আমরা ”হেলমেট” পরে এয়ারপোর্ট পাহারা দিচ্ছি যাতে নেতারা শ্রীলংকা ছেড়ে পালাতে না পারে -একজন বিক্ষোভকারী !

Uncategorized আন্তর্জাতিক

কুটনৈতিক প্রতিবেদক ঃ শ্রীলংকার পদত্যাগ করা মন্ত্রীরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে তার জন্য এয়ারপোর্ট ঘিরে রেখেছে সাধারণ জনতা।যাদের অধিকাংশই হেলমেট পরিহিত।অন্যদিকে রাজাপাকসের অবস্থান করা নৌঘাটিতেও অবস্থান করছে হেলমেট পরা জনতা ! সাম্প্রতিক সময়ে রাজাপাকশে পদত্যাগের পর থেকে শ্রীলংকায় বেড়েছে৷ ‘সহিং-সতা”..এমতাবস্থায় আইএমএফ এবং ডব্লিউ বি সহ ভারতের মত দেশগুলি যারা শ্রীলংকাকে অর্থ সহায়তা দেয়ার কথা ভাবছিল তারাও কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দে উপনীত হয়েছে। রাজনৈতিক আক্রমণ ক্ষোভের বহি:প্রকাশ হলেও তা শ্রীলংকার পরিস্থিতি বিশ্ব-অংগনে আরো খারাপ করছে যার ফলাফল হতে পারে আন্তর্জাতিক ভাবে প্রাপ্ত অনুদানগুলোতে আরো কঠিন শর্তারোপ। হিসেব অনুযায়ী শ্রীলংকার অর্থনীতির করুন অবস্থা নতুন কিছু নয়। ২০০৯ সাল থেকেই শ্রীলংকানরা এই পরিস্থিতির সাথে পরিচিত। আন্তর্জাতিক ভাবে চীনকে শ্রীলংকার খারাপ অবস্থার জন্য দায়ী করা হলেও শ্রীলংকার বৈদেশিক লোনের কিছুটা অংশই চীনের নিকট দায়বদ্ধ।তাই একচেটিয়া ভাবে চীনের উপর যেমন দায় দেয়া বোকামী তেমনি করোনা পরবর্তী এবং করোনাকালীন সময়ে ব্যবসা কে ইন্টেন্সিভ না দেয়া এর অন্যতম একটি কারন। প্রত্যেকটি দেশের ব্যবসায়ীরা দেশের ইকোনমিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।একচেটিয়া ব্যবসা কিংবা নিজের আখের গুছানো নিয়ে ব্যস্ত হলেও মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে ব্যবসা বন্ধ হওয়ার মানেই হলো দেশের ক্ষতি হওয়া।তাই বড় ধরনের ঝামেলা হলেও ভারতে টাটা কিংবা রিলায়েন্স এর মত কর্পোরেটদের পুজো করা হয়।আর বাংলাদেশেও তাই।এর মুল কারন দেশের ইকোনমিতে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ।ব্যবসায়ীদের রেভিনিউ দেশের সরকারের ভিতরেই তাদের আরেক শক্ত সরকার গঠন করতে সাহায্য করে।
একের পর এক অবিবেচক লোন নিয়ে শুধুমাত্র ট্যুরিজম এর উপর নির্ভর করাও শ্রীলংকাকে ভুগিয়েছে। কারন বেশ কিছু বোমা হামলা,বৌদ্ধ-মুসলিম সাম্প্র-দায়িক অস্থিতিশীলতা শ্রীলংকার আগের সম্মানকে পুন:প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি।
অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে শ্রীলংকার তুলনা করা সম্ভব না।শ্রীলংকার মত অবস্থায় যেতে হলে পাকিস্তানের মত হতে হবে বাংলাদেশকে। হিসেব অন্তত তাই বলে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় নেপাল,পাকিস্তান শ্রীলংকার পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।তাই জনবিক্ষোভ বাংলাদেশে না হয়ে এই দুটি দেশেই হওয়ার সম্ভাবনা বেশ অনুমেয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় হওয়ার পাশাপাশি আমাদের রপ্তানী লক্ষ্যমাত্রা এ বছর রেকর্ড ছুয়েছে।অন্তত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রিপোর্ট এবং আই এম এফ এর অনুমান তাই বলে।
প্রবাসীদের রেমিটেন্স,রপ্তানী আয় এবং দেশের অভ্যন্তরে আয় বাড়লেও আমদানীও বেড়েছে। অন্যদিকে রিজার্ভ করলেও প্রবাসীদের ইন্টেন্সিভ দিতে এবং ব্যবসাকে আরো শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার মুল্য হেরফের করে যাচ্ছে।৭.২৫% অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা হয়েছে এ বছরের প্রথম ৪ মাসে যা আগের বছর ছিল ৪.৫ ভাগ
অভ্যন্তরীণ প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে এবং আরো প্রকল্প নেয়া হচ্ছে,বাড়ছে সরকারের ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার প্রবনতা।
অবশ্য ব্যাংকে থাকা অলস টাকাকে সরকারী খাতে ব্যয় করা উচিত কিন্ত এক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।
এপ্রিল ২০২২ এর বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী করোনার পর বাংলাদেশে যে ব্যবসায়িক স্থবিরতা ছিল তা হঠাত করে কেটে গিয়েছে। আইএমএফ কিংবা ডব্লিউ বি অবশ্য এটি কাটবে না বলেই পূর্বাভাস দিয়েছিল।কিন্তু বাংলাদেশের এই অনিশ্চিত অগ্রযাত্রা নিয়ে তাদের রিপোর্টেও বেশ বিস্ময় প্রকাশ করা হয়। তবে এখনো বিশ্বব্যাংক মনে করে বাংলাদেশের সামনে বড় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।সরকারী স্বচ্ছতা,রাজস্ব আদায়ে দুর্বলতা,স্থানীয় সরকার কাঠামোর দুর্বলতা যার অন্যতম। একথা সত্য আমাদের সতর্ক থাকা উচিত,তবে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তর ইকোনমি বাংলাদেশ এখনো শ্রীলংকার মত দশকব্যপী গৃহযুদ্ধ করেনি,কিংবা নেপালের মত শুধু ট্যুরিজমের উপর নির্ভরশীল থাকেনি অথবা পাকিস্তানের মত পোর্ট করে চীনের হাতে তুলে দেয়নি।
তাই বাংলাদেশ হবে শ্রীলংকা তা অলীক একটি কল্পনা মাত্র,তার আগে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পাকিস্তান হতে হবে এ ব্যপারে কোন সন্দেহ নেই।

ছবিতে শ্রীলংকান এমপি এবং প্রধানমন্ত্রী যেন দেশছেড়ে পালাতে না পারে তার জন্য এয়ারপোর্টের বাইরে ”হেলমেট পড়ে”অবস্থান করছেন সাধারণ শ্রীলংকান এবং বিরোধীপক্ষরা।


বিজ্ঞাপন