সবচেয়ে সফল ওবায়দুল কাদের
বিশেষ প্রতিবেদক : জনপ্রিয়তা বেড়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বিগত দুই মেয়াদের তুলনায় বর্তমান সরকারের প্রথম ছয় মাসে প্রধানমন্ত্রীর কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ। একই সঙ্গে দেশের ৭৩ শতাংশ মানুষ সরকারের সার্বিক কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সবচেয়ে সফল মন্ত্রী মনে করছেন তারা। সরকারের সার্বিক বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ বৃদ্ধি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচারিক প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।
এই তথ্য জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা কলরেডি। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করে কলরেডি। এতে বক্তৃতা করেন সংস্থাটির মূখ্য গবেষক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন।
জরিপের ফল তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষে গত ৮ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত টেলিফোনের মাধ্যমে এক হাজার ২৫৫ জনের কাছ থেকে মতামত নিয়ে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে অংশ নেয়াদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ পুরুষ এবং ২৪ শতাংশ নারী।
জরিপের ফল অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিগত ছয় মাসের কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ৭৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর আগের জরিপে এ হার ৭০ শতাংশ। সরকারের কর্মকাণ্ডে গড়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ৭৩ দশমিক ০৫ শতাংশ মানুষ। ২৫ দশমিক ৮২ শতাংশ মানুষ মনে করছেন বিগত দুই মেয়াদের তুলনায় এ ছয় মাসে অনেক ভালো কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ২৯ দশমিক ১৬ শতাংশ মানুষ মনে করছেন ভালো করছে এ সরকার। এর বিপরিতে সরকারের কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ মানুষ। অধিকমাত্রায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ মানুষ। বিগত দুই মেয়াদের মতোই গত মাসে সরকারের কর্মকাণ্ড একই রকম রয়েছে বলে মনে করেন ৩৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ মানুষ।
জরিপের ফল অনুযায়ী, গত ছয় মাসে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন মেগা প্রকল্প, রাস্তাঘাট উন্নয়ন ও শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের বিষয়ে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা প্রশংসা করছেন। মেগা প্রকল্পের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ২২ দশমিক ২৩ শতাংশ, রাস্তা ও যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে ২০ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ বৃদ্ধি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচারিক প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। ধর্ষণ ও আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে উদ্বেগ করেছেন ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, বিচারিক প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
জরিপে অংশগ্রহণকারীরা এর বাইরেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি প্রতিরোধ, বেকারত্ব, বিদ্যুৎ, গণতন্ত্র, রোহিঙ্গার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জরিপে অংশগগ্রহণকারীদের মধ্যে ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ মানুষ সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন নির্ধারিত সময়ে মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন। এর বাইরে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, ৭.১৯ শতাংশ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ৫.০১ শতাংশ দুর্নীতি প্রতিরোধকে সরকারের চ্যালেঞ্জ মনে করছেন। এদিকে জরিপের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ বিগত ছয় মাসের কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে সবচেয়ে সফল মন্ত্রী হিসেবে মনে করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে। আর ২৯ শতাংশ সফল মন্ত্রী মনে করছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে। এর বাইরেও আরও প্রায় ২০ জন মন্ত্রীর নাম জরিপে উঠে এসেছে।
অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন আরও জানান, নির্বাচনের আগে ও পরপর দুটি জরিপ পরিচালনা করেছিল কলরেডি। সরকার এ জরিপের ফল গুরুত্বের সঙ্গে নেবে বলে বলে আশা করে তিনি বলে, জনগণের উদ্বেগের বিষয়গুলো সরকার নিরসনের চেষ্টা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসের ফ্যাকাল্টি কাজী আহমেদ পারভেজ ও কলরেডির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজাদ আবুল কালাম।