হত্যাকারী গ্রেফতার, ভিকটিমের অটোরিকশা ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও গামছা উদ্ধার
বিশেষ প্রতিবেদন : র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র্যাবের জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে।
মাসুদ শেখ বয়স ২৭ বছর বাড়ী রাজবাড়ী জেলা। মাসুদ শেখের বাবা জীবিকার প্রয়োজনে প্রায় ২৬ বছর পূর্বে ঢাকা জেলার সাভারের সবুজবাগ এলাকায় আগমন করে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। মাসুদ পেশায় অটোরিকশা চালক। সে সাভারসহ সিংগাইর ও ধামরাই এলাকায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত।
সে গত ২ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে অটোরিকশা নিয়ে বাসা হতে বের হয়ে রাত ১১.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত বাসা ফেরেনি এবং তার মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় তার পরিবার সম্ভাব্য সকল স্থানে খোজাখোজি শুরু করেন।
পরবর্তীতে এতদ্সংক্রান্ত বিষয়ে ভিকটিমের ভাই মোঃ মজনু মিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এই নিখোঁজের খবর প্রচার করেন এবং ৩ অক্টোবর ২০২১ তারিখে সাভার মডেল থানায় নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরবর্তীতে গত ৫ অক্টোবর ২০২১ তারিখে ফেইসবুকের মাধ্যমে জনৈক সাংবাদিকের মারফত জানতে পারেন একটি অজ্ঞাত লাশ মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানাধীন দাশেরহাটি গ্রামে পাওয়া গিয়েছে। তাৎক্ষনাৎ ভিকটিমের ভাই ও তার পরিবার ঘটনাস্থালে গিয়ে লাশটি মাসুদ শেখের বলে শনাক্ত করে। ঐদিনেই তার ভাই মজনু মিয়া বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিদের অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি মিডিয়াতে ব্যাপক চাঞ্চলের সৃষ্টি করে। ফলশ্রæতিতে র্যাব-৪ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি পূর্বক ছায়া তদন্ত শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদ ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে গত ৬ অক্টোবর তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে ৮ হতে রাত সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত র্যাব-৪ এর একটি অভিযানিক দল সাভার মডেল থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্টতায় মূলহত্যাকারী মোঃ ফরিদ (৩৩), জেলা-মানিকগঞ্জ’কে গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীতে আসামী ফরিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জনৈক আলমাস হোসেন এর অটোপার্সের দোকান হতে ভিকটিমের ছিনতাইকৃত অটোরিক্সা, আসামীর বাসা হতে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং হত্যার কাজে ব্যবহৃত গামছা ও ছুরি সিংগাইর থানাধীন গোবিন্দল গ্রামে তালপট্টি ব্রীজের নীচ থেকে উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী ফরিদ (৩৩) জানায় তার বাড়ী মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানা এলাকায়।
তার নিজের কোন অটোরিকশা না থাকায় অন্যের অটোরিকশা ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। সে নিজে একটি অটোরিকশার মালিক হওয়ার উদ্দেশ্যে মাসুদের অটোরিকশাটি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
এই উদ্দেশ্যে মাসুদের সাথে প্রথমে বন্ধুত্ব স্থাপন করে, পরবর্তীতে গত ২ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মাসুদের অটোরিকশা ভাড়া করে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানাধীন দাশেরহাটি আলমমারা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার নির্জন স্থানে কৌশলে নিয়ে সুযোগ বুঝে গলায় গামছা পেচিয়ে, ছুরি দিয়ে গলায় উপুর্যপুরি আঘাত করে হত্যা করে।
মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর দুই হাতের আঙ্গুল কেটে বিভিন্ন যায়গায় ফেলে অটোরিক্সা নিয়ে পালিয়ে গিয়ে খরার চর বাজারস্থ আলমাস হোসেনের গ্যারেজে নিয়ে ১৫,০০০/- টাকার বিনিময়ে অটোরিক্সার রং, বডি ও মডেল পরিবর্তন করার জন্য রেখে যায় এবং পরবর্তীতে ঘটনাস্থল হতে ২ কিঃমিঃ দূরে গোবিন্দল গ্রামের তালপট্টি জামে মসজিদের পাশে তালপট্টি ব্রীজের নিচ হতে হত্যার কাজে ব্যবহৃত ছুরি ও গামছা ফেলে দিয়ে সে আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।