*সময় মতো ওষুধ না কেনার দায় এড়াতে পারে না দুই সিটি
*ডেঙ্গু-চিকনগুনিয়া প্রতিরোধে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে
*ওষুধ কেনার বিষয়টি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ফেলে দেয়া হয়
নিজস্ব প্রতিবেদক : এডিস মশা নিধনে সময় মতো কার্যকরী ওষুধ না কেনার দায় ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ উভয় সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টরা এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
আদালতে সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়রা ফাইরোজ।
শুনানিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দাখিল করা প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতীয় কোম্পানি থেকে আনা নতুন দুই ধরনের মশার ওষুধ আনা এবং গত ১০ আগস্ট থেকে তা বিভিন্ন এলাকায় ছেটানো হচ্ছে।
অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়াসহ এই ধরনের অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে।
আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে হাইকোর্টকে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে আসার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
এসব প্রতিবেদনের বিষয়ে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, সরকারিভাবে ওষুধ আনার বিষয়ে আমরা (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন) আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এ বিষয়টিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ফেলে দেওয়া সংশ্লিষ্টদের উচিৎ হয়নি। এর কারণে আদালতের আদেশের পরও সাতদিন আমরা ওষুধ ছেটাতে পারিনি। এর মধ্যে আবার কোরবানির ঈদ চলে আসে। সিটি করপোরেশনের দায়িত্বও তখন বেড়ে যায়। তাদের অনেক কাজ করতে হয়। অথচ মশার ওষুধ আনতে সরকার সরাসরি উদ্যোগ নিলে মাত্র তিনদিন সময় লাগতো।
এরপর আদালত এডিস মশা নিধনে ওষুধ আনার প্রক্রিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের কর্মকা- নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সময় মতো কার্যকরী মশার ওষুধ না কেনার দায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি সরকারও এড়াতে পারে না। ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যর্থতায় কারা দায়ী সে বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা যায় কি না, সে বিষয়ে আমরা আগামী বুধবার আদেশ দেবো।
এর আগে গত ১৪ জুলাই আদালত তার আদেশে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মেয়র, নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
একই সঙ্গে নাগরিকদের ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়া বন্ধ করতে এবং এডিস মশা নির্মুলে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত।
পরে গত ২২ জুলাই মশার বিষয়ে দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কিন্তু ওই প্রতিবেদনে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তলব করেন। পরে গত ২৫ জুলাই তারা সশরীরে হাজির হয়ে আদালতে ব্যাখ্যা দেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ মামলাটি শুনানির জন্য ছিল।