অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ঃ আপনারা জানেন প্রতিটি অবকাঠামো প্রজেক্টের অর্থনৈতিক রিটার্ন আছে। পদ্মা সেতুর জন্য যেটা জিডিপির ১.২% বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ জিডিপি যদি ৪০০ বিলিয়ন হয় তবে এর ১.২% হিসাবে $৪.৮ বিলিয়ন বা ৪০,৮০০ কোটি টাকার বেনিফিট অর্থনীতিতে প্রতিবছর আসতে থাকবে। এবং এটা প্রতি বছরেই। ইকোনমিক এক্টিভিটিস বাড়বে, বিনিয়োগ বাড়বে, কাঁচামালের সরবরাহ ব্যাবস্থা শক্ত হবে, লিড টাইম কমাবে, পচনশীল দ্রব্যের ক্ষতি কমবে সেই সাথে মানুষের কর্মঘন্টা বেঁচে যাবে। যেসব প্রকল্প শেষ হতে আরো কয়েক বছর লাগবে সেগুলাকে বাদ দিলেও বর্তমানে এক বা দুই বছরের ভেতর শেষ হতে পারে এমন প্রকল্প গুলির হিসাব করা যায়। পায়রা সেতু। এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে বিশাল বুস্ট করা সম্ভব। কমপক্ষে এই অঞ্চলের জিডিপিতে এর প্রভার ১% এর কম না। সেই হিসাবে এখান থেকে আমরা ৫/৬ হাজার কোটি টাকার বুস্ট পেতে পারি। যদিও এটা নির্ভর করছে পায়রা বন্দর চালু হবার উপর। যত দ্রুত পায়রা বন্দর আরো বেশি চালু হবে তত দ্রুত আমরা এর বেনিফিট নিতে পারব। সেই সাথে দক্ষিণাঞ্চলকে পর্যটনবান্ধব ভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও এই সেতুর ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া আছে বাংলাদেশের সব থেকে দীর্ঘ রুপসা রেল সেতু এবং খুলনা মংলা রেল প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে খুলনার সাথে মংলার রেল সংযোগ স্থাপিত হলে এই অঞ্চলের শিল্পাঞ্চলগুলি নতুন করে জেগে উঠবে। পণ্য বহন খরচ কমে আসবে। এখান থেকেও হাজার কোটি টাকার বেনিফিট নেয়া সম্ভব। শক্ত যোগাযোগের অভাব মংলাকে ফুল পটেনশিয়াল থেকে বঞ্চিত করে যাচ্ছে। এটা কিছুটা কমবে। দক্ষিণাঞ্চলে গোমা সেতুর মত অনেক সেতু কাজ চলছে যেগুলা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। বা কম হচ্ছে। এগুলা হয়ে গেলে আঞ্চলিক অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। সাপ্লাই চেইন শক্ত হবে।
এছাড়া চলমান ৬ লেনের কালনা সেতুর কাজ চাইলে আগামী দেড় বা দুই বছরের ভেতর শেষ করা সম্ভব। এটা করা গেলে যশোর, বেনাপোল, নড়াইল, নোয়াপাড়া বন্দরের সাথে ঢাকার দুরত্ব অনেক কমে যাবে। গতি পাবে অর্থনীতি। এছাড়া কর্ণফুলী টানেলের কাজ ও এক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে আসবে। কক্সবাজারে সরাসরি রেল যাত্রাও এক বা দুই বছরের মধ্যে সম্ভব যা এই অঞ্চলের অর্থনীতি ও সামগ্রিম বিনিয়োগ উপযোগীতা অনেক বৃদ্ধি করবে। ঢাকা রংপুর চার লেনের ক্ষেত্রেও একি কথা প্রযোজ্য। সেতুর ও অন্যান্য প্রকল্পের হিসাবে এরকম আরো প্রচুর প্রজেক্ট আছে। এখন চলমান প্রকল্পগুলি এক্সট্রা পরিশ্রম করলে আগামী এক বা দুই বছরের ভেতর সার্ভিসে আনা সম্ভব। এ বাদে রয়েছে ইকনোমিক জোন। মিরসরাই এর মত ইকনোমিক জোনের কাজ যত দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে তত দ্রুত ROI আসবে। ইতোমধ্যে ১৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ কমিটমেন্ট এসেছে এখানে। কিছু কারখানা উৎপাদনে গিয়েছে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ২০% এর বেশি আসে ইপিজেড থেকে। ইকোনমিক জোনগুলি ইপিজেড এর থেকেও বৃহৎ আকারে ভারিশিল্পের আধার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করছে।
সব থেকে গুরুত্বপূর্ন যেটা সেটা হল বিদ্যুৎ খাত। এই খাতে করোনার কারনে চাহিদা ১২০০০ মেগাওয়াট থেকে কমে ৭০০০ মেগাওয়াট এ নেমে এসেছিল। ভারী শিল্পায়নের মাধ্যমে এই চাহিদা বৃদ্ধি করতেই হবে যত দ্রুত পারা যায়। এখনো বিদ্যুৎ উৎপাদন পর্যাপ্ত হলেও বিতরন ব্যাবস্থাকে আধুনিক করা যায়নি। এর ফলে এখনো অনেক অঞ্চলে লোড শেডিং এর প্রবলেম রয়ে গেছে।
সারা দেশে বর্তমানে ২৫ টি প্রকল্প চলমান বিদ্যুৎ বিতরন ব্যাবস্থা আধুনিক করার জন্য। আর এই ২৫ টির মধ্যে অন্যতম হল মিরসরাই ইকনোমিক জোনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রকল্প। এগুলা দ্রুত করা গেলে শিল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দ্রুত দেয়া সম্ভব হবে। ফলে চাহিদা বাড়বে।
এখানে করোনা পরিস্থিতি এবং বর্তমান ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ প্রশমিত হবার পর আমরা সব থেকে বড় যেই চ্যালেঞ্জ ফেইস করব সেটা হল প্রতিযোগিতা। অনেক শক্ত অর্থনীতি শক্তি হারাতে পারে। এরুপ ক্ষেত্রে ভঙ্গুর অর্থনীতিকে পূনর্গঠন করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে। আর এক্ষেত্রে আমরা যদি ভারত বা ভিয়েতনাম থেকে পিছয়ে পড়ি তবে আমাদের বাজার হাতছাড়া হয়ে তাদের কাছে চলে যাবে।
তাই সর্বোত্তম উপায় হবে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট গুলিতে প্রয়োজনে তিন শিফটে কাজ করিয়ে হলেও যেই কাজ দুই বছরে শেষ হবার কথা সেটা এক বা দেড় বছরে শেষ করা। এতে রিটার্ন দ্রুত পাওয়া যাবে। ফলে ভঙ্গুর অর্থনীতি দ্রুত সারিয়ে তোলা সম্ভব হবে। ইকনোমিতে যদি এই অতিরিক্ত বেনিফিট আমরা এক বছর এগিয়ে আনতে পারি তবে অতিরিক্ত লক্ষ কোটি টাকার সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে। আমাদের সক্ষমতা আমরা ধরে রাখতে পারব।