লার্ভা মিলছে প্রত্যন্ত এলাকায়
ঈদের আনন্দে মানুষ ডেঙ্গু ভুলে গেছে
বিনামূল্যে অ্যারোসল বিতরণ মেয়র খোকনের
মুগদায় ২ দিনে ২১৬ নতুন রোগী
বরিশালে রেকর্ড সংখ্যক রোগী ভর্তি
সিরাজগঞ্জে আক্রান্ত ২৫০ ভর্তি ৮৪
মহসীন আহেমদ স্বপন : রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আবার বেড়েছে। গত তিনদিন ৭, ৮ ও ৯ আগস্ট যথাক্রমে ২৪২৮, ২৩২৬ ও ২০০২ জন আক্রান্তের সংখ্যা থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় শনিবার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২১৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১০৬৫ জন ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ১১১১ জন ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ১ জানুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা ৩৮ হাজার ৮৪৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছে ২৯ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ২৯ হাজার ৩৯৫ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৯ হাজার ৪২০ জন।
রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ৪০টি হাসপাতালে পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ৭ আগস্ট ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৭৫। ৮ আগস্ট তা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৫৯ জন ও ৯ আগস্ট তা আরও কমে ৯৪৭ জনে দাঁড়ায়। তবে শনিবার আবার তা বেড়ে ১০৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
একই সময়ে ঢাকার বাইরে ৭ আগস্ট রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৫৩ জন। ৮ আগস্ট রোগীর সংখ্যা ১৪ জন কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৬৭ জনে। ৯ আগস্ট রোগীর সংখ্যা আরও কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৫ জনে এবং আজ শনিবার (১০ আগস্ট) তা বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ১১১ জনে দাঁড়িয়েছে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৫৩ জন, মিটফোর্ডে ৬৩ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৭৮ জন, বিএসএমএমইউতে ৩০ জন, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ১৪ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১৩ জন, বিজিবি হাসপাতাল পিলখানা ঢাকায় ২ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩৪ জন এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৭২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা শহর ছাড়া ঢাকা বিভাগে ২৭৭ জন, চট্টগ্রামে ২২৬ জন, খুলনায় ১২৬ জন, রংপুরে ৭১ জন, রাজশাহী ১১৪ জন, বরিশালে ১৭৮ জন, সিলেটে ৩২ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
ডেঙ্গুর লার্ভা মিলছে প্রত্যন্ত এলাকায় : দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু মশা ও লার্ভার সন্ধান মিলেছে। লাগামহীনভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ঈদের ছুটিতে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
ফেনীতে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু রাজধানী থেকে নয়, স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান রোগীরা। জেলায় ৭৮ জন ডেঙ্গু রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে।
ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. মো. নেয়াতুজ্জামান বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় পর্যাপ্ত কিট মজুদ করা রয়েছে। কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে আমি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।
এদিকে, সাতক্ষীরা পৌরসভার সুলতানপুর এলাকায় ডেঙ্গু মশার সন্ধান মিলেছে। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের সময় পৌরসভার নেতাই পালের বাড়ির টবের পানিতে এডিস মশা ও লার্ভা পাওয়া গেছে। কুড়িগ্রামে ৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। ঈদের ছুটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. এস এম আমিনুল ইসলাম বলেন, যারা জ্বর নিয়ে আসছেন তাদের আমরা রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছি। সেই ব্যাপারে আমাদের ল্যাবরেটরি সার্বক্ষণিক খোলা রয়েছে। দক্ষিণের জেলা বরিশালে ১৬ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৬০৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৮৪ জন।
