রিকশায় তাহসান। হুড নামানো। পাশে কোনো রমণী নেই। কিন্তু রিকশার ওপরে একটা মাইক আছে, মাইক্রোফোন তাহসানের হাতে। গান করছেন না। যেই মাইক্রোফোন হাতে তাহসানকে সব সময় গান গাইতে শোনা যায়, সেই মাইক্রোফোনে তিনি আজ জানান দিচ্ছেন—একটি সংবাদ। শোক সংবাদ নয়, সুখ সংবাদ। ‘আসিতেছে, গায়ক তাহসানের প্রথম সিনেমা। এবার তিনি নায়ক তাহসান।’
সিনেমার প্রচারণায় মাইকিং করার বিষয়টি পুরনো। এ দৃশ্যের সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। কিন্তু সিনেমা মুক্তির আগে নায়ক নিজেই মাইকিং করছেন, এমনটা কেউ দেখেননি। সবাইকে চমকে দিয়ে সেই কাজটি করে যাচ্ছেন তাহসান। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিক্ষক কেন্দ্রের সামনে থেকে এমন প্রচারণা শুরু করেন তিনি। এ সময় রিকশায় সঙ্গে ছিলেন তাহসান অভিনীত ‘যদি একদিন’ সিনেমার পরিচালক মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ।
রাস্তায় মাইকিং করছেন তাহসান খান, পাশে পরিচালক মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। ছবি–সংগৃহীত‘আসিতেছে। আপনার প্রিয় প্রেক্ষাগৃহে। আপনাদের পছন্দের চলচ্চিত্র ‘যদি একদিন. ‘যদি একদিন’..‘যদি একদিন’—এভাবেই রাস্তায় মাইকিং করছেন তাহসান। পুরো বিষয়টি তিনি বেশ উপভোগও করছেন। সিনেমার প্রচারের এমন ভাবনা প্রসঙ্গে তাহসান বললেন, ‘আমরা আলোচনা করছিলাম ছবি মুক্তির আগে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কীভাবে বাড়ানো যায়। এমন সময় আমাদের দলের ফটোগ্রাফার রিয়াজ বলল, আমার মাথায় একটা আইডিয়া আছে। সিনেমার সঙ্গে তো আসলে মাইকিং অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এখন তো আর এটি হয় না। যদি ঘটা করে এই কাজটা করা যায় তাহলে কিন্তু দারুণ হয়। তখন আমি বললাম, কাজটি তো আমি নিজেই করতে পারি। মনে হলো, এটা পুরোনো ঐতিহ্য, মানুষকে আকৃষ্ট করবে।’
তাহসানের মতে, এমন প্রচারণা করতে গিয়ে সুবিধা হয়েছে। বললেন, ‘বেশ কিছু সুবিধা হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ ছবি তুলছে। ছবিটি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো ব্যপারটাও ছিল উৎসবমুখর। দলের সবাই নাচানাচি করছিল। বাদ্যযন্ত্রীর দলও ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি, যাতে শব্দদূষণ কম হয়। তাই মাইক নিয়ে প্রচারণা বেশিক্ষণ চালাইনি। দুই ঘণ্টার মতো মাইকিং করেছি।’
তাহসানকে এভাবে রাস্তায় দেখে নিশ্চয় অবাক হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমন প্রশ্নে তাহসান বলেন, ‘আসলেই তাই। মানুষ খুব অবাক হচ্ছে এই ভেবে যে, আমি কেন এমন কাজ করছি। আমার অন্য কোনো কাজের প্রচারে তো কেউ এভাবে দেখে নাই। তবে তারা সবাই বিষয়টাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে। তাদের ধারণা, আমার কাজের ওপর বিশ্বাস আছে বলেই হয়তো এমনটা করছি। ভক্ত ও সাধারণ মানুষেরা আস্থাটাও পাচ্ছে অনেক বেশি।’
তাহসান আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ সুন্দর গল্পের সিনেমা দেখতে চায়। আমাকেও তারা বড় পর্দায় দেখার জন্য বারবার বলছিল। কিন্তু ব্যাটে–বলে না মেলায় এত দিন করতে পারিনি। এবার সবকিছু মিলে যাওয়াতে নিজের সেরাটা দিয়ে সিনেমার কাজটা করার চেষ্টা করেছি।’
রাস্তায় মাইকিং করছেন তাহসান খান, পাশে পরিচালক মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। ছবি–সংগৃহীত‘যদি একদিন’ সিনেমার প্রচারে শুধু মাইকিং নয়, নানা রকমের প্রচারণায় থাকছেন এই ছবির নায়ক ও কলাকুশলীরা। কদিন আগের এক মধ্যরাতে তাহসান রাস্তায় নেমে নিজ হাতে পোস্টার লাগিয়েছেন, অনলাইন জরিপের উত্তর দিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, ছবিটির প্রতি দর্শকদের আগ্রহী করতে অনেকের বাড়ি বাড়িও হঠাৎ করে ঢুঁ মারতে পারেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রচারণা শুরু হয়ে নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, ইডেন কলেজ, গার্হ্যস্থ অর্থনীতি কলেজসহ নানা জায়গায় গিয়েছেন তাহসান, মোস্তফা কামাল রাজসহ ছবির কলাকুশলীরা। ‘যদি একদিন’ চলচ্চিত্রে তাহসানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন কলকাতার শ্রাবন্তী। আরও অভিনয় করেছেন তাসকিন, সাবেরী আলম, ফখরুল বাশার মাসুম, রাইসা, মিলি বাশারসহ অনেকে। এই সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তাহসান, হৃদয় খান, কোনাল, ইমরান, পড়শি, ফাহাদ ও আনিসা। ছবির আবহসংগীত করেছেন নাভেদ পারভেজ। গানের সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমরান ও নাভেদ পারভেজ। ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে মুক্তি পাচ্ছে ঢাকাসহ সারা দেশের ৩০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে যদি একদিন।