নিয়ন্ত্রণের বাইরে ডেঙ্গু

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা রাজধানী সারাদেশ স্বাস্থ্য

*ঈদে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি
*৫০০ শয্যার হাসপাতালে রোগী ৪৭৩
*ডেঙ্গুতে প্রাণ হারালেন আরও ৮ জন
*ডেঙ্গু একটি নাগরিক সমস্যা
*বরিশালে ৭১ রোগী ভর্তি, চিকিৎসাধীন ১৯৩

মহসীন আহমেদ স্বপন : ঢাকায় যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা যতটাই মুখে নিয়ন্ত্রণের কথা বলি না কেন, এখনও এটা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এটা হল বাস্তবতা। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক বর্ধিত সভায় ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য আসে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার ৪৩৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কেবল শনিবারই হাসপাতালে গেছেন ২০৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী। অন্যদিকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মঙ্গলবার বলেছেন, বর্তমানে ডেঙ্গু একটি নাগরিক সমস্যা। আমরা শুধু আলোচনা ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে না থেকে এই সংকট নিরসনে নিজ পরিসর থেকে যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করি, তাহলে আমাদের চারপাশ এডিস মশামুক্ত হবে।
দেশজুড়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে দুই হাজার ৩৪৮ জন নতুন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২৮৪ জন। আর ঢাকার বাইরে এ সংখ্যা ১ হাজার ৬৪। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হন ১ হাজার ১৫৯ জন। আর রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন জেলায় এই সংখ্যা ছিল ৯০৬ জন। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এসব তথ্য জানায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৯ হাজার ৯১২ জন। এরমধ্যে ২১ হাজার ৯২১ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। সরকারি হিসাব মতে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ জন। শুধুমাত্র জুলাই মাসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আগস্ট মাসের প্রথম ছয় দিন মারা গেছেন তিনজন। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
এদিকে কোরবানির ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষের দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণের মধ্য দিয়ে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে মশাবাহিত ডেঙ্গু জ¦র আরও ছড়াতে পারে বলে উদ্বেগে রয়েছে সরকার। সম্ভাব্য এই স্বাস্থ্য ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে তা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাজধানীতে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হাজার হাজার রোগী সামলাতে হিমশিম খাওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশজুড়ে চিকিৎসকদের ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনার সর্বসাম্প্রতিক কৌশলসহ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
গত সোমবার ঢাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা জানি, ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে। কারণ, মানুষ গ্রামে যাবে। আমরা তাদের বাড়ি যাওয়া বাদ দিতে বলতে পারি না। আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ডেঙ্গু জ¦রের জীবানু এডিস এজিপ্টি প্রধান বাহক মশা প্রধানত শহরে পাওয়া যায়। তবে মানুষের ভ্রমণের কারণে বাংলাদেশজুড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব জিনিস কেন্দ্রের অনুমোদন ছাড়া কেনার জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোর বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সকলের ছুটি বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা হাসপাতালের জন্য ১০ লাখ ও উপজেলার জন্য ২ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার ৪৩৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কেবল শনিবারই হাসপাতালে গেছেন ২০৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যদিও গণমাধ্যমের খবরে মৃত্যুর সংখ্যা নব্বই ছাড়িয়েছে। ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কীটতত্ত্ববিদ বি এন নাগপাল গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, ফগার মেশিনে রাস্তা বা উন্মুক্ত জায়গায় কীটনাশক ছিটিয়ে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা মারার আশা কেবলই ‘মিথ’। তার বদলে নিজের ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং সকাল-সন্ধ্যা অ্যারোসল স্প্রে করুন, কারণ এডিস মশা ওখানেই থাকে। মশা নিয়ে গবেষণায় ৪০ বছর কাটিয়ে দেওয়া বিএন নাগপাল এডিস মশা মারতে ফগিং মেশিনের প্রয়োগ পদ্ধতি নাচক করে দিয়ে বলেন, সবার আগে এ মশার প্রজননস্থল শনাক্ত ও ধ্বংস করার দিকে নজর দিতে হবে। একটি পানির বোতলের ঢাকনা দেখিয়ে তিনি বলেন, মাত্র দুই মিলিলিটার পানি পেলেও এডিস মশা সেখানে বংশ বিস্তার করতে পারে। এডিস মশা পানির উপরিতলে এমনভাবে ডিম ছাড়ে, যাতে সেগুলো বছরজুড়ে টিকে থাকতে পারে। যখন পাত্র ভরে পানি উপচে পড়ে, তখন সেই ডিম থেকে লার্ভা জন্ম নেয়।