ঈদের আনন্দে মানুষ ডেঙ্গু ভুলে গেছে : সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঈদের আনন্দে মানুষ ডেঙ্গু ভুলে গেছে। এবার আমি টার্মিনালগুলোতে মানুষের চাপ বেশি দেখছি। বাঙালি জাতি ভয় করে না, ভয়কে জয় করতে জানে।
রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে শনিবার পরিচালিত মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম পরিদর্শনকালে তিনি এ দাবি করেন।
এ সময় রাস্তায় কোনও সমস্যা নেই দাবি করে তিনি বলেন, বেহাল সড়কের কারণে কোথাও যানজট হয়েছে, এমন তথ্য আমার কাছে নেই। পরশু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া গেছে, তার কারণে যে গাড়িগুলো আটকে ছিল, সে প্রেসারটাও ওই রাস্তার ওপর দিয়ে গেছে। কোরবানির ঈদে না চাইলেও পশুবাহী গাড়ির জন্য রাস্তা ধীর গতির হয়ে যায়। ধীর গতির জন্য গাড়িগুলো আসতে দেরি হচ্ছে। এজন্য টার্মিনালে অনেক যাত্রী বসে কষ্ট পাচ্ছেন।
বিনামূল্যে অ্যারোসল বিতরণ মেয়র খোকনের : নগরের বাসিন্দারা অনুমতি দিলে তাদের বাসায় গিয়ে এডিস মশা ধ্বংস করতে স্প্রে করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। শনিবার ডিএসসিসির নগর ভবনের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ অডিটরিয়ামে পৌরকরদাতাদের মাঝে বিনামূল্যে অ্যারোসল স্প্রে ক্যান বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। মেয়র খোকন বলেন, এডিস মশার প্রাদুর্ভাব শুধু বাংলাদেশে নয়, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইনসহ ১২৬টি দেশে রয়েছে। এডিসের বিরুদ্ধে আমরা মার্চ মাস থেকে কাজ শুরু করেছি, যা এখনও চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) পরামর্শ অনুযায়ী এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছি, সে অনুযায়ী কাজ চলছে। এডিস মশা বাইরে থেকে আসে না; এটা বাসার ভেতরে, ফুলের টবে, খাটের ভেতরে বাসা বাঁধে, জমে থাকা পানিতে ডিম দেয়। এজন্য আমরা চেষ্টা করছি বাসাগুলোতে কাজ করার। আমরা এক লাখ ৬৩ হাজার করদাতাকে বিনামূল্যে অ্যারোসল স্প্রে বিতরণ করবো। তাছাড়া আপনারা (বাড়ির মালিক) যদি অনুমতি দেন, তাহলে বাসায় গিয়ে স্প্রে করে আসবো। দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আমরা সবার সহযোগিতা চাই। সবার প্রচেষ্টায় আমরা এ শহরকে ডেঙ্গুমুক্ত করতে চাই। ডিএসসিসি মেয়র বলেন, আমরা নিজ উদ্যোগে ২৫ হাজার ৯৯৬টি বাসা চিহ্নিত করেছি, যার মধ্যে ৮২৩টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় যেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন ও স্কাউটের সমন্বয়ে এক লাখ ১০ হাজার ৭৬৫টি বাসা চিহ্নিত করা হয়েছে, এর মধ্যে ৬২ হাজার ২৩৭টিতে লার্ভা পাওয়া গেছে, সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। নগরবাসীর উদ্দেশে মেয়র বলেন, ঈদুল আজহায় আপনারা নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই করবেন, আপনাদের বিনামূল্যে বস্তা, ব্লিচিং পাউডার সরবরাহ করা হবে। আপনাদের সহযোগিতা পেলে ১ সেপ্টেম্বরের আগেই একটি সুন্দর, ডেঙ্গুমুক্ত নগর উপহার দিতে পারবো। ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. শরীফ আহমেদ, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক এয়ার কমোডর জাহিদ হোসেন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরকার, সিটি কর্পোরেশনের সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার প্রমুখ।
মুগদায় ২ দিনে ২১৬ নতুন রোগী : দুপুর ২ টা। মুগদা ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. খায়রুল আলম নিজ কক্ষে দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সামনে ভাতের প্লেট। হটপট টিফিন বক্সের ঢাকনা এখনও খোলেননি। এরই মধ্যে একজন সংবাদকর্মীর আগমন।
বুক পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ বের করে বলতে শুরু করলেন, এই মুহূর্তে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৫৫৩ জন। এর মধ্যে মেডিসিন ওয়ার্ডে ৪২৭ জন, শিশু ওয়ার্ডে ১০০ জন, কেবিনে ২৪ জন, সার্জারি ইউনিটে ২ জন। গ্র্যান্ড টোটাল ১,৭১৫ জন।
