সুনামগঞ্জ প্রতিবেদক : সুনামগঞ্জে গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেশির ভাগ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তবে সুনামগঞ্জের বৃষ্টিপাতে যতটা না ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে। পাহাড়ি ঢলে এরইমধ্যে সীমান্ত এলাকার রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নে পাহাড়ি ঢলে মঙ্গলকাটা বাজারের পাশে নারায়ণতলা-হালুয়ারঘাট মূল সড়কটি এবারের ঢলে ৫০ ফুটের মতো ভেঙে গেছে। এই সড়ক সীমান্তের ভারত-বাংলাদেশের বর্ডার হাটের জন্য ব্যবহার করা হয়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার মানুষ। সড়কটি ভেঙে যাওয়ার পর এলাকার মানুষ বাঁশ দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সাঁকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। শুধু এই সড়ক নয়, ওই এলাকার ধলাইপাড়ের পাশের সড়কও ভেঙে গেছে। গত দুদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা মঙ্গলকাটা বাজারের মূল সড়কটির ৫০ ফুটের মতো ভেঙে গেছে। একইভাবে তাহিরপুর উপজেলার বাগলী, দোয়ারাবাজারের কিছু এলাকার রাস্তাঘাট, বসতঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এখনো সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জের বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত আছে। পানিবন্দি মানুষ এখনো দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ইয়াকুবিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. জমির উদ্দিন মাসুক জানান, মাদ্রাসার ৭০ থেকে ৮০ ফুট দেয়াল ধসে পড়ে গেছে। ফ্যাসিলিটি ভবনের মাটি সরে গিয়ে গর্তও সৃষ্টি হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুকশেদ আলী জানান, এবারের পাহাড়ি ঢলে এই ইউনিয়নের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, নারায়ণতলা-হালুয়ারঘাট মূল সড়কটি ভেঙে গেছে। এতে মানুষের চলাচলে খুব কষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া মাদ্রাসা, আরো কিছু সড়ক ও মানুষের ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এই ইউনিয়নের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তাহিরপুরের বাগলী গ্রামের মো. জুয়েল মিয়া জানান, বাগলী থেকে মহেশখলা, বাঙাল ভিটার প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক ভেঙে গেছে। এখনো রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসত বাড়িতে পানি আছে। এ ছাড়া বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাজাবার ও ছাতক উপজেলার বেশ কিছু সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের তালিকা তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে গত শনিবার বিকেলে ১০ কেজি চাল, মুড়ি, চিড়া, চিনি, মোমবাতি, ম্যাচ বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন নাহার, সদরের এসিল্যান্ড নুসরাত ফাতিমা, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা ফরিদুল হক, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুকশেদ আলী, ইউপি সদস্য মো. মোতালিব প্রমুখ। সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগরের ভাঙা সড়ক পরিদর্শন শেষে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, পাহাড়ি ঢলে বেশ কিছু সড়ক ভেঙে গেছে। আমরা এরইমধ্যে সব খবরাখবর নিচ্ছি। কোথায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আমরা ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানাচ্ছি। তাঁরা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। আমাদের কাছে দুই হাজার প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী এসেছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সেগুলো বিতরণ করছি। তবে সুনামগঞ্জের বন্যায় এখনো আশঙ্কা তৈরি হয়নি। তারপরও যদি দেখা দেয়, আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি রেখেছি।