৫০০ শয্যার হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ৪৭৩ জন! : ডেঙ্গু রোগীর চাপ সামলাতে মুগদা হাসপাতালের অষ্টম তলায় শিশু ওয়ার্ডের সিঁড়ির গোড়ায় অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছে ছোট্ট শিশু নাফিজা। সাড়ে চার বছর বয়সী ফুটফুটে সুন্দর নাফিজার মা শারমিন আক্তারও ডেঙ্গু আক্রান্ত। তিনি আছেন নবম তলার মেডিসিন ওয়ার্ডে।
মা’কে ছাড়া যে নাফিজার এক মুহূর্তও চলে না, সেই নাফিজাই গত তিন দিন ধরে মাকে দেখে না। একই হাসপাতালে ভর্তি হলেও ভিন্ন ওয়ার্ড, ভিন্ন তলায় অবস্থানের কারণে মা-মেয়ের দেখা হচ্ছে না। রক্তের প্লেটলেট ৫১ হাজারে নেমে যাওয়ায় মা’ শারমিন আক্তার আছেন ঝুঁকির মধ্যে। মেয়ে নাফিজার প্লেটলেট অবশ্য ১ লাখ ৫০ হাজার।
নাফিজার বাবা মুগদার বাসিন্দা পলাশ ইসলাম ডেঙ্গু আক্রান্ত স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আছেন চরম বিপদে। আটতলা থেকে নয় তলায় ওঠা-নামা করতে করতে তিনি কাহিল। আদরের সন্তান নাফিজা ছেড়ে এক মুহূর্ত সরতে পারছেন না। অন্যদিকে প্রিয়তমা স্ত্রী শারমিন আক্তারে প্রতি যে দায়িত্ব ও কর্তব্য, সেটিও এড়াতে পারছেন না পলাশ। কাজ-কর্ম, অফিস-বাসা ছেড়ে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে পড়ে আছেন হাসপাতালে।
পলশা বলেন, পৃথিবীতে এই মুহূর্তে আমার চেয়ে অসহায় কেউ নেই। গতকাল থেকে মেয়েটা কিছু খাচ্ছে না। জ্বরের মাত্রা বেড়েই চলছে। ঘুম থেকে উঠেই মা’য়ের কাছে যেতে চায়। ওর অবস্থাও ভাল না। তার রক্তের প্লেটলেট অনেক কমে গেছে।
শিশু ওয়ার্ডের ফ্লোরে ঠাঁই হয়েছে এক বছরের শিশু জুবাইদার। মা’ হোসনে আরা বেগমের কোলে জ্বরের তীব্রতায় কাতরাচ্ছে শিশুটি। ছোট্ট হাতে ক্যানোলা পরানো। চলছে সেলাইন। তারও রক্তের প্লেটলেট অনেক কম। কর্তব্যরত চিকিৎসক কিছুক্ষণ আগে দেখে গেছেন। মা’ হোসনে আরাকে দিয়ে গেছেন সান্ত¡না।
কিন্তু হোসনে আরার চোখে-মুখে আতঙ্ক। আদরের সন্তানটিকে কোলে করে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, আশপাশের অবস্থা দেখুন। কোথাও জায়গা না পেয়ে বাচ্চাটা নিয়ে এই ফ্লোরে পড়ে আছি। সবাই বিপদে। তাই নিজের বিপদটা বড় করে দেখছি না।
শুধু শামিম আর হোসনে আরা বেগম নন, মুগদা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের পুরো চিত্রটাই এ রকম। ৬০ শয্যার এই ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৮০ জন। অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীসহ মোট রোগীর সংখ্যা ১২০ জনের মতো। অর্থাৎ বেডের চেয়ে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ। বাড়তি রোগী ও স্বজনদের চাপে চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নাকাল অবস্থা।
শিশু ওয়ার্ডের একতলা উপরে সাধারণ মেডিসিন ওয়ার্ড। এখানকার অবস্থা আরও শোচনীয়। ৬০ শয্যার এ ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ৩৯৩ জন। এরমধ্যে ডেঙ্গু রোগী ৩৭৩ জন। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সাধারণ মেডিসিন ওয়ার্ডের এক ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা নেই।
সিঁড়ির গোড়া, ফাঁকা জায়গা, হাঁটার পথে, লিফটের সামনে, এক রুম থেকে আরেক রুমে যাওয়ার সরু পথ— সবখানেই রোগী আর রোগী। বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করার পরও অসংখ্য রোগী ফ্লোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা দিন-রাত পরিশ্রম করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না। রোগী এবং স্বজনদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
মেডিসিন ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্জ রাহেলা বেগম বলেন, দৌড়াতে দৌড়াতে আর উপরতলা-নিচতলা করতে করতে এখন আর পা চলছে না। পিপাসায় বুক ফেঁটে গেলেও পানি পানের সুযোগ পাচ্ছি না। টোটাল পরিস্থিতি আউট অব কন্ট্রোল।
মুগদা হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. খাইরুল আলমের দেওয়া তথ্যমতে, ৫০০ শয্যার মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪৮৪ জন। এদের মধ্যে মেডিসিন ওয়ার্ডে ৩৭৩, শিশু ওয়ার্ডে ৭৯ এবং কেবিনে ভর্তি ৩২ জন। আর টোটাল রোগীর সংখ্যা ৭৯০ জন। অর্থাৎ এই মুহূর্তে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর ৬১ শতাংশ হচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত।
