কলকাতার আদলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী ঢাকা রাজধানী রাজনীতি স্বাস্থ্য

বিশেষ প্রতিবেদক : চারদিকে ডেঙ্গু আতঙ্ক। প্রতিদিনই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে মানুষ। এ অবস্থায় ডেঙ্গু মোকাবিলাসহ মশক নিধনে এবং পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। কলকাতার আদলে তিন স্তরে ডেঙ্গু প্রতিরোধের পরিকল্পনাও করা হয়েছে।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে শহরের প্রতিটি অলিগলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি কলকাতার ডেপুটি মেয়রের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বিনিময়ে আলোচনা করেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। যার ধারাবাহিকতায় কলকাতার মতো তিন স্তরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছে ডিএনসিসি।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী সারাবছরই সব অলিগলি ও জনবহুল সব স্থানে নিয়মিতই পরিচালিত হবে মশক নিধন কর্মসূচি। সেইসঙ্গে ঢাকা থেকে পাঁচ সদস্যের একটি টিম কলকাতায় পাঠানো হবে। যারা সরেজমিন সেখানকার ডেঙ্গু দমন প্রক্রিয়া দেখে ফিরে এসে মেয়রের কাছে প্রতিবেদন পেশ করবেন। সেই আলোকে আরও যেসব ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেগুলো গ্রহণ করবে ডিএনসিসি।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মশক নিধনে গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। মশক নিধন কর্মীরা সাধারণত পিঠে মশক নিধন ওষুধের সিলিন্ডার বহন করে হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন জায়গায় ওষুধ প্রয়োগ করেন। এটি একদিকে সময় সাপেক্ষ, অন্যদিকে শ্রমসাধ্যও বটে।
যে কারণে সম্প্রতি মেয়র আতিকুল ইসলামের উদ্যোগে মোটরবাইকে মশক নিধনযন্ত্র স্থাপন করে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে ১০টি অঞ্চলের প্রতিটিতে একটি করে মোটরবাইক কাম মশকনিধন যন্ত্র দেয়া হয়। প্রতিটি বাইকে ২ জন কর্মী থাকবেন। একজন বাইকটি চালাবেন, অন্যজন পিছনে বসে মশার ওষুধ প্রয়োগ করবেন। প্রতিটি বাইকের মাধ্যমে ঘণ্টায় প্রায় সোয়া দুই কিলোমিটার ওষুধ প্রয়োগ করা যাবে।
মশক নিধন কর্মীরা ঠিকমতো ওষুধ ছিটায় না, নগরবাসীর এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাই এসব মশক নিধন কর্মীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকার বাসিন্দারা এখন নিজেরাই জেনে নিতে পারবেন নিজ নিজ এলাকার মশক ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বিস্তারিত। এসব কর্মীদের নাম ও মোবাইল নম্বরের পাশাপাশি তাদের তদারককারী কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর যুক্ত করা হয়েছে ডিএনসিসি’র ওয়েবসাইটে। মশককর্মীরা ঠিক সময়ে এবং যথাযথ উপায়ে মশক নিধনের ওষুধ দিয়েছেন কি-না তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে নির্ধারিত সাতজন নাগরিক প্রতিনিধি। ওষুধ বিতরণের পর এদের মধ্যে অন্তত চারজন প্রতিনিধির স্বাক্ষর নিতে হবে মশককর্মীদের।
ডিএনসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই প্রক্রিয়ার ফলে নাগরিকেরা নিজেরা আগে থেকে অবগত থাকতে পারছে যে, মশক নিধন কর্মীরা কোনোদিন কোন এলাকায় কাজ করবে? কোনো অসঙ্গতি পেলে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবে। পাশাপাশি ডিএনসিসি একটি অ্যাপ তৈরি করতে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে যাতে মশক ওষুধ ছেটানোর যন্ত্রগুলোতে চিপ বসানো হবে। এসব চিপ থেকে জানা যাবে যে, কোন এলাকায় কোন সময়ে কতটুকু ওষুধ মশককর্মীরা দিয়েছেন। সব তথ্য সরাসরি অ্যাপে চলে আসবে। কোন এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি এমন অভিযোগ তদন্তে এবং মশক নিধন কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি-না তা তদারকি করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে সাত সদস্যের একটি করে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি হবে। কমিটিতে স্থানীয় সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, ঈমাম, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন হবে।
ডিএনসিসি সূত্র জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী অতি দ্রুততার সঙ্গে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমকে ম্যানুয়াল পদ্ধতি থেকে ম্যাকানিক্যাল পদ্ধতিতে নিয়ে যাওয়া হবে। ক্রমান্বয়ে এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হবে। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সঠিকভাবে কম সময়ে ও কম খরচে বাস্তবায়ন করতে হাতের ঝাড়ুর পরিবর্তে মেশিনের ঝাড়ু আনা হবে।
এদিকে গত ২০ আগস্ট থেকে ওয়ার্ডভিত্তিক এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসকরণ ও বিশেষ পরিচ্ছন্নতায় চিরুনি অভিযান শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
অভিযানটি ১৯ নম্বর ওয়ার্ড (গুলশান ও বনানী এলাকা) থেকে শুরু হয়। এ ওয়ার্ডকে ১০টি ব্লকে ভাগ করে প্রতিটি ব্লককে ১০টি সাব-ব্লকে ভাগ করা হয়। প্রতিদিন ১টি ব্লকের ১০টি সাব-ব্লকের প্রতিটি বাসা-বাড়ি, প্রতিষ্ঠান, খোলা জায়গা ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার ও এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করা হবে। এভাবে ১০ দিনে এ ওয়ার্ডটি সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার এবং এডিস মশার লার্ভা নির্মূল করা হবে। ডিএনসিসির অন্যান্য ওয়ার্ডেও পর্যায়ক্রমে এ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এসব বিষয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করতে এসে আমরা শিখেছি যে এটা শুধু কোনো মৌসুমের কাজ নয়। বরং এটি সারাবছর ৩৬৫ দিনের কাজ। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি তবে আমাদের লোকবল সংকট আছে।
তিনি আরও বলেন, ডিএনসিসির এলাকা থেকে ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা নিধন না হওয়া পর্যন্ত আমরা সার্বিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। মশক নিধন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে আমরা স্থানীয়দের অন্তর্ভুক্ত করে কাজ করব। স্থানীয়দের পরামর্শ গ্রহণ ও আমাদের কর্মীরা ঠিকমতো কাজ করছে কি-না তার দায়িত্ব দেয়া হবে। তাদের দেয়া রিপোর্টের মাধ্যমেই কেবল তাদের বেতন দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। হেঁটে হেঁটে মশা মারার পরিবর্তে কম সময়ে অধিক স্থানে ওষুধ ছিঁটাতে মোটরসাইকেলে ওষুধ ছিটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহিতার তবে অতি দ্রুতই কিভাবে পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়নের সুফল মেলে তার ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছে ডিএনসিসি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *