হাসিনা আফরোজ হাসি : ছোটবেলায় ঈদ আনন্দ ছিল অন্যরকম, পুরা রোজার মাস জুড়ে ঈদের একটা আমেজ বহন করতো, পুরো মাস জুড়ে ঈদের জামা কাপড় নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলতো, খুব সুন্দর জামা হতে হবে, আলাদা ডিজাই সবার চেয়ে সুন্দর এমন জামা জুতাই চাই, আর জামা জুতা যাতে ঈদের আগে কেউ দেখতে না পারে সেইচেষ্টা ঈদের আগের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতো। তবে ঈদের আগের দিন
দুপুর থেকেই চিন্তা হতো,আজ কি চাঁদ উঠবে ঠিক সন্ধ্যের সময় ঈদের চাঁদ দেখতে পেলে সেকি আনন্দ ছিল…! নতুন চাঁদ ঈদের চাঁদকে দেখা মাত্রই সালাম দিতাম। সেই যে আমার নানা রঙের ঈদ আনন্দের দিনগুলি আজো খুব মনেপড়ে…
এবার বড়বেলায় এক চাঁদরাতের কথা বলি, ২০১৮ তে নিকট আত্মীয়ের সাথে ঈদ করতে New York e গিয়েছিলাম, অনেক দিন পর নিকট আত্মীয়দের সাথে ঈদ করতে গিয়েছি বলে অন্যরকম আনন্দ ছিল, সন্ধ্যারপর ননদ দেবর সবাই নানারকম ইফতার আইটেম নিয়ে হাজির হয়ে যেতো এক সাথে ইফতার করার জন্য, খুব আনন্দ আর হৈচৈ করে ইফতার হতো, এভাবে যখন চাঁদরাত এলো, সবাই বললো…
চলো ঘুরে আসি Jackson Heights থেকে, Jackson Heights হলো বাঙ্গালী ইন্ডিয়ান পাকিস্তানীদের প্রাণকেন্দ্র, যেখানে সবাই ঈদ শপিং করে এবং যেখানে সবকিছু পাওয়া যায় আর চাঁদরাতে ওখানে খুব আনন্দ হয়, অনেক রাত পর্যন্ত কেনাকাটা চলে, নানা রকম খাবারের দোকান খোলা থাকে, গান ও মিউজিকের সাথে কিছু ছেলেমেয়েদের street dance চলে… তাছাড়া সে রাতে মেলার মতো নানা রকম জিনিসপত্র নিয়ে বসে বিক্রি করে অনেকেই। যা অনেকটা ঈদের ইমেজ তৈরি করে, মেহেদি লাগানো চলতে থাকে অনেক রাত পর্যন্ত প্রবাস জীবনে একটু দেশের আনন্দ পেতে চাঁদরাতের আনন্দ খুঁজতে সৌখিন মানুষেরা ছুঁটে আসে এখানে, আমরাও গেলাম, ওখানে যেয়ে সবাই নানা রকম খাওয়া দাওয়া সেরে street e হেঁটে হেঁটে সবকিছু দেখছিলাম, দেখলাম কিছু বাঙ্গালী পাকিস্তানী মেয়ে কোণে কোণে বসে মেহেদী লাগাচ্ছে আর হাঁকাচ্ছে 5 dollars তারা যে গরীব মানুষ তা কিন্তু নয়, অনেকটা শখের বসে কিছু income করবে সে জন্য বসেছে …
তো আমি ভাবলাম মেহেদী লাগাই তাই একটা বাঙ্গালী কিশোরী মেয়ের কাছে গেলাম মেহেদী লাগাতে, বললাম ছোট্ট কোন ডিজাইন করে দাও তাও একহাতে…হাত ভরে মেহেদী লাগানো আমি খুব একটা পছন্দ করি না, তবু ঈদে একটু নকশা করে মেহেদী লাগাতে পছন্দ করি, festive mood আসে, সে আমাকে একহাতে একটু ডিজাইন করে দিলো, আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে $20 একটা নোট বের করে দিলাম…ভাবলাম সে হয়তো 15 বা 10 dollars ফেরত দেবে but সে কিছুই করলো না রেখে দিলো, আমি লজ্জা পাচ্ছি বাকী money টা ফেরত চাইতে, আবার সামান্য একটু মেহেদী লাগিয়ে 20 dollars নিয়ে যাবে সেটাও কেমন যেন লাগলো, আমি আরো $5 tips ভেবে তাকে বললাম বেটা 10 dollars back করো, সে বললো, আন্টি আপনার ডিজাইনটা সুন্দর হইছে তাই 20 রাখলাম, আমি তার কথায় অবাক হলাম, যে দেশে ভাল মানের কাজ করেও 20 dollars per hour পায় না, সেখানে কি বলছে এই মেয়ে…! আমি কিছুটা অবাক হলাম, তাছাড়া অন্যদেশী মেয়েগুলোকে দেখছি হাত ভর্তি নানা ডিজাইনে মেহেদি লাগিয়েও 5 dollars করেই নিচ্ছিল, পরে আমি আর কিছু বললাম না চলে এলাম, সেটা দেখে আমার ননদ আর ডাক্তার জা যারা ওখানে বসবাস করে, তারাও আমায় বললো যে, এই সামান্য মেন্দি লাগিয়ে ভাবী তুমি 20 dollars দিয়ে দিলে?
Hmm bhabi have mucho(অনেক)money আমি শুধু হেসে বলেছি, বাচ্চা মেয়ে, এখানে 20 dollars বড় কথা নয়, বিষয়টা হচ্ছে মেয়েটার মানসিকতা, সে যে $5 কাজ করে $20 নিচ্ছে এবং টাকার প্রতি তার যে লোভ সেটা। এই বয়সেই তার এই মানসিকতা যে গড়ে উঠেছে সেটা আমাকে কষ্ট দিয়েছে, তাই আজকে যে শিশু কাল সে কিশোর, পরিবার হচ্ছে তার প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র, তারপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তো আছেই,
পক্ষান্তরে ঐদেশি ছেলেমেয়েরা কিন্তু বোঝে কাজের বিনিময়ে money কোন কাজকেই তারা ছোট করে দেখে না এবং কোন চিটিং বা ফন্দিফিকির এরা করে না, Moral of the story is that অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা পরিবার থেকে যে শিক্ষা গ্রহন করবে…সেটার প্রভাব পড়েবে তার ব্যক্তি জীবনে…তাই, ঘর থেকেই শুরু হোক তার নানা রকম শিক্ষা, parenting is a very important thing for a child. It’s not a joke