এদিকে গত এক মাসে মুগদা হাসপাতালে মোট ৮ জন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। এর মধ্যে সোমবার (০৫ আগস্ট) রাত ২ টার দিকে মারা গেছেন মো. হানিফ নামে একজন। ৩ আগস্ট মারা গেছেন দুইজন। আর জুলাইয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
ডেঙ্গুতে প্রাণ হারালেন আরও ৮ জন : দেশজুড়ে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পর হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। গত সোমবার রাত থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্তত আট জনের মৃত্যুর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ঢাকায় দুই নারী ও দুই পুরুষ ও এক শিশু, দিনাজপুরে এক কিশোর এবং রংপুর ও চাঁদপুরে একজন করে শিশু রয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন:
ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল মঙ্গলবার তিন জন মারা গেছেন। তারা হলেন- মনোয়ারা বেগম (৭৫), আমজাদ ম-ল (৫২) ও হাবিবুর রহমান (২১)। ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাছির উদ্দীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে ঢামেকে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৭ জনে। গতকাল মঙ্গলবার ভোর চারটার দিকে ঢামেকের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মনোয়ারা বেগম। তার স্বামীর নাম আবদুল হাই। তারা ঢাকার মিরপুর এলাকায় থাকতেন। মনোয়ারার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর হাজিগঞ্জের আহমেদপুরে। মনোয়ারার ছেলে মোশাররফ হোসেন জানান, তার মা এক সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত ছিলেন। গত ৩ আগস্ট তাকে ঢামেকে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থা গতকাল মঙ্গলবার ভোর চারটার দিকে তিনি মারা যান। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৬টার দিকে ঢামেকের মেডিসিন বিভাগের ৬০১ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আমজাদ ম-ল। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয়ের কেটুয়াধারা গ্রামে। তার ছোট ভাই রাশেদ ম-ল জানান, ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হলে শুক্রবার তার ভাইকে মানিকগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে গত সোমবার রাতে ঢামেকে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে তিনি মারা যান। আমজাদ ম-ল কৃষি কাজ করতেন বলে জানান তিনি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে ঢামেকের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুর রহমান (২১) নামে এক যুবক মারা যান। তার বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানায়। তিনি গত ৩১ জুলাই থেকে ঢামেকে ভর্তি ছিলেন।
এদিকে স্বামী-সন্তান নিয়ে বেড়াতে এসে ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ইতালি প্রবাসী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। হাফসা লিপি নামের ৩৪ বছর বয়সী ওই নারী চার দিন ধরে ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে আইসিইউতে থাকা অবস্থায় গত সোমবার রাতে তার মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালের পরিচালক জসিমউদ্দিন খান জানান। হাফসার স্বামী সর্দার আবদুল সাত্তার তরুণ (৩৬) নিজেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। দুই সন্তান অলি (১২) ও আয়ানকে (৬) নিয়ে সপ্তাহ তিনেক আগে দেশে এসে কলাবাগানে উঠেছিলেন তারা। সাত্তারের বড় বোন ডা. নুরুন্নাহার জানান, ঢাকায় আসার পরপরই জ¦রে পড়েন তার ভাই। ওর অসুস্থতার মধ্যেই হাফসার জ¦র আসে। গত ২৮ জুলাই এনএস১ পরীক্ষা করা হলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। কিন্তু আমার ভাই বাসায় অসুস্থ বলে হাফসা স্বামীর সঙ্গে বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু শুক্রবার সকালে হঠাৎ করে ওর অবস্থা খারাপের দিকে গেলে আমরা ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। ওইদিনই ওকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে হাফসার মৃতদেহ নিয়ে শরীয়তপুরে তার শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হন স্বজনরা। শরীয়পুরের ভেদরগঞ্জ থানার সর্দার বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে হাফসাকে দাফন করা হবে বলে জানান নুরুন্নাহার।
