নিজস্ব প্রতিবেদক : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ-সাউথের দুই শিক্ষার্থীসহ পাঁচজনকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। সিটিটিসি জানায়, আটক পাঁচজন নব্য জেএমবির ‘উলফ প্যাক’ গ্রুপের সদস্য। তাদের টার্গেট ছিলো সুবিধাজনক সময়ে পুলিশের ওপর হামলা করা। সেই লক্ষ্যে তারা ‘এক্সক্লুসিভ ডিভাইস’ বা আইডি তৈরি করার যন্ত্রাংশও সংগ্রহ করেছিল। দীর্ঘ নজরদারির পর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। আটকরা হলেন- মোহাম্মদ শিবলী আজাদ ওরফে শাদী, শাহ এম আসাদুল্লাহ মুর্তজা কবীর ওরফে আবাবিল, মাসরিক আহমেদ, মো. আশরাফুল আল আমীন ওরফে তারেক ও এস এম তাসমিন রিফাত। এদের মধ্যে মোহাম্মদ শিবলী আজাদ ওরফে শাদী ও শাহ এম আসাদুল্লাহ মুর্তজা কবীর ওরফে আবাবিল নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র শিক্ষার্থী। শুক্রবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকা থেকে নব্য জেএমবির ‘উলফ প্যাক’ গ্রুপের পাঁচ জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে। তারা সবাই শিক্ষার্থী এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তারা পুলিশের ওপর একটি হামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। হামলাটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল মোহাম্মদ শিবলী আজাদ ওরফে শাদী। বাকিরা তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছিল। শাদী হামলার জন্য ‘এক্সক্লুসিভ ডিভাইস’ বা আইডি তৈরি করার যন্ত্রাংশও সংগ্রহ করেছিল। সর্বশেষ রাজধানীর পল্টন ও খামারবাড়ি থেকে যে দুইটি আইডি উদ্ধার করা হয়েছিল, সেগুলোর সঙ্গে এসব যন্ত্রাংশের মিল রয়েছে। শাহ এম আসাদুল্লাহ মুর্তজা কবীর ওরফে আবাবিল একদিকে আধ্যাত্মিক নেতা এবং সে এই হামলার জন্য অর্থ যোগান করার চেষ্টা করছিল। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে, এরইমধ্যে এ হামলার জন্য কিছু অর্থ জোগাড় করেছিল। মাসরিক আহমেদের দায়িত্ব ছিল এ হামলার জন্য যশোর থেকে অস্ত্র সীমান্ত দিয়ে পারাপার করে নিয়ে আসা। আর বাকি দুইজন সদস্য সংগ্রহের জন্য চেষ্টা করে আসছিল। পুলিশের ওপর কেন হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পর পুলিশের হাতে সবচেয়ে বেশি জঙ্গি নিহত বা গ্রেফতার হয়েছে। সেই জায়গা থেকে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে তারা পুলিশের উপর হামলার পরিকল্পনা করছিল। এছাড়া, তাদের ধারণা পুলিশের উপর হামলা করলে সাধারণ মানুষ আরো ভীত হবে। মানুষ ভাববে, পুলিশের উপর হামলা প্রতিরোধ করতে পারছে না, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কিভাবে দেবে? আটক পাঁচজনের সঙ্গে এ পরিকল্পনায় আরো কয়েকজন জড়িত আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারলে আরও তথ্য জানা যাবে। তারা হামলার জন্য সুনির্দিষ্ট যে স্থান নির্ধারণ করেছিল, তা কৌশলগত কারণে আমরা বলছি না। আগে উদ্ধারকৃত দুইটি আইডির সঙ্গে তাদের কোনো যোগসাজশ আছে কিনা সেটা আমরা তদন্ত করে দেখছি। কাশ্মীর ও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেকোনো আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ জঙ্গিদের অনেক সময় উৎসাহিত বা অনুৎসাহিত করে। নিউজিল্যান্ডের হামলার পর শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলা হয়। এই হামলাটিকে বিশ্বের ‘জঙ্গিবাদ বিশেষজ্ঞ’রা বলে থাকেন যে নিউজিল্যান্ডের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে শ্রীলঙ্কায় হামলা করা হয়েছে। এই দুটি ঘটনার পর বাংলাদেশে ঈদের আগে জঙ্গি হামলার ঝুঁকি ছিল। কিন্তু এটা আমরা সফলভাবে প্রিভেন্ট করতে পেরেছি। সর্বশেষ কাশ্মীরের ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়, সে বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করাটা সমুচিত হবে না। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে যাতে জঙ্গি রিক্রুট না হতে পারে সেই বিষয়ে নজরদারি রয়েছে। এছাড়া, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে জঙ্গি রিক্রুট হওয়ার মত পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি বলেও মনে করছেন সিটিটিসি প্রধান।