর স্বচ্ছতার জন্য উক্ত প্রকল্পের সকল কাজের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া পুনরায় যাচাই করার সুপারিশ করা সত্বেও যাচাই প্রতিবেদন জমা হওয়ার পূর্বেই সকল কাজের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে । বিস্তারিত আলোচনায় উক্ত কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় কয়েকজন বোর্ড সদস্য উক্ত কাজ বন্ধ রাখার প্রস্তাব করেন এবং উক্ত কাজের কোন প্রকার দায়-ভার বহন করবেন না বলে জানিয়েছিলেন।অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি ০৪-০৪-২০১৯ খ্রীঃ তারিখে জেনারেল ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) সহ কাজের অগ্রগতি জানার জন্য সরেজমিনে উক্ত প্রকল্প পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনে দেখা যায়- ইন্টেরিয়র কাজের ৫৫%, সিভিল (পুল, লেক, রাস্তা ও অন্যান্য) কাজের ২০% ও মূল ভবনের ইন্টেরিয়র কাজের ৬০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
পরিদর্শকদলের রিপোর্টে বলা হয়-মূল ভবনের ইন্টেরিয়র কাজের মধ্যে খাট, খাটের চালি, টেবিল, চেয়ার, কেবিনেট, টিভি ফ্রেম, মিরর ইত্যাদি কাজের ৫৫% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাঠের কাজের মধ্যে বিশেষ করে খাটে মেহগনি কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু কাঁচা কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে এবং কাঠের গুনগত মান খুবই নিম্নমানের। কিছু ক্ষেত্রে কাঠের সাইজ খুবই পাতলা দেয়া হয়েছে। খাটের চালির গুনগত মানও নিম্নমানের। নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার করায় টেকসই ও গুনগত মান কম হবে। প্রতিষ্ঠান যথেষ্ঠ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এ বিষয়ে ইন্টারনাল অডিট রিপোর্টে ব্যবস্থাপনা কমিটিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্ত ঢাকী-মালেক কারো মতামতের তোয়াক্কা না করে নিজেদের খেয়াল খুশিমত কাজ করে গেছেন এবং এখনো মালেক দুর্নীতির ভারে কালব থেকে বিতাড়িত হলেও জোনাস ঢাকী তার অনুগত বোর্ড সদস্য ও কর্মকর্তাদের নিয়ে অনিয়ম দুর্নীতি করে যাচ্ছেন।