নিজস্ব প্রতিবেদক : বরগুনায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত মোট ১৩ জনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। আসামিদের কেউ যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে, সেজন্য দেশের সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌ-বন্দরে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। গতকাল শুক্রবার ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে এক অনুষ্ঠানের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল সাংবাদিকদের বলেন, এ হতাকা-ে জড়িত আছে এরকম ১৩ জনকে আমরা শনাক্ত করেছি। এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ কাউক ছাড় দেবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যাকা-ের ঘটনায় আপনারা এর প্রমাণ পেয়েছেন। রিফাত হত্যার আসামিরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সেজন্য আগের দিনই সীমান্তে সতর্কতা জারির নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা গতকাল শুক্রবার সেই নির্দেশনা জারির কথা জানান। তিনি বলেন, ঘটনাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। ইতোমধ্যে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জড়িত অন্যান্যের গ্রেফতারের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা শহরের কলেজ রোড এলাকায় বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামের দুলাল শরীফের ছেলে রিফাতকে (২৩) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে একদল যুবক। এ সময় তার স্ত্রী বাধা দিয়েও তাদের ঠেকাতে পারেননি। রামদা হাতে রিফাতের ওপর হামলার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বুধবার বলেন, পুলিশ বসে নেই, হত্যাকা-ে জড়িত সবাইকে ধরা হবে। আর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের যে কোনো মূল্যে গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রিফাতের বাবা আবদুল আলিম দুলাল শরীফ বরগুনা সদর থানায় দায়ের করা মামলায় যে ১২ জনকে আসামি করেছেন, তাদের মধ্যে বুধবার পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করার কথা জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। কিন্তু মূল আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে বলা হয়, যেহেতু প্রকাশ্য দিবালোকে ওই হত্যাকা- ঘটেছে, সেহেতু পুলিশের আরও তৎপর হওয়া উচিত ছিল। বরগুনা যেহেতু সুন্দরবন ও সীমান্তের কাছে, সেহেতু আসামিরা যাতে কোনোভাবে সীমান্ত পার না হতে পারে- সেই ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। এরপর গতকাল শুক্রবার সকালে পুলিশ সদরদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আসামিরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সকল বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌ-বন্দরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এআইজি সোহেল রানা বলেন, বরগুনা জেলা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই, সিআইডি, র্যাব এবং ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে কাজ করছে। আশা করছি, সকল আসামিকে শিগগিরিই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। আসামিদের বিষয়ে কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা পুলিশকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে।