নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারীতে সন্ত্রাসী হামলার তৃতীয় বছর পূর্তিতে সর্বস্তরের মানুষ সোমবার নিহতদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন। রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সর্বস্তরের মানুষ নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারীতে সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ হামলা চালায়। এতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ দেশী-বিদেশী ২২ জন নিরীহ নাগরিক নিহত হন। গতকাল সোমবার সকাল থেকে নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে বিদেশি কূটনীতিক, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, নিহতদের পরিবারের স্বজন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও র্যাবসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ রাজধানীর গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের এ রেস্তোরাঁয় আসেন। এই সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে অকালে আত্মত্যাগ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দুই নির্ভীক কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল করিম ও বনানী থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. সালাহ উদ্দিন খান। সেই দিনের অকুতোভয় এই দুই কর্মকর্তার কর্মস্পৃহা ও সাহসিকতায় অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলার বুকে জঙ্গি গোষ্ঠীকে শেকড় গজাতে দেয়নি পুলিশ। একের পর এক জঙ্গি অভিযানে পুলিশ সফলতা পেয়েছে। সেইসাথে মানুষ হলি আর্টিজান হামলায় আত্মত্যাগকারী পুলিশ অফিসারদের ভুলে যায়নি। তাদের স্মরণে ও হলি আর্টিজান বেকারীতে সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে পুরাতন গুলশান থানার সামনে ২০১৮ সালের ১ জুলাই ‘দীপ্ত শপথ’ নামে একটি ভাস্কর্য উদ্বোধন করেছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার। দীপ্ত শপথে ও ফুলেল শ্রদ্ধা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ডিজি র্যাব, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন, কাউন্টার টেরোরিজম এ- ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম, যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি এ- প্রটেকশন, বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন, ডিসি গুলশান, গুলশান এলওসিসি, বনানী-ভাটারা-গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট-বাড্ডা-খিলক্ষেত থানার অফিসার্স ইনচার্জ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার সর্ববৃহৎ এ ঘটনাটি ঘটে ২০১৬ সালের ১ জুলাই। সেদিন ছিল শুক্রবার। রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় পাঁচজনের একটি সন্ত্রাসী দল উপস্থিত সাধারণ মানুষের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। সেদিন হলি আর্টিজান বেকারীর ভেতরে হামলাকারীদের নৃশংসতায় নিহত হন দেশী-বিদেশী মোট ২০ জন নাগরিক। এদের প্রত্যেককেই কুপিয়ে জখম করে অথবা গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে হামলাকারীরা। নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে মারা যায় ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, ১ জন ভারতীয়, ১ জন বাংলাদেশি/আমেরিকান এবং ২ জন বাংলাদেশী নাগরিক। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ অভিযানে ৩২ জন জীবিত উদ্ধার হয়। যার মধ্যে প্রথমে পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হয় ২ জন বিদেশীসহ ১৯ জন, এরপর সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হয় দেশী বিদেশী ১৩ জন। হামলাকারীদের বোমার আঘাতে নিহত হয় ডিএমপি’র গোয়েন্দা বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি মো. সালাহ উদ্দিন খান। সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২২। এ ছাড়া পুলিশের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অনেকে গুরুতর আহত হয়।