দুই দিন আগে সর্বমোট ডেঙ্গু রোগী ছিল ১৪৯৯ জন। অর্থাৎ গত দুই দিনে মুগদা ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ২১৬ জন। সঙ্গত কারণেই চিকিৎসক, নার্স, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারীরা বলছেন- দিন যত যাচ্ছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ততই বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। রোগীর আত্মীয় স্বজনরা তো বটেই, ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করা প্রতিটা মানুষ রয়েছেন শঙ্কার মধ্যে। কবে নাগাদ এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে, তা কেউ জানে না।
সাধারণত, ঈদ, পূজা, বড়দিনের মত প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবে হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় থাকে কম। বেশিরভাগ চিকিৎসক-নার্স, কর্মচারী-কর্মকর্তা থাকেন ছুটিতে। বিশেষ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা আগে-ভাগেই চলে যান ঢাকা অথবা দেশের বাইরে। ঈদ উদযাপন করেন পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে।
কিন্তু এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ডেঙ্গু এবং বন্যার কারণে সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ঈদের ছুটি বাতিল। বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ ছুটি পাবেন না। সরকারের এ নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে বাধ্য সরকারি প্রত্যেক কর্মচারী।
সে কারণেই হয়তো গত ১৫ দিনে একটি বারের জন্যও মুগদা হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. খায়রুল আলম তার দফতর ছাড়েননি। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও তিনি হাসপাতালে উপস্থিত। শুক্র-শনিবারও অফিস করছেন ডা. খায়রুল আলম। ডেঙ্গুর প্রতি মুহূর্তের আপডেট অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করছেন। জানিয়ে দিচ্ছেন গণমাধ্যমকে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে কি না? শনিবার দুপুরে এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. খায়রুল আলম বলেন, ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে এই মুহূর্তে ৫৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি। গত দুই দিনে নতুন ভর্তি হয়েছে ২১৬ জন। এটাকে তো আর উন্নতি বলা যায় না। গত দেড় মাস ধরে ডেঙ্গু রোগীর সেবা দিতে দিতে মুগদা হাসপাতালের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে ২৭ জন নার্স ও ৭ চিকিৎসক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার নতুন করে আরেকজন নার্সও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। রোগীর চেয়ে জনবল কম হওয়ায় মুগদা হাসপাতালে নার্সরা পড়েছে সব চেয়ে বেশি বিপাকে। শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেডিসিন ওয়ার্ডে ৫০০ রোগীকে সেবা দিচ্ছেন মাত্র ১১ জন নার্স। ৪২৭ জন ডেঙ্গু রোগী ও ৭৩ জন সাধারণ রোগীর সেবা দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে নার্সদের। সাপ্তাহিক ও ঈদের ছুটি— সবকিছু ভুলে গিয়ে টানা ডিউটি করছেন তারা। মেডিসিন ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্য রাহেলা বেগম বলেন, আমাদের কোনো ঈদ উৎসব নেই। কাঁধের ওপর আছে কেবল দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালন করছি। বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এদিকে শনিবার পর্যন্ত মুগদা হাসপাতালে মোট ১,৭১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন ১ হাজার ১৪৯ জন, মারা গেছে ১৩ জন। আর এই মুহূর্তে ভর্তি আছেন ৫৫৩ জন।