এদিকে মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন (০৭) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়। আল মামুনের পরিচিতরা বলছেন, চারদিন আগে জ¦র নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয় আল মামুন। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায় তার ডেঙ্গু রোগ হয়েছে। আল মামুন পরিবারের সঙ্গে সবুজবাগ মাদারটেক এলাকায় থাকতো এবং মাদারটেক উত্তরপাড়া এলাকার একটি মাদ্রাসাতে সে পড়াশোনা করতো। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল সে। তাদের প্রতিবেশী সুমন বলেন, দুপুরে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে শিশু মামুনের মৃত্যু হয়। সে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এ ব্যাপারে মুগদা হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দিনাজপুর: দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। রবিউল ইসলাম (১৭) ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ গ্রামের নয়ন ইসলামের ছেলে। গতকাল মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবু মোহাম্মদ খয়রুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জুন থেকে রবিউল এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এই প্রথম জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগীর মুত্যু হলো। আরও ৪৩ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
রংপুর: ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত গত সোমবার রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মৃত রিহানা গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার আশরাফুল ইসলামের মেয়ে। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকরী অধ্যাপক সাহেদুজ্জামান রিবেল বলেন, ডেঙ্গু জ¦রসহ শিশুটিকে শনিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সঙ্গে নিউমোনিয়াও ছিল।
চাঁদপুর: গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার ধানম-ির বেসরকারি একটি হাসপাতালে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মদিনা আক্তার নামে ওই শিশু মতলব উত্তর উপজেলার ঘনিয়ারপাড় অক্সফোর্ড কিন্ডারগার্টেনের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা মিজানুর রহমান মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন। দুই ভাই-বোনের মধ্যে মদিনা বড়। ধানমন্ডি জেনারেল অ্যান্ড কিডনি হাসপাতালে ভোররাতে তার মৃত্যু হয় বলে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান। চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনোয়ারুল আজিম জানান, শনিবার ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত শিশুটিকে হাসপাতালে আনা হয়। এখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় নিয়ে যান স্বজনরা। চাঁদপুরে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে মোট ৬৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডা. আনোয়ারুল জানান, গত দুই সপ্তাহে ২০০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ১৫০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অন্য ১০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রাকৃতিকভাবেই জুন-জুলাই-আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। গত ১৮ বছর ধরেই এ অবস্থা চলে এসেছে। এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু রোগে মারা গিয়েছেন ১৮ জন। এরমধ্যে এপ্রিলে দুই জন, জুন মাসে তিন জন। আর গত জুলাই মাসে ১৩ জন। তবে গণমাধ্যমের হিসেবে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা নব্বই ছাড়িয়েছে।
বাস্তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বাইরে : ঢাকায় আওয়ামী লীগের ডেঙ্গুবিরোধী প্রচারণা ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের যথাযথ সাড়া না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এভাবে ‘লোক দেখানো’ কর্মসূচি পালনের কোনো প্রয়োজন নেই। ঢাকায় যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, আমরা যতটাই মুখে নিয়ন্ত্রণের কথা বলি না কেন, এখনও এটা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এটা হল বাস্তবতা। গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক বর্ধিত সভায় ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য আসে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার ৪৩৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কেবল শনিবারই হাসপাতালে গেছেন ২০৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যদিও গণমাধ্যমের খবরে মৃত্যুর সংখ্যা নব্বই ছাড়িয়েছে। গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতামূলক লিফলেট বিলি এবং মশক নিধন কার্যক্রমে অংশ নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এ বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতার ‘অভাব নেই’। