কমছে না পেঁয়াজের ঝাঁজ

অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় রাজধানী

বেড়েছে শীতকালীন সবজির সরবরাহ

বিশেষ প্রতিবেদক : বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়েই চলছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি পাঁচ টাকা এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। তবে স্বস্তি দিয়েছে সবজি।
রাজধানীর কাঁচাবাজারে বেড়েছে শীতকালীন শাক-সবজির সরবরাহ। যার প্রভাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম ২৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। তারা বলছেন, বৃষ্টি হানা না দিলে দাম আরও কমতো। এদিকে পর্যাপ্ত সরবরাহে সন্তুষ্টি জানালেও দাম নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ক্রেতাদের। হেমন্তের শুরুতেই সবজিতে ভরপুর রাজধানীর প্রতিটি কাঁচাবাজার। বিক্রেতারা জানালেন, বর্তমানে শীতের সবজির চাহিদাই বেশি। দামও খানিকটা কমেছে গেল সপ্তাহের তুলনায়। তবে গেল কয়েকদিনের গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে মাঠে সবজি নষ্টের প্রভাব পড়েছে বাজারে। আগাম শীতের সবজি শিম, টমেটো, গাজর, মূলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউয়ের পাশাপাশি করলা, কাকরোল, বেগুন, বরবটি, ঢেঁড়শ, পেঁপে কিনছেন ক্রেতারা। নানা অজুহাতে দাম বাড়ানো ঠেকাতে বাজারে তদারকি জোরদারের তাগিদ তাদের। আবহাওয়া ভালো থাকলে আর পরিবহনে চাঁদাবাজি না হলে সামনের দিনগুলোতে শাক-সবজির দাম আরও কমার প্রত্যাশা বিক্রেতাদের।
প্রকারভেদে ৫ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে নানা সবজিতে। সবজির দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে চাল, ডাল, ডিম, মাছ, গরু ও খাসির মাংসের বাজার। তবে কিছুটা বেড়েছে মুরগির দাম।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর মালিবাগ বাজার, রামপুরা বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গত সপ্তাহে এসব বাজারে খুচরা প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে। এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। সরবরাহ কমেছে এমন অজুহাতে বেড়েছে ভারতীয় পেঁয়াজ।
এর আগে ভারতীয় পেঁয়াজ খুচরা বাজারে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। আর পাইকারি বাজারে ১০৮ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি পেঁয়াজ। একইভাবে পাইকারি বাজারে ১০৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সংকট আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে না আসায় এ বাড়তি দাম। তবে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন বাজার মনিটরিং না করার কারণেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
মালিবাগ বাজারে এসেছেন শাহাবুদ্দিন। কথা হলো তার সঙ্গে। পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্ষোভ ঝেড়ে তিনি বলেন, প্রতিনিয়তেই দাম বাড়ছে কিন্তু কারা কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এভাবে চলতে পারে না। বাজার মনিটরিং করা দরকার। না হলে এরকম চলতেই থাকবে।
পেঁয়াজের দামে উত্তাপ থাকলেও স্বস্তি পাওয়া যাবে সবজির বাজারে। গত সপ্তাহে বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সিম ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও সপ্তাহ ব্যবধানে এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাজর ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
একইভাবে কেজিপ্রতিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে পটল বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, উস্তা-ঝিঙা-ধুন্দুল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাকরোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ৩০ টাকা, শসা (প্রকারভেদে) ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর ছড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এছাড়া আকারভেদে প্রতিপিস বাঁধা কপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, ফুলকপি ২০ থেকে ৩০ টাকা, লাউ প্রতিপিস ৪০ থেকে ৬০ টাকা, জালি কুমড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অপরিবর্তিত আছে কাঁচা মরিচের দাম। বাজারে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে কাঁচা মরিচ। গত সপ্তাহে এ দামে বিক্রি হয়েছে কাঁচা মরিচ। সবজির সঙ্গে কিছুটা কমেছে শাকের বাজার। এসব বাজারে প্রতিআটি লাল শাক ১০ থেকে ১২ টাকা, মুলার শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, পালং শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, কুমড়ার শাক ২৫ থেকে ৩০ টাকা, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা আটি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে সবজির দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে চাল, ডাল, ডিম, মাছ ও মাংসের বাজার। এসব বাজারের প্রতিকেজি (আকারভেদে) রুই ২২০ থেকে ৩৫০ টাকা, মৃগেল ২০০ থেকে ২৮০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা, পাঙাস ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, কই ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কেজিপ্রতি দেশি চিংড়ি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, শিং ৩০০ থেকে ৬৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৪৪০ থেকে ৮৫০, বাইন মাছ (দেশি) ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, বাইন মাছ (নদী) ৫০০ থেকে ৮৫০ টাকা, বাইলা ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা, কাচকি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মলা ২৫০ থেকে ৩০০, পুটি (দেশি) ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারে প্রতিকেজি গরু ও মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা, খাসি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, ছাগী ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে কেজিপ্রতিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মুরগির। এসব বাজারে প্রতিকেজি বয়লার ১৫০ টাকা, লেয়ার (সাদা) ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, লেয়ার (লাল) ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অপরিবর্তিত আছে ডিম, ডাল, চাল ও ভোজ্য তেলের দাম।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *