সদরঘাট
বিশেষ প্রতিবেদক : ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটে নৌকা পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ হলেও উপেক্ষা করছে স্থানীয়রা। প্রশাসনেরও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ লঞ্চের ধাক্কায় প্রায়ই ঘটছে নৌকাডুবি, প্রাণ হারাচ্ছে নদী পারাপারের চেষ্টায় থাকা বাসিন্দারা।
সদরঘাট দিয়ে ঢাকা ছাড়েন এবং ঢাকায় আসেন দক্ষিণবঙ্গের মানুষদের একটি বড় অংশ। আশপাশে কেবল নৌকা চলাচলের জন্য রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘাট। এসব ঘাট থেকে নৌকার মাধ্যমে নদী পারাপার হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ। এর মধ্যে নৌ বন্দরের বুক চিড়ে যেসব নৌকা অপর পারে যায়, ঝুঁকিতে বেশি তারাই।
বৃহস্পতিবারও নদী পারাপারের সময় লঞ্চের ঢেউয়ের ধাক্কায় ডুবে যায় ছোট আকারের একটি নৌকা। প্রাণ হারায় দুটি শিশু। স্থানীয়রা বলছেন, এমন দুর্ঘটনা বিরল নয়, ঘটে হরহামেশাই।
সদরঘাট বাবুবাজার মিটফোর্ড ঘাট গড়ে উঠেছিল অনেক আগেই। এ ঘাটে বর্তমানে যারা নৌকা চালান তাদের কেউই এ ঘাটের গোড়াপত্তন দেখেননি। তবে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বাবু বাজার থেকে জিনজিরা পর্যন্ত গড়ে তোলা হয়েছে একটি সেতু, নাম বাবুবাজার ব্রিজ। তবু বন্ধ হয়নি নৌকা পারাপার।
স্থানীয়রা জানান, সেতু দিয়ে নদী পার হতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় লাগে। তাই সেতু ব্যবহার না করে তারা নৌকা দিয়েই পার হন।
মো. সুমন নামে এক বাসিন্দা বলেন, ব্রিজ দিয়া সময় লাগে। নৌকায় তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়।
আবার সড়ক পথের তুলনায় নদী পথে যাতায়াত খরচ কম উল্লেখ করে বলেন, বাবু বাজার থেকে কেরানীগঞ্জ বোটে গেলে ভাড়া ১০ টাকা। ব্রিজ পার হইয়া গাড়িতে গেলে ভাড়া লাগে ৫০ টাকা।
রায়হান হোসেন নামে এক যুবক বলেন, ‘ব্রিজে ওঠা-নামা ঝামেলা। টাইম লাগে। নৌকায় ঝামেলা নাই। পাঁচ টাকা দিয়া পাড় হই।
স্থানীয়দের এমন গোড়ামির কারণে সেতু থাকার পড়েও শত শত নৌকা প্রতিদিন কাজ করছে এ অঞ্চলের মানুষদের পারপার করতে।
জিনজিরা, কেরানীগঞ্জ থেকে নৌকায় করেই রোগীও আনা-নেয়া হয় মিটফোর্ড হাসপাতালে।
বুড়িগঙ্গা নদীর কুড়া ঘাট, নলগলা মসজিদ ঘাট, রাজার ঘাট, ইমানঞ্জ ঘাট, পান ঘাট, ছোট কাটারা ঘাট, চাম্পা তলি ঘাট, মাছ ঘাট, সোয়ারি ঘাট, বালু ঘাটসহ প্রায় সকল ঘাটেই অবাধে নৌকা চলাচল দেখা গেছে।
নদীতে নৌকা চালানো মাঝিদের মতে, সদরঘাটের মূল অংশের বাহিরে নৌকা চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
জাকির হোসেন নামের একজন মাঝি জানান, তিনি সাত বছর ধরে এখানে নৌকা চালান। কখনো দুর্ঘটনার শিকার হননি।
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের এই বাসিন্দা বলেন, ‘সিপের লগে, লঞ্চের লগে ধাক্কা লাগব ক্যান, আমরা দেইখা চালাই না?
নদীর এ অংশকে নিরাপদ দাবি করে জাকির বলেন, একসিডিন (দুর্ঘটনা) হয় সদরঘাটের দিকে। ওইহানে কামাই বেশি, রিস্কও বেশি। আমরা দিনে কামাই তিনশো টাকা, ওরা কামায় হাজার-বারোশো।
নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়েও তেমন ভ্রুক্ষেপ নেই স্থানীয়দের। স্থানীয় বাসিন্দা শিরিন আক্তার বলেন, কই একসিডিন? আমি তো প্রতিদিন যাই আসি। কিছুই তো হয় না।
কামরাঙ্গীরচর কুড়াঘাট এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিক হোসেন জানান, নদীতে নৌকা পারাপার ঝুঁকিমুক্ত এ তথ্য ভুল। প্রতিদিনই এখানে ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। তিনি বলেন, নৌকায় ইচ্ছা মতো যাত্রী উঠায়, ডুইবা যায়। সিপে ধাক্কা দেয়, টলারের ঢেউ লাইগা নৌকা থিকা পইড়া যায়। এগুলা তো প্রতিদিনই দেখি। কে কয় একসিডেন্ট নাই?
অর্থ বাঁচাতে এ অঞ্চলের মানুষ নিয়মিত জিবনের ঝুঁকি নিচ্ছে বলে মনে করেন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী। বলেন, এইদিকে অনেক অল্প আয়ের মানুষ আছে। গাড়িতে গেলে খরচ বেশি, তাই তারা নৌকায়, ট্রলারে যায়।
তবে বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাট অংশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌ পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারি আছে বলে জানান, সদরঘাট নৌ পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম। তিনি বলেন, নদীতে নিরাপত্তা দিতে আমরা কাজ করছি। নদীর ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নৌকা চলাচল নিরাপদ করতেও আমরা চেষ্টা করছি।
ওয়াইজঘাটের নৌকার ঘাটটি অনিরাপদ। এর আগে আমরা সেটি বন্ধের চেষ্টা করেছিলাম। তখন গার্মেন্টসের লোকজন দিয়ে এসে তারা আন্দোলন শুরু করেছিল। এই ঘাটটা বন্ধ করলে সদরঘাট এলাকায় দুর্ঘটনা কমে যাবে’- বলেন নৌ পুলিশের এই কর্মকর্তা