বিশেষ প্রতিবেদক : সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলা রেখে শুরু হয়েছে তিনদিনের সীমিত বিধিনিষেধ (লকডাউন)। রাজধানীতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী মানুষ। পায়ে হেঁটে চলছেন অনেকেই। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে তাদের ভিড় দেখা গেছে। কিন্তু কোথাও বাসের দেখা নেই। রাস্তায় রিকশার সংখ্যা কম থাকায় চালকরা ভাড়াও বেশি হাঁকাচ্ছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘ যানজটের দৃশ্যও দেখা গেছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী গণপরিবহনের উপস্থিতি দেখা না গেলেও সড়কগুলো ছিল প্রাইভেট কার ও রিকশার দখলে।
লকডাউনের সময় সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোকে তাদের কর্মী আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হলেও বহু প্রতিষ্ঠানই তা বাস্তবায়ন করেনি। ফলে অফিসগামীদের মাঝে ভোগান্তির সেই পুরোনো চিত্রই ফুটে উঠছে।
রাজধানীর মিরপুর, শুক্রাবাদ, সায়েন্সল্যাব, নীলক্ষেত মোড়, শাহবাগ, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, জাতীয় প্রেসক্লাব, নীলক্ষেত, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, আসাদ গেট, বাড্ডাসহ বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের গণপরিবহনের অভাবে দুর্ভোগে পড়তে দেখা গেছে।
সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পণ্যবাহী যান চলাচল করছে রাজধানীতে। সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেকে বাধ্য হয়ে এসব যানবাহনেও উঠেছেন।
এদিকে রাজধানীতে কর্মস্থলে যাওয়া নাগরিকদের দিন শুরু হয়েছে দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে। মহামারি করোনার সংক্রমণ বাড়ায় সরকারঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে রিকশা ছাড়া সব গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। তাই গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রিকশায় একমাত্র ভরসা, নয়তো পায়ে হাঁটা। তাই বাধ্য হয়েই সোমবার সকাল থেকে তেমনটাই করতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই কর্মস্থলে যেতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আসেন যাত্রীরা। কিন্তু সড়কে রিকশা ও ভ্যান ছাড়া কোনো গণপরিবহন চলাচল করছে না। বাধ্য হয়ে কেউ পায়ে হেঁটে অথবা ভ্যানে চেপে ছুটছেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে। তবে সড়কে প্রচুর সংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেটকার) ও পণ্যবাহী যান চলাচল করতেও দেখা গেছে। রয়েছে প্রচুর রিকশা। অনেক জায়গায় চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের বাকবিত-ায় জড়াতেও দেখা গেছে।
কর্মজীবী মানুষ বলছেন, গণপরিবহন ও দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অফিস খোলা আছে। তাই চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে ঘরে থেকে বেরিয়েছেন তারা। আবার অনেকেই অভিযোগ করছেন, প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কর্মীদের আনা নেয়া করতে সরকারি নির্দেশনা দেয়া হলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই তা করেনি। অন্যদিকে শুধুমাত্র রিকশা চলার সুযোগ থাকায় চালকরা হাঁকাচ্ছেন বাড়তি ভাড়া। উপায় না পেয়ে সেই ভাড়াতেই গন্তব্যে যেতে হচ্ছে মানুষকে।
রফিকুল নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদপুর থেকে গুলশানের অফিসে আসতে দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে বলেন, এভাবে চলতে পারে না। অফিস খোলা রেখে পরিবহন বন্ধ করে দিলো, মানুষগুলো আসা-যাওয়া করবে কিভাবে? কিছু পথ হেঁটে, অনেকটা রিকশায় এভাবে করে কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ করে গুলশান আসতে হলো। এই খরচটা কে দেবে?
শ্যামলী থেকে সাইন্সল্যাব পর্যন্ত ৭০ থেকে ৮০ টাকায় রিকশা চলাচল করলেও সোমবার ১৩০ থেকে ১৫০ টাকার নিচে কোনো চালকই প্যাডেল ঘুরাতে রাজি হয়নি। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিত-া করতেও দেখা গেছে।
মহামারি করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেই ২২ জুন থেকে ঢাকার আশপাশের সাতটি জেলায় বিশেষ লকডাউন শুরু হয়। এছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে অনেক জেলায় লকডাউন চলছে। এরইমধ্যে রোববার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়- যেখানে আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় কিছু শর্তাবলী সংযুক্ত করে ২৮ জুন সকাল ৬টা থেকে ১ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
২৮ জুন সকাল ৬টা থেকে ১ জুলাই সকাল ছয়টা পর্যন্ত সারাদেশে পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ব্যতীত সকল গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত টহলের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
সকল শপিং মল, মার্কেট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
খাবারের দোকান, হোটেল ও রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (শুধুমাত্র অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।
সরকারি-বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠানসমূহে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় তাদের আনা-নেয়া করতে হবে।
জনসাধারণকে মাস্ক পরার জন্য আরো প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। প্রয়োজনের ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।