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সেদিন সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। কিন্তু ঢাকায় ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের ‘দায়সারা’ কর্মসূচি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার অসন্তোষ প্রকাশ পায় দলের সাধারণ সম্পাদকের কথায়। ডেঙ্গুবিরোধী প্রচারণা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় দলের নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে পরিচ্ছন্নতার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা তিন দিন তিনটি জায়গায়, প্রথমত ধানম-ি এলাকায়, পরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে, এরপর ফার্মগেট ও শান্তিনগর এলাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে এই কার্যক্রম চালিয়েছি। কর্মসূচিটি আমরা সিনসিয়ারলি এবং সিরিয়াসলি নিয়েছি। জনস্বার্থে, দেশের স্বার্থে এবং দলের স্বার্থে আমাদের নেত্রীর নির্দেশনায় এই কাজটি আমরা করব। আমরা নামকাওয়াস্তে দু-চার জায়গায় কর্মসূচি পালন করলাম, বেশিরভাগ ওয়ার্ডে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা হলো না, কর্মসূচি পালন হলো না। এই দায়সারা কর্মসূচির কোনো প্রয়োজন নেই। এতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রও বন্ধ হবে না, এডিস মশার উৎসমূল বন্ধ করতে পারব না। ডেঙ্গু জ¦রের যে ভয়ংকর বিস্তার এই বিস্তারও আমরা রোধ করতে পারব না। সেতুমন্ত্রী বলেন, সামনে ঈদ, ঈদের সময় সিটি থেকে অনেকেই গ্রামবাংলায় ঘরমুখো হবেন। অনেকেই যাচ্ছেন, যাবেন। এখানেও এই ডেঙ্গু জ¦রের বিস্তারের একটা আশঙ্কা আছে। আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের প্রথম কাজটি হচ্ছে এই সচেতনতা এবং সতর্কতা প্রচার করা। এই মশার প্রজনন ও বংশবিস্তার বন্ধের পূর্বশর্ত হচ্ছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। ঢাকা শহরের মোট ১০৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ১৩টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা মাঠে নামায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে ফটোসেশন করার জন্য এই অভিযান নয়। আমরা দেখতে চাই, ঢাকা সিটির প্রত্যেক ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং নেত্রী এটা জানতে চেয়েছেন। নেত্রী জানতে চেয়েছেন, কয়টা ওয়ার্ডে নেত্রীর নির্দেশনা পালন হয়েছে। ১০৯ জন কাউন্সিলরের মধ্যে হাত তুলেছেন কয়জন? এ সময় হাত গুনে দেখা যায় ১৩ জন কাউন্সিলর হাত তুলেছেন। ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, যাঁরা করেননি, আমি চিহ্নিত করে লজ্জা দিতে চাই না। শেখ হাসিনার নির্দেশ মনে করতে হবে। যাঁরা করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ আর এই ধন্যবাদ অব্যাহত থাকবে। যাঁরা করেননি, নেত্রী বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রোগ্রাম না করলে কিন্তু অপ্রকাশিত থাকবে না। কাজেই প্রতিটি ওয়ার্ডে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান কর্মসূচি করবেন। ওয়ার্ডের নেতারা আছেন, আপনাদেরও দায়িত্ব আছে। আপনারা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সহযোগিতা করবেন। নিজের কর্মস্থল নিজের অফিস আদালত, বাসাবাড়ি পরিষ্কার রাখবেন। ভয়ংকর এডিস মশা মন্ত্রী-এমপি-সাংবাদিক কাউকে ছাড়বে না বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। সেতুমন্ত্রী বলেন, এই এডিস মশা ভয়ংকর, এই এডিস মশা কারো চেহারার দিকে তাকায় না, আপনি কাউন্সিলর, আপনি কি নেতা, আপনি কি মন্ত্রী, এমপি, মেয়র কোনো দিকেই তাকাবে না। এডিস মশা সামনে পেলেই রক্ত খাবে, এমপির রক্ত খাবে, মন্ত্রীর রক্ত খাবে, নেতার রক্ত খাবে, কাউন্সিলরের রক্ত খাবে কাউকে ছাড়বে না। সাংবাদিকদেরও রেহাই নেই। সবাইকে সচেতন হতে হবে, সাবধান হতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, নোংরা শহরের মধ্যে আমরা বিশ্বে চার নম্বরে, তাহলে কেন এডিস মশার প্রজনন হবে না? কেন বংশবিস্তার হবে না? আরো অনেক ভয়ংকর চিকুনগুনিয়ার মতো ব্যাধিতে অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। ঢাকাকে ক্লিন করতে হবে, ঢাকাকে গ্রিন করতে হবে। আমাদের এবং প্রতিনিধিদের যৌথভাবে মাঠে নামতে হবে। ‘মিডিয়া না থাকলে ডেঙ্গুকে গুজব বলে চালিয়ে দিত সরকার’Ñ বিএনপির এমন বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি বলব মিডিয়া না থাকলে বিএনপি যে একটা রাজনৈতিক দল, তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন হতো। মিডিয়া না থাকলে বিএনপি যে আছে, এটা বোঝার কোনো উপায় আছে? নির্বাচনে তারা ব্যর্থ, আন্দোলনে তারা ব্যর্থ। এত বড় বন্যা হয়ে গেল ছিটেফোঁটা দু-একটা জায়গায় গিয়ে ফটোসেশন করে শেষ। ডেঙ্গু অভিযানেও তারা নেই, মুখে মুখে আবাসিক প্রতিনিধি পল্টনের অফিসে বসে কথা বলছে। মিডিয়া না থাকলে আজকে জনগণ কীভাবে বুঝত এই দল যে আছে?
