অসহায় সমর্ত ভানু ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে

রাজধানী

নিজাম উদ্দিন : রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটি কাঁচা বাজারের দোকানী সমর্ত ভানু দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ব্যবসা করে আসছিলেন, কিন্ত অসাধুদের অস‌‌দ আচরনে আটকে হারিয়েছেন মোহাম্মাদীয়া হাউজিং সোসাইটির কাঁচা বাজারের দোকান ঘরটি। বৃদ্ধার দোকান ঘরটি ফিরে পেতে ঘুরছেন স্থানীয়দের দ্বারে দ্বারে।
সত্তর বছর বয়সী সমর্ত ভানু কান্নাজড়িত কন্ঠে এই প্রতিবেদককে বলেন বাজার সৃষ্টিকাল থেকে আমি দোকানটিতে নিজেই ব্যবসা চালিয়ে আসছিলাম দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর। তারপরে বয়েসের ভারে আর ব্যবসা চালাতে না পেরে আমার ছোট ছেলে জামালকে দিয়ে দোকানটি পরিচালনা করি (নম্মরবিহীন গ- ব্লকের এই দোকানটি)। বৃদ্ধ মহিলা আরো বলেন বিভিন্ন সময় পারিবারিক প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন লোকের কাছে চুক্তিভিত্তিক ভাবে ভাড়া দিয়ে অদ্যাবধি ভোগদখল করে আসছিলাম।
উল্লেখ্য ১৯৯৭ সালে বাজারটি সিটিকর্পোরেশনের আওতাভুক্ত হয় তখন ব্যবসায়ী সমিতির নিয়মানুযায়ী তাদের সম্পুর্ন দায়দেনা যেমনঃ বিদ্যুৎ বিল, সমিতির চাঁদা, যাবতীয় দায় পরিশোধ করে সমর্ত ভানু। কিন্তু সমিতির কিছু অসাধু লোকের কারণে দোকান ঘরটি বরাদ্দ হয়নি আজও। সেইসময় দোকান ঘরটি বরাদ্দ পাওয়ার জন্য সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে দৌড়ঝাঁপ করলে ২০০৬ সালে সমিতি কর্তৃক মহিলাকে একটি দোকানের মালিকানা হিসেবে স্বত্বাধিকারী পত্র প্রদান করেন। যার বলে দোকানের মালিকানা দাবী করে দোকান ঘরটি ভাড়া দিয়ে ভোগদখল করে আসছিলেন বৃদ্ধ মহিলা।
এবিষয় সমর্ত ভানুর দোকানের মালিকানা সম্পর্কিত কোনো কাগজপত্র আছে কি না জানতে চাইলে তিনি তার যথাযথ কাগজপত্রাদি দেখান। তাতে দেখা যায় শুধু মোহাম্মদিয়া কাঁচাবাজার মালিক সমিতির সদস্য পদে তিনি আছেন। নেই কোনো বরাদ্দকৃত দলিল।
এখন পর্যন্ত সমিতির সব পাওনা দাওনা সে পরিশোধ করার পরেও কোনো এক কোনো এক কারণে তাকে দোকানটির বরাদ্দ না দিয়ে পরবর্তীতে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয় একের পর এক।
মহিলার নামে দোকান ঘরটি বরাদ্দ না থাকায় চলতি বছর ৪/৫ মাস পূর্বে একটি মহল দোকান ঘরটি বিনা নোটিসে চলে যেতে বিভিন্ন ভাবে প্রয়োগ কর আসছে। গত ২মাস পূর্বে মহিলা অভিযোগ করে বলেন আমার ভাড়াটিয়াকে জোড়পূর্বক নামিয়ে দিয়ে তারা দোকানটি দখলে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে মহিলা ঘরটি ফিরে পেতে থানায় অভিযোগসহ বিভিন্ন মহলে ধরনা দিচ্ছেন কিন্তু কেউই সুরাহা করে নাই বলে জানান।
এবিষয় বাজারের কার্যালয়ে গেলে ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তা লিটন মিয়া বলেন বিষয়টি আমারা অবগত আছি। সমর্ত ভানুর দোকানের মালিকানা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান সমর্ত ভানুর কাছে সিটিকর্পোরেশন কর্তৃক বরাদ্দ কৃত সংক্রান্ত কোনো মালিকানা কোনো কাগজপত্র নাই। এ ব্যাপারে মোহাম্মদপুর থানায় একটি অভিযোগ করেছেন সতর্ক ভানু। এবিষয় ৩৩ নং ওয়ার্ড কমিশনার আসিফ আহম্মেদ সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ঐ বৃদ্ধ মহিলার বিষয় আমি জেনেছি, আমার কথা হচ্ছে একজন মহিলা এতবছর একটি বাজারে দোকান ঘর করে আসলেও এখনো তার দোকানটি বরাদ্দ দেওয়া হলো না সত্যিই এটা একটি দুঃখজনক ঘটনা। তবে আমি মোহাম্মদীয়া হাউজিং এর কাঁচাবাজারটি একটি সিটি কর্পোরেশনের বহুতল ভবন করার চিন্তা আছে। আর এখানে একাধিক দোকান সমিতির ভুক্তভোগী আছে শুধু তাদের জন্যই মুলত এই মার্কেটটি একটি আধুনিক মার্কেট ও কাঁচাবাজার করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কমিশনার আরো বলেন দোকান না পাওয়ায় শুধু একজন মহিলাই আমার কাছে অভিযোগ দেয়নি এরকম একাধিক ব্যক্তিরা আমাকে অভিযোগ করেছেন। কিছু ঝামেলাও আছে একেবারে ঝামেলা নেই তা বলা যাবেনা। মহিলার বিষয় কমিশনার আসিফ আহমেদ আন্তরিক ভাবে বলেছেন নতুন দোকান হলে তিনি একটি দোকান পাবেন। কমিশনার দুঃখ করে এ ও বলেন এই ওয়ার্ডে গত পাঁচবছর একজন জনপ্রতিনিধি ছিলো কিন্তু এতো সময় পাওয়ার পরেও তারা এই দোকান গুলো (সরকারি) সিটি করপোরেশনের আওতায় আনতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ জনগণের পাশে আছি সবসময়। সাধারণ জনগণের জন্য যেকোনো সমস্যায় আমার অফিস সবার জন্য উম্মুক্ত।
এবিষয় স্থানীয়রা মনে করেন যেহেতু সমর্ত ভানু একজন অসহায় নারী তাই এতোদিনের দোকান ঘরটি তিনি যেন ফিরে পায় এমনটাই অনেকে আশা ব্যক্ত করেন।


বিজ্ঞাপন