!! নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আবুল খায়ের নামের একজন গ্রাহক ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর (আইডি- ২২৯ ই) ২৯০ স্কয়ার ফিটের রুম বুকিং দিয়ে ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করেছেন ২০১৪ সাল পর্যন্ত। হুমায়ুন কবীর নামের আরেকজন গ্রাহক একই বছরের ১১ জুন ৩০৫ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছিলেন (৫২০ ই-২); বিনিময়ে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পরিশোধ করেছেন ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৮৫ টাকা। ফারহানা চৌধুরী লুসি ২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর (১২১৮ এফ) ২৪৫ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাটের জন্য ১০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। কিন্তু এখনো তাঁরা কোনো কিছু পাননি !!
নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ শরীফের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দুদকের মামলার আসামিরা। গ্যাস জালিয়াতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তারাই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এসব মামলা মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক বলে দাবি করে তাঁরা দুষলেন দুদকের বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনকে। এদিকে সংবাদ সম্মেলনটি শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি মূলত দুদকের বিরুদ্ধেই। কারণ দুদকের কোনো কর্মকর্তা কমিশনের অনুমোদন ছাড়া মামলার সুপারিশ করতে পারে না। গতকাল বুধবার (১৬ নভেম্বর) প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে দেড় বছর পর হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন করেন গ্যাস জালিয়াতিতে অভিযুক্ত ও দুদকের মামলার আসামি কর্ণফুলী গ্যাসের সদ্য সাবেক প্রকৌশলী সারোয়ার হোসেন, একই মামলার আসামি দিদারুল আলম, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলার আসামি আরএফ বিল্ডার্সের মালিক হাজী দেলোয়ার হোসেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার বাদী ছিলেন দুদকের শরীফ উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে সারোয়ার হোসেন দাবি করেন, শরীফের এক আত্মীয়ের বাসায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেন। শরীফ কয়েকজন আত্মীয়কেও প্রভাব খাঁটিয়ে কেজিডিসিএলে চাকরি দেন বলে দাবি করেন তিনি।
অথচ ২০২১ সালে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ প্রদান করায় সাবেক প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলামের (বিএসসি) বড় ছেলে আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. মুজিবুর রহমান, কর্ণফুলী গ্যাসের মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক ব্যবস্থাপক মো. মজিবুর রহমান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সার্ভেয়ার মো. দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন শরীফ উদ্দিন। এই মামলায় সারওয়ার, মজিবুর ও দিদারুলকে গ্রেপ্তার করে দুদক। পরে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ অবৈধ এসব সংযোগ বিচ্ছিন্নও করে। এদিকে অভিযোগের বিষয়ে শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘আমার কোনো আত্মীয়ের পক্ষ নিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে তদবির করিনি। এটি পুরো মিথ্যা। সারোয়ার সাহেব অবৈধ গ্যাস অনুমোদন দেওয়ায় মামলা করেছিলাম। যার প্রমাণ প্রতিষ্ঠানটি পেয়ে ওই সব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আখতার কবির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিচারাধীন মামলার অভিযুক্তরা কোনো ভাবেই সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন না। দুর্নীতিবাজরা-তো পারেনও না। তাদের কী রকম সাহস বা তাদের হাত কত লম্বা হলে দুদকের বিরুদ্ধেই সংবাদ সম্মেলন করল। এই থেকে বোঝা যায়, দুদকের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে।’
আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনটি যারা করেছে তারা সবাই দুদকের মামলার আসামি। কেউ কেউ জেলও খেটেছেন। তারা সাবেক একজন দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করলেও, মূলত এটি দুদকের বিরুদ্ধেই। দুদকের উচিত এখনই অ্যাকশন নেওয়া।’
সংবাদ সম্মেলনটি শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি মূলত দুদকের বিরুদ্ধেই।
আরএফ বিল্ডার্সের মালিক হাজী দেলোয়ার হোসেন দাবি করেন, মাত্র দুটি দোকান না দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়। বিষয়টিকে ‘একেবারেই হাস্যকর’ বলছেন দুদকের শরীফ। দুদকের অনুসন্ধানে শত কোটি টাকা লুটপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে হাজী দেলোয়ার হোসেন বিরুদ্ধে। দুদকের তথ্য মতে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে তিনি দুদকের মামলায়ও জেল খাটেন। তবে তাঁর বিভিন্ন ‘স্বপ্নফাঁদ’ প্রকল্পে বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত পাননি শত শত গ্রাহক। দুদকের তথ্য মতে আরও জানা যায়, ওয়েসিস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড ৩৮ হাজার ৯৮০ জন শেয়ার হোল্ডার থেকে ৫৫৭ কোটি টাকা হাতানোর টার্গেট নিয়ে সাব কবলায় ফ্ল্যাট বিক্রি শুরু করে ২০১২ সালে। চড়কদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে ফেলে সারা দেশের গ্রাহকদের স্বপ্ন দেখিয়ে অন্তত শতকোটি টাকা লুটপাট করার পরে সেই প্রতিষ্ঠানটিই গায়েব করে ফেলার অভিযোগ রয়েছে।
নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আবুল খায়ের নামের একজন গ্রাহক ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর (আইডি- ২২৯ ই) ২৯০ স্কয়ার ফিটের রুম বুকিং দিয়ে ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করেছেন ২০১৪ সাল পর্যন্ত। হুমায়ুন কবীর নামের আরেকজন গ্রাহক একই বছরের ১১ জুন ৩০৫ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছিলেন (৫২০ ই-২); বিনিময়ে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পরিশোধ করেছেন ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৮৫ টাকা। ফারহানা চৌধুরী লুসি ২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর (১২১৮ এফ) ২৪৫ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাটের জন্য ১০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। কিন্তু এখনো তাঁরা কোনো কিছু পাননি।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে হাজী দেলোয়ার বলেন, ‘আমি বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে আমার স্ত্রীর নামে জায়গা বা সম্পদ কিনেছি। এটি আমার অপরাধ। দোকান না দেওয়ায় আমি, আমার স্ত্রী ও সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা করে শরীফ।’
অভিযোগের বিষয়ে শরীফ উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ একেবারে মনগড়া। দেলোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা চলছে ঢাকায়। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। তবে, আমাকে যখন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তখন টাকা নিয়ে দোকান বা ফ্ল্যাট তাঁরা বুঝিয়ে দিতেন না বলে শত শত গ্রাহক অভিযোগ করেছিলেন।’