ডেঙ্গু একটি নাগরিক সমস্যা : শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, বর্তমানে ডেঙ্গু একটি নাগরিক সমস্যা। আমরা শুধু আলোচনা ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে না থেকে এই সংকট নিরসনে নিজ পরিসর থেকে যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করি, তাহলে আমাদের চারপাশ এডিস মশামুক্ত হবে।
মঙ্গলবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভাষা শহীদ রফিক ভবনে ডেঙ্গু বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি ও মশক নিধন কর্মসূচির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নওফেল বলেন, ডেঙ্গু সমস্যা দূর করার জন্য আমাদের বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ, কীটতত্ত্ববিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপকগণ আছেন। তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা ছাড়া এ সমস্যা সমাধান করা যাবে না। দেশে যে কীটপতঙ্গ রয়েছে এদের মধ্যে উপকারী কীটদের সংরক্ষণ এবং অপকারী কীটপতঙ্গ ধ্বংস করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কৃষি গবেষণায় আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে যে গবেষণা আমরা সেই গবেষণার সহযোগিতা নিতে চাই। দীর্ঘমেয়াদী এ সমস্যা সমাধান ও বিস্তার রোধ করতে একটা কেমিকেল সমাধান দরকার। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কীটতত্ত্ববিদ ও বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এডিশ মশা প্রতিরোধের উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে ও রেজিস্টার প্রকৌশলি ওহিদুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সেলিম ভূইয়া, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. নূর মোহাম্মদ, প্রক্টর মোস্তফা কামাল, নাইফ অ্যান্ড আর্থ অনুষদের ডিন কাজী সাইফুদ্দীনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক, কর্মমর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বরিশালে নতুন ৭১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি, চিকিৎসাধীন ১৯৩ জন : বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও (শেবাচিম) ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলেও কারো স্থান হয়েছে মেডিসিন ওয়ার্ডের মেঝে, আবার কারো ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়। গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালটিতে ১৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত সোমবার এ সংখ্যা ছিল ১৫৪ জন। হাসপাতালের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৭১ জন। যা এখন পর্যন্ত এ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া সর্বোচ্চ রোগীর সংখ্যা। আর সবশেষ হিসাব অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত ভর্তি হওয়া মোট রোগীর মধ্যে পুরুষ ৩৭ জন, নারী ২৪ জন ও শিশু ১০ জন রয়েছে। অপরদিকে ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৩২ জন রোগী। যার মধ্যে ২১ জন পুরুষ, ৯ জন নারী ও ২ জন শিশু রয়েছে। এদিকে পুরো হাসপাতালে বর্তমানে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত চিকিৎসাধীন ১৯৩ জনের মধ্যে পুরুষ ১১০, মহিলা ৬০ ও শিশু ২৩ জন। গত ১৬ জুলাই থেকে ০৬ আগস্ট (গতকাল মঙ্গলবার) সকাল পর্যন্ত বরিশাল মেডিকেলে মোট ৩৭৭ জন ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৮৪ জন এবং মারা গেছেন দুই যুবক। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের সুবিধার্থে হাসপাতালে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। পাশাপাশি রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। যা আমিসহ মেডিসিন ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধানরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *