বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি কোন সমাধান নয়

Uncategorized অর্থনীতি

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ঃ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য গনকমিশনের শুনানি চলছে।এরই মধ্যে ক্ষেত্রবিশেষে ৫০% দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবনা উঠেছে।পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীগুলোও দাম বৃদ্ধিতে অনাগ্রহী নয়।কেননা বিদ্যুত উৎপাদনের পর এই কোম্পানী গুলোই জেলা,বিভাগ,শহর,গ্রাম ভেদে কাংখিত গ্রাহকের হাতে বিদ্যুত বিল পৌছে দেয়

এরই মধ্যে ২০২১ সালের শীত মৌসুমে ডেসকো মাস প্রতি লস করেছে ৯ কোটি টাকার বিদ্যুত।

গরমে যার পরিমাণ প্রতিমাসে ১৫-১৮ কোটি টাকা।যার অর্থ দাঁড়ায় পুরো বছরে ঢাকার একাংশের পাওয়ার সাপ্লাই দেয়া ডেসকোর লস ১৫০ কোটি টাকা।

পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীগুলোর সিস্টেম লস দিনশেষে সাধারণ জনগনের পকেটের টাকায় শোধ দিতে হয়।শুধু খোদ ডেসকো নয় দেশের সকল পাওয়ার সাপ্লাইকারী ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী এবং পল্লীবিদ্যুত বিদ্যুত সরকার থেকে ক্রয়ের পর ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহ করে থাকে।

দেশের প্রান্তিক এবং সাধারণ জনগোষ্ঠী বিদ্যুত চুরির সাথে জড়িত নয়।আধুনিক মিটারি সিস্টেম এবং প্রি পেইড মিটারের এ যুগে বিদ্যুত চুরি একটি অসম্ভব বিষয় হওয়া সত্বেও দেশে চলমান ইলেকট্রিক রিকসা এবং ইজিবাইকের বড় অংশের চার্জিং বিদ্যুত অবৈধ।

সাধারন বাড়ির সংযোগ নিয়ে গ্যারেজে চার্জিং করা নতুন কিছু নয়।এতে ক্ষতি হয় ভোক্তা পর্যায়ে,বাড়ে বিদ্যুতের খরচ,কমে বিদ্যুত সরবরাহের মান।

দিনের পর দিব খেলাপী হতে থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যুত চুরি তথা সিস্টেম লসের মাধ্যমে প্রতি বছর সরকারের বিদ্যুত খাতে নুন্যতম লস ২৫০০ কোটি টাকার চাইতেও বেশী।

অথচ,বছর শেষে বিদ্যুত খাতে সরকারের ভর্তুকি বেড়েছে,নেয়া হয়েছে নতুন বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের কাজ এবং দরকারে ফার্নেস তেল পুড়িয়ে হলেও বিদ্যুত পরিষেবা নিরবিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করছে সরকার।

পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীগুলো বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে অতিরিক্ত অর্থ নিজের পকেট থেকে দিতে নারাজ,এ অর্থ আদায় হবে জনগন থেকে।অথচ সিস্টেম লস দূর করা এবং ট্রান্সমিশন লাইনের উন্নয়নের কাজ চলছে ধীমেতালে।

১০ শতাংশের ও বেশী সিস্টেম লসে থাকা জাতীয় বিদ্যুত পরিষেবার খরচের হার বছর শেষে বাড়ছে।দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান যত বাড়বে মাথাপিছু বিদ্যুত ব্যবহার ও বাড়বে।তবে বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের মাথাপিছু বিদ্যুত ব্যবহারের হার এখনো যথেষ্ট কম।

অধিকাংশ বাংলাদেশী বিদ্যুত বিল কম রাখতে বিদ্যুত সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন।এল ই ডি বাতির প্রচলন দেশের এনার্জি সেক্টরে এক নীরব বিপ্লব এনেছে।গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুত সেবার প্রাপ্তি নিয়ে যেমন তৃপ্তি রয়েছে তেমনি দুর্বল ট্রান্সমিশন লাইন এবং সিস্টেম লসের গ্যাড়াকলে শুধুমাত্র বিদ্যুতের দাম বাড়ানোই কোন সমাধান হতে পারেনা।

বাংলাদেশে বিদ্যুতের মুল্য এশিয়ার অনেক দেশের চাইতে কম যার মুল কারন সরকারের ভর্তুকি।বছর শেষে কোন সেবার দাম বাড়ে চাহিদা এবং প্রাপ্তির যোগান সমান না হলে।আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার ডামাডোলে এনার্জি সেক্টর বর্তমানে এক অস্থির অবস্থা পার করছে।

দেশের শতভাগ বিদ্যুতায়নের পর এখন নতুন চ্যালেঞ্জ হওয়া উচিত সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি সরকারের লস হওয়া হাজার কোটি টাকাকে মেইন ফ্লো তে নিয়ে আসা।

শুধুমাত্র বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সেবার উন্নয়ন সম্ভব না,এবং তা দীর্ঘমেয়াদে কোন সমাধান ও না।দামের সমন্বয়ের পাশাপাশি বিদ্যুতের লস কমানো এবং তা শুন্যের কোঠায় না হলেও ৫% এর নীচে নামিয়ে আনা জরুরী।

রিনিউয়েবল খাত সহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী গুলোকে সিস্টেম লস কমানোর উপর জোর দিতে হবে।প্রান্তিক পর্যায়ে বেসরকারি সোলার সিস্টেমের বেলায় বাংলাদেশে ৫০ লাখের বেশী সোলার ইলেকট্রিসিটি ব্যবহারকারী আছে এবং প্রাইভেট সোলার ব্যবহারে ২০১৯-২০২০ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ১ম সোলার বিদ্যুত ব্যবহারকারী দেশ ছিল।সে হিসেবে রিনিউয়েবল এনার্জীর একটি বড় ক্ষেত্র বাংলাদেশ।

ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই এবং ইলেক্ট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন করার এফিসিয়েন্সী কোনভাবেই সিস্টেম লস কমানো ছাড়া আনা সম্ভব নয়।একই সাথে সিস্টেম লসের দায় আইনগতভাবে ভোক্তার উপর চাপিয়ে দেয়ার কোন সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই।

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি শুধু ভোক্তা পর্যায়েই নয় সৎ ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার ক্ষেত্রকেও কমিয়ে আনে।উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির দায় দিনশেষে ভোক্তার পর পড়তে থাকলে ইকোনমিকে তা আকারে ছোট করে।

অর্থনীতি বড় হবার মুল উদ্দেশ্য এবং মাপকাঠিই হলো প্রোডাক্ট কনজামশন।যদি ছোট একটি অর্থনীতিও থাকে তাও অধিক প্রোডাক্ট কনজামশন সে অর্থনীতিকে বড় করে,অন্যদিকে বড় অর্থনীতি হওয়া সত্বেও যদি প্রোডাক্ট কনজামশন সীমিত হয় তবে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও সংকুচিত হয়ে আসে।
এই দুয়ের মাঝে ব্যালেন্স ছাড়া কাংখিত সমৃদ্ধি কখনই সম্ভবপর নয়।


বিজ্ঞাপন