পেঁয়াজ সরবরাহে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা

অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন বানিজ্য রাজধানী

*বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি-নজরদারি বাড়ছে
*প্রয়োজনের বেশি পেঁয়াজ না কেনার আহ্বান

 

বিশেষ প্রতিবেদক : কলকাতাভিত্তিক কয়েকটি সিন্ডিকেট বাংলাদেশে পেঁয়াজ সরবরাহের নামে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। সিন্ডিকেটটি যেমন ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানি করতো একইভাবে দেশের সাতক্ষীরার ভোমরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ এবং দিনাজপুরের হিলি স্থল বন্দরে ক্রেতা হিসেবে থাকতো তাদেরই এজেন্ট। ৬২ টাকা দরে ভারত থেকে পাঠানো পেঁয়াজ দেশের বাজারে বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। এমনকি মিয়ানমারের ৪২ টাকার পেঁয়াজের বিক্রয় মূল্য ৯০ টাকা। দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে সিন্ডিকেটগুলোর একক আধিপত্য। প্রশাসনের অনুসন্ধানে এতথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এদিকে দেশে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে মন্তব্য করে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘এটা আমদানির জন্য ভারতের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাদের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও তারা মাঝে মাঝে দাম বাড়িয়ে দেয়, রফতানি বন্ধ করে দেয়। যার প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে।
বুধবার সকালে রাজধানীর কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে এক সেমিনারে এ কথা বলেন মন্ত্রী। বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পর একদিনের ব্যবধানে ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে ভারতীয় ও মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। সেখানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। বাজার স্বাভাবিক রাখতে ভারত নির্ভরতা কমিয়ে অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখার পরামর্শ ব্যবসায়ী নেতাদের।
তবে দাম হঠাৎ কমে যাওয়ায় লোকসানের ভয়ে বিক্রি একরকম বন্ধ করে দিয়েছেন আমদানিকারকরা। বাজার ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের হাতে আসে সাতক্ষীরার মেসার্স দীপা এন্টারপ্রাইজ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেসার্স টাটা এন্টারপ্রাইজের দু’টি আমদানি ইনভয়েস। তাতে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজের রফতানি মূল্য ধরা হয়েছে দশমিক ৫৫ ডলার। সে অনুযায়ী এসব পেঁয়াজের বিক্রয় মূল্য হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ৬০ টাকা।
কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা দরে। শুধু তাই নয়, মিয়ানামার থেকে পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের ইনভয়েসে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ধরা হয়েছে দশমিক ৫০ ডলার। সর্বোচ্চ ৫০ টাকার পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা দরে।
চট্টগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ যারা জরুরি ভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানি করেছে তার মূল্য ছিল ৪২ টাকা। কিন্তু তারা তা বিক্রি করছে ৯০ টাকা।
বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টন। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ বাংলাদেশের কৃষকরা উৎপাদন করলেও বাকিটা আমদানি হয় প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। মূলত ভোমরা, সোনা মসজিদ এবং হিলি স্থল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন দেড়শ’র বেশি ট্রাক দিয়ে এসব পেঁয়াজ দেশে আনা হয়। আর এতেই চলে কলকাতাভিত্তিক সিন্ডিকেটের কারসাজি।
এদিকে সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। শেষ পর্যন্ত বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি না করার অঙ্গীকার করেছে খাতুনগঞ্জের কয়েকজন ব্যবসায়ী। আর চট্টগ্রাম ক্যাব সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার সাবেরী বলছে, আমদানিকারক না থাকার সুযোগ নিয়েছে চক্রটি। গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। এ অবস্থায় সংকট মোকাবিলায় মিয়ানমার, চীন, তুরস্ক এবং মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে বাংলাদেশ।
সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে পেঁয়াজ বিক্রির অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। বুধবার সকালে রাজধানীর পলাশিতে কাঁচাবাজার মনিটরিং শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। মেয়র বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে, শিগগিরিই কমবে দাম। তবে প্রয়োজনের বেশি পেঁয়াজ কিনে মজুদ না করার বিষয়ে ভোক্তাদের আহ্বান জানান তিনি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *