নিজস্ব প্রতিনিধি : এ বছরের ৭ সেপ্টেম্বর হতে ঘাটারচর-কাঁচপুর রুটে পরীক্ষামূলকভাবে বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের আওতায় বাস চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
আজ ২৪ জুন (বৃহস্পতিবার) দুপুরে নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং যানজট নিরসনে গঠিত ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ কমিটির ১৭তম সভা শেষে সাংবাদিকদেরকে এ তথ্য জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র (ঢাদসিক) ও বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “ঢাকা মহানগরীতে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা আনয়নের লক্ষ্যে আমরা আজকে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ১৭তম সভা সম্পন্ন করলাম। গত সভায় একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত ছিল – পহেলা এপ্রিলের মধ্যে একটি রোডে পরীক্ষামুলকভাবে বাস রুট ফ্যান্সাইজি কার্যক্রম আরম্ভ করব। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে সেটার ব্যাঘাত ঘটে। এ সময়ে গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা বন্ধ থাকার কারণে আমরা সেই কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। সেটাকে কার্যকর করতে আমরা আজকের এই সভা ডেকেছি। সে প্রেক্ষিতে আমরা কয়েকটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। প্রথমত হলো, আমাদের সেই সময়টা পুনঃনির্ধারণ করা। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, সকলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ঘাটারচর থেকে মতিঝিল হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত আমরা বাস রুট রেশনালাইজেশনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি।”
ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “এই কার্যক্রম কার্যকর করতে আমাদের ঘাটার চরে একটি বাস ডিপোর জন্য জায়গা প্রয়োজন। আমরা দুই মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকলে মিলে সেখানে পরিদর্শন করেছি। সেখানে ১২ বিঘার মতো জমি আমরা সনাক্ত করতে পেরেছি। এখন সেটার কার্যক্রম আমরা আরম্ভ করব, সেখানে একটি বাস ডিপো করা হবে।”
এ সময় যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধার জন্য ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনে বাস-বে ও যাত্রী ছাউনী নির্মাণের জন্য দরপত্র সম্পন্ন করেছে এবং ইতোমধ্যে সেটার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে বলে জানান ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস।
ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “এই রুটে মালিকপক্ষের যারা বাস পরিচালনা করবে, তাদের সাথে যে চুক্তি হবে তার খসড়া প্রণয়ন হয়ে গেছে। সেই চুক্তির সংক্রান্ত একটি নীতিমালাও প্রণয়ন হয়ে গেছে। সেই চুক্তিটি আগামী ৮ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত করার জন্য আমরা সিদ্ধান্ত দিয়েছি। মালিকপক্ষ, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এবং বিশেষজ্ঞমহল চুক্তিটা চূড়ান্ত করবে এবং আমরা আশা করছি যে, আগামী ২৯ জুলাই সেই চুক্তিটা সম্পাদন হবে।”
সিটি বাস সিটিতে চলাচল করবে আর আন্তঃজেলা বাস ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে না জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আন্তঃজেলা বাসগুলো ঢাকার ভেতর দিয়ে চলাচল করুক। সেজন্য ঢাকার বাহিরে চারটি জায়গায় আন্ত:জেলা বাসগুলোর জন্য টার্মিনাল ও ডিপো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেগুলোর কার্যক্রম যাতে অচিরেই সম্পন্ন করা যায়, সেজন্য আমাদের বিশেষজ্ঞ প্যানেল প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এবং তারা নকশা প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছে। কাঁচপুর, হেমায়েতপুর, বাটুলিয়া এবং কেরানীগঞ্জের বাঘাইরে আমরা সে টার্মিনাল ও ডিপো নির্মাণ করব।”
পরবর্তী সভা ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “সে সভা করে আমাদের পরবর্তী কার্যক্রমগুলো আমরা নিশ্চিত করবো। যাতে করে আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে – ৭ সেপ্টেম্বর এটা কার্যকর করতে পারি।”
এ সময় বাসগুলোকে নতুন করে মেরামত করতে আমরা যে মানদণ্ড সৃষ্টি করেছি, সে অনুযায়ী অর্থ সংস্থানের জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ নির্ধারণ করেছে বলে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস জানান।
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, “রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে এক হাজার ৬৪৬টি বাস কোনও প্রকার রুট পারমিট ছাড়া চলাচল করছে। এসব বাসের জন্য নগরীতে সীমাহীন যানজট লেগে থাকে। এই বাসগুলা চলতে দেওয়া হবে না। আগামী ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পযর্ন্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও বিআরটিএসহ অভিযান পরিচালনা করবে।”
সভায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুহিবুর রহমান, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমানসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউর রহমান প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।