রসায়নের মেধাবী ছাত্র বোমার কারিগর

অপরাধ এইমাত্র

অনলাইনে বোমা তৈরির প্রশিক্ষক ফোরকান গ্রেপ্তার


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাহাঙ্গীররনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের মেধাবী ছাত্র জাহিদ হাসান একসময় জড়িয়ে পড়েন জঙ্গি সংগঠন জেএমবিতে। মেধা ও দক্ষতার বদৌলতে হয়ে ওঠেন দলের প্রধান বোমা বিশেষজ্ঞ।


বিজ্ঞাপন

অল্প দিনেই আইইডি ও গ্রেনেড তৈরিতে পাররদর্শী হয়ে ওঠা জাহিদ ছিলেন নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সমন্বয়ক। শুধু নিজেই বোমা তৈরি করতেন না, সামরিক শাখার বাছাইকৃত সদস্যদের অনলাইনে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন তিনি।


বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি নব্য জেএমবির প্রায় সবকটি হামলার সমন্বয়ক ছিলেন জাহিদ। এসব ঘটনায় নব্য জেএমবির বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর জাহিদের নাম বেরিয়ে আসে। যিনি দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড ছিলেন।

মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) দিনগর রাতে রাজধানীর কাফরুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে নব্য জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ জাহিদ হাসান ওরফে রাজু ওরফে ইসমাঈল হাসান ওরফে ফোরকানকে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

গ্রেপ্তার অন্য দুইজন হলেন, সাইফুল ইসলাম মারুফ ওরফে বাসিরা ও রুম্মান হোসেন ফাহাদ ওরফে আব্দুল্লাহ। বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবাদী সংগঠনের আলোচিত নাম নব্য জেএমবির বোমা লিডার জাহিদ হাসান ওরফে ফোরকান। মোস্ট ওয়ান্টেড এই জঙ্গিকে কাফরুল থেকে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি।

জাহিদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, জাহিদ হাসান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের ছাত্র ছিলেন। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হওয়া স্বত্ত্বেও নব্য জেএমবিতে যোগদান করে হিজরতের কারণে মাস্টার্স শেষ করতে পারেননি তিনি। `হোয়াইট হাউজের মুফতি‘ নামক অনলাইন পেজের মাধ্যমে তৎকালিন আমির মুসার মাধ্যমে ২০১৬ সালে নব্য জেএমবিতে যোগ দেন জাহিদ।

মুসার সঙ্গে কাজ করার সুবাদে তৎকালীন নব্য জেএমবির শীর্ষ জঙ্গিদের সঙ্গে সখ্য ও জানাশোনা হয় জাহিদের। মেধা ও সাহসের কারণে তাকে সামরিক শাখায় নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর অল্প দিনেই বোমা ও গ্রেনেড তৈরিতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। সামরিক শাখার বাছাইকৃত সদস্যদের অনলাইনে হাতে কলমে আইইডি-গ্রেনেড তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন জাহিদ।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ২০১৬ সালের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নব্য জেএমবির অনেক সদস্য নিহত হন এবং বিপুল সংখ্যক গ্রেপ্তার হয়। তবে জাহিদ দীর্ঘদিন ধরে গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হন। তিনি দলের পরবর্তী আমিরদের উদ্যোগে আবার নব্য জেএমবিকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন।

সংগঠনকে বিস্তৃত করতে জাহিদ একাধিকবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের আওতায় মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম থেকে কারাতে প্রশিক্ষণ নেন। সর্বশেষ বড় কোনো কেমিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করে সেখান থেকে কেমিক্যাল নিয়ে বড় ধরনের গ্রেনেড বানানোর পরিকল্পনা ছিল। জাহিদ ড্রোন বানাতেও সক্ষম, ড্রোনে এক্সপ্লোসিভ যুক্ত করে কোনো জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা ছিলো তার।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জেএমবিকে পুনর্গঠিত করতে সম্প্রতি টঙ্গি এলাকায় বাসা ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। সংগঠনের তহবিল সমৃদ্ধ করতে ছিনতাইসহ বড় ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, জাহিদকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এই নেটওয়ার্কটি বিদ্ধস্ত করে দিতে পেরেছি। তাদের কাছ থেকে আরো অনেকের নাম পেয়েছি। আশা করি তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হবো।