মাঠে নামবে ভ্রাম্যমাণ আদালত: সাঈদ খোকন পর্যায়ক্রমে রিকশা বন্ধ করতে হবে: আতিকুল রাজধানীতে চলাচল করে ১১ লাখ রিকশা
মহসীন আহেমদ স্বপন : এ মাসের শুরুতে দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন কুড়িল-রামপুরা-সায়েদাবাদ, গাবতলী-আসাদগেট-আজিমপুর ও সায়েন্স ল্যাব-শাহবাগ রুটে রিকশা চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন। ৩ জুলাই দক্ষিণ নগর ভবনে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সমন্বয় সভা শেষে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জানান, ৭ জুলাই থেকে রাজধানীর তিনটি রুটে রিকশা চলাচল করবে না। এ সিদ্ধান্তের পর এ সড়কগুলো অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান রিকশা চালকরা। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, যানজট নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকার দু’টি প্রধান সড়কসহ তিনটি রুটে রিকশা চলাচল বন্ধ ঘোষণা করার পর ঢাকার দুই মেয়রের অবস্থান দুই দিকে রয়েছে। রিকশাচালকদের আন্দোলনের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম তার অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এখনও তার সিদ্ধান্তে অনড়। দুই মেয়রের বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকার সুযোগে রিকশা বন্ধ হওয়া প্রধান দু’টি সড়কে ফের এই বাহনটির চলাচল শুরু হয়েছে। দায়িত্বরত ট্র্যাফিক পুলিশের সদস্যরাও এতে কোনও বাধা দিচ্ছেন না।
গত রোববার, নগর ভবনে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ(ডিটিসিএ) ও রিকশা মালিক-শ্রমিক পক্ষের সমন্বয় সভা শেষে দক্ষিণের মেয়র বলেন, রাজধানীর প্রধান তিন সড়কে রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে । অবৈধ রিকশা বন্ধে শিগগিরই মাঠে নামবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মেয়র বলেন, ডিটিসিএ’র প্রথম সভায় প্রধান তিন সড়কে রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু, কিছু রিকশাচালক, মালিক, সাংবাদিকসহ অনেককে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক।
তিনি বলেন, রাজধানীর তিন সড়কে রিকশা ও ভ্যান চলাচল বন্ধ করার পর গণপরিবহনের গতি বেড়েছে। কিছু জায়গায় নাগরিকদের সমস্যা হচ্ছে। তবে, ঢাকাকে বাসযোগ্য ও নাগরিকবান্ধব করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এসময় রিকশা মালিক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী জামান অবৈধভাবে বেনামি প্লেট বসিয়ে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা চলাচল বন্ধের দাবি জানান।
এছাড়া, মেয়র সাঈদ খোকন কুড়িল-সায়েদাবাদ সড়কে রিকশা বন্ধ করার অনুরোধ জানালে রিকশাচালক সমিতির সভাপতি ইউনুস আলী এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
তিনি আরও বলেন, জনদুর্ভোগ এড়াতে বিআরটিসির পক্ষ থেকে আরও ২০-৩০টি বাস নামানো হবে। যেন রিকশাযোগে যাত্রীরা অলিগলি থেকে সড়কের সংযোগস্থলেই গণপরিবহন পান। আমার দেখেছি রিকশা সংকটে অনেক যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন। বিআরটিসি আরও বাস নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরাও বলছি না সড়কে যানজটের জন্য শুধু রিকশাই দায়ী। এর আরও অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রাইভেটকারও দায়ী। এক পরিবারের একাধিক গাড়ি থাকে, যত্রতত্র পার্কিং করে যানজটের জন্য কারণগুলো একটা একটা করে সমাধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।
মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, এখন থেকে রাজধানীতে অবৈধ রিকশা বন্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে প্রধান সড়কগুলোতে ধীরগতির সব যানবাহন পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে।
তবে রোববার খিলগাঁও, মালিবাগ রেলগেট, আবুল হোটেল ও রামপুরা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি রিকশাও চলাচল করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনও বাধা দিচ্ছে না। তবে এদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় যানবাহন অনেক কম ছিল।
রিকশাচালকরা জানান, মেয়রের সঙ্গে বৈঠকের পর মালিক ও নেতারা তাদের জানিয়েছেন রিকশা চলতে কোনও সমস্যা নেই। সে কারণে তারা আন্দোলন তুলে নিয়েছেন। এখন তারা প্রগতি সরণিতে রিকশা চালাচ্ছেন। ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বলেছি পর্যায়ক্রমে রিকশা বন্ধ করতে হবে। হুট করেই বন্ধ করে দিলে হবে না। রিকশাচালকদের সমস্যাও শুনতে হবে। এজন্য বাইলেনগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।
তাহলে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তটি এসেছে ঢাকা দক্ষিণ থেকে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওয়ার্ডভিত্তিক অবৈধ রিকশা ও গ্যারেজ শনাক্ত করা হবে। এজন্য কমিটি করে দিচ্ছি। আমরা বৈধ রিকশার পেছনে কিউআর কোর্ড করে দেবো। চালকদেরও ডাটাবেজ করা হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক রিকশাওয়ালাদের বিভিন্ন ড্রেস করে দেবো। অবৈধ রিকশা বন্ধ করবো।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার রাইটস বা বিলস এর এক গবেষণা বলছে, রাজধানী বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রিকশা চলছে। এসব রিকশার ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ২৭ লাখ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে বলে গবেষণায় জানা যায়।