বরিশালে রেকর্ড সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি : বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে দিন দিন ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগীর ভর্তির সংখ্যা বেড়েই চলছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তে ভর্তি হয়েছেন ৯৮ জন রোগী। শনিবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ৩৪০ জন ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন দেখা যায়। যাদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৯৮ জন। দেশব্যাপী চলমান ডেঙ্গু রোগের প্রকোপে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। একই অবস্থা বরিশালেও। তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরুর পর থেকে গত ২৪ ঘণ্টাতেই হাসপাতালে এত বেশি সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া হাসপাতালে একত্রে এত রোগী চিকিৎসাধীন থাকার বিষয়টিও প্রথম। হাসপাতালের হিসাব অনুযায়ী, শনিবার হাসপাতালটিতে ৩৪০ জন ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ১৭৯ জন পুরুষ, ১০৮ জন মহিলা ও ৫৩ জন শিশু রয়েছে। এর আগে এ হাসপাতালে গত শুক্রবার ২৭৫ জন, বৃহস্পতিবার ২৫৭ জন ও বুধবার ২৩৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর আগে এ সংখ্যা আরও কম ছিলো। হাসপাতালের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট ৯৮ জন রোগীর মধ্যে পুরুষ ৫২ জন, নারী ২৬ জন ও শিশু ২০ জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিলো ৮৪। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন অর্থাৎ হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে ৩৩ জন রোগীকে। গত শুক্রবার এ সংখ্যা ছিলো ৬৬। এদিকে গত ১৬ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট সকাল পর্যন্ত শেবাচিম হাসপাতালে মোট ৭০২ জন ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। যাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৬২ জন ও মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। হাসপাতালের পরিচালন ডা. বাকির হোসেন বলেন, ঈদের আগমুহূর্তে রোগীর সংখ্যা বাড়াটা শঙ্কার। কারণ এখন মানুষ গ্রামের বাড়িতে ফিরছে আর রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। তবে আমরা আগাম সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আশা করি, চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হবে না। তিনি আরও বলেন, আমি বলবো ঈদে ছুটি, ডাক্তার থাকবে কি না এ চিন্তা না করে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে সরাসরি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে যান। আমরা সবসময় মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। কোনোভাবেই ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্তদের সেবা ব্যাহত হবে না। এ চিকিৎসক বলেন, এখন পর্যন্ত শেবাচিম হাসপাতালে ৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। যারা মুমূর্ষু অবস্থায় অর্থাৎ শেষ মুহূর্তে আমাদের কাছে এসেছিলেন। আমরা বলবো, শরীরে জ¦র বা ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিৎ। এদিকে হাসপাতালে ভর্তিরত রোগীরা জানান, ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে আসার পরপরই চিকিৎসক-সেবিকারা তাদের কার্যক্রম ও সহায়তা শুরু করে দেন। কিন্তু সরকারিভাবে সব ওষুধ পাওয়া যায়না। তাই বাইরে থেকে স্যালাইনসহ অনেক কিছুই কিনতে হচ্ছে তাদের। পাশাপাশি জায়গা সংকটও রয়েছে প্রচুর, যারমধ্যে ডেঙ্গু রোগী হলে আয়া-বুয়ারা কোনো ধরনের সহায়তা করেন না।
সিরাজগঞ্জে আক্রান্ত ২৫০, ভর্তি ৮৪ : সিরাজগঞ্জে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৮৪ জন। এ নিয়ে গত ১৮ দিনে জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২৫০ জনে। সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মির্জা মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, জেলায় এ পর্যন্ত ২৫০ জন মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় (গত শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত) ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ জন, এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয়জন, সিরাজগঞ্জ শহরের নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয়জন। সর্বমোট চিকিৎসাধীন ৮৪ জন। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ডেঙ্গু সচেতনতায় সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রচারপত্র বিতরণ ও ব্যানার টানানো হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে প্রচার, মিছিল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।