বিশেষ প্রতিবেদক : কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে আসছে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং এনআইডি উইংয়ের। ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দিয়েই স্মাটকার্ড পেয়ে যান বন্দুকযুদ্ধে নিহত রোহিঙ্গা ডাকাত নূর আলম। একইভাবে সিন্ডিকেটের জালিয়াতির মাধ্যমে এনআইডি কার্ড এবং পাসপোর্ট পেয়েছে ২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। আর সব কিছুই সম্পন্ন হয়েছে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ল্যাপটপ দিয়েই। কিন্তু সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত অন্তত ৫টি ল্যাপটপেরও হদিস মিলছে না। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের প্রাথমিক তদন্তে বের হয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
গত কয়েকদিন ধরে পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং বিভাগীয় নির্বাচন কমিশন কার্যালয় চষে বেড়াচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের বিশেষ দল। আর অনুসন্ধানে গিয়ে বের করে আনছে চমকে ওঠার মতো একের পর এক তথ্য।
বাংলাদেশি নাগরিকদেরই এনআইডি কিংবা স্মাটকার্ড নিতে গেলে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। অথচ টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত রোহিঙ্গা ডাকাত নুরুল আলম শুধু জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়েই পেয়ে যান স্মাটকার্ড। অন্যকোনো নথিপত্রই তাকে জমা দিতে হয়নি। কিন্তু সেই জন্ম নিবন্ধনটাও জাল বলে দাবি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলের।
চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ বলেন, জন্মনিবন্ধনের যে নম্বর রয়েছে সেটা সঠিক না ভুয়া তা যাচাই করার জন্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে অনুরোধ করি। তিনি অনলাইন ফরম নেই বলে জানান।
চট্টগ্রামের ৭ নম্বর ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী বলেন, জন্ম নিবন্ধন যে কোনো জেলা থেকে পেয়ে থাকতে পারে কিন্তু তা আমাদের কাউন্সিল থেকে নয়, সেটা নিশ্চিত।
শুধু নুরুল আলমের স্মাট কার্ড পাওয়া নয়, গত কয়েক বছরে ২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা এনআইডি কার্ড পেয়ে গেছে বলে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে দুদক। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ল্যাপটপ ব্যবহার করেই এসব রোহিঙ্গার নাম এনআইডি সার্ভারে যুক্ত হয়েছে।
নূর আলমের তথ্য যুক্ত করা নির্বাচন কমিশনের ৪৩৯১ আইপি নম্বরের ল্যাপটপসহ অন্তত ৫টি ল্যাপটপের এখন হদিস মিলছে না। এসব ল্যাপটপ থেকেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের এনআইডি সার্ভারে যুক্ত করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে দুদক। তবে এসব ল্যাপটপ ২০১৫ সালের আগেই হারিয়েছে বলে তথ্য নির্বাচন কমিশনের।
চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ বলেন, ল্যাপটপ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তারা কোনো জিডি বা মামলা করেনি।
নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ল্যাপটপ হারিয়ে সে তথ্য সরবারহ না করা হলে সে বিষয়ে ইসি ব্যবস্থা নেবে। রোহিঙ্গাদের এনআইডি এবং পাসপোর্ট পাওয়া ঠেকানোর পাশাপাশি তাদের সহযোগিতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি সুশীল সমাজের।
চট্টগ্রাম সনাকের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আনোয়ারা আলম বলেন, এই যে ল্যাপটপ হারিয়ে গেছে। এত উদাসীনতা এত জবাবদিহিতার অভাব। আমার মনে হয় এটা আমাদের সমাজের জন্য অশনি সংকেত। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক তদন্তে এনআইডি উইংয়ে যুক্ত হওয়া মাত্র ৭৩ জন রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করা হলেও দুদকের তথ্য এ সংখ্যা ২ হাজারের বেশি।