নিজস্ব প্রতিবেদক : ২৫ মার্চ ১৯৭১ সন্ধ্যায় রেডিও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাংলার চলমান আন্দোলনকে ‘দেশদ্রোহিতা’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগকে ‘নিষিদ্ধ’ করেন।
২৫শে মার্চ রাতে শুরু করা গণহত্যা ২৬ মার্চেও চালিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা। ঢাকায় কারফিউ ঘোষণা করে ভবন, বস্তি, বাজারে ভারী মেশিনগান ও কামানের গোলা নিক্ষেপ করা হয়। শহরের ঘনবসতির অনেক এলাকায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ও গুলি করে বাঙালিদের হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরস্ত্র শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মী হত্যার এক উন্মত্ততা চলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন ইকবাল হল, সলিমুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল, সূর্যসেন হল, মহসীন হল, ফজলুল হক হল, রোকেয়া হলসহ শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে ড. জি সি দেব, ড. মুনিরুজ্জামান, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্য, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ (আহত হয়ে পরে মারা যান) নয়জন শিক্ষককে ঘরে ঢুকে হত্যা করে পাকিস্তানিরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে চালানো হয় পৈশাচিক বর্বরতা। পরে হলের অন্তত একটি কক্ষে ছয়জন ছাত্রীর নগ্ন মরদেহ পা-বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই গণহত্যায় শহীদদের বেশিরভাগের মরদেহ বিভিন্ন হল সংলগ্ন মাঠে মাটিচাপা দিয়ে তার ওপর বুলডোজার চালিয়ে দেওয়া হয়।
সেনারা সকালে ক্যাম্পাসে থাকা জীবিত কর্মচারীদের দিয়ে শহীদদের মৃহদেহ গর্তে ফেলতে বাধ্য করে এবং তাদেরও লাশের স্তুপের পাশে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে খুন করে। ওই রাতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক কতজনকে হত্যা করা হয়েছিল, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা আজও হয়নি। যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় তেমন ১৯৫ জনের নাম আছে; যাদের মধ্যে জগন্নাথ হলের ৬৬ জন।
২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটকের আগেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করে দেশবাসীর উদ্দেশে একটি তারবার্তা পাঠান। ইপিআরের ওয়ারলেস বার্তায় প্রচার করা হয় তার স্বাধীনতার ঘোষণা।
যখন প্রথম গুলিটি ছোড়া হল, ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে ক্ষীণস্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠস্বর ভেসে এল। ওই কণ্ঠের বাণী মনে হল আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ঘোষণায় বলা হয়, এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।
বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
রবিবার ২৬শে মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই স্বাধীনতা, এই দিনে জাতি স্মরণ করছে বীর শহিদদের।
স্বাধীনতা দিবস তাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে মুক্তির প্রতিজ্ঞায় উদ্দীপ্ত হওয়ার ইতিহাস। তাই এই দিনটিকে সকল শহীদদের স্মরণ করা ও তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করার সঠিক সময়।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে বিএসটিআই এর রংপুর বিভাগীয় অফিসের উদ্যোগে ২৫ শে মার্চ কলঙ্কিত গণহত্যার কালো রাত্রিতে কুখ্যাত অপারেশন সার্চলাইট নামে মুক্তিকামী যে সকল কন্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে রাতে বিশেষ দোয়া মাহফিল করা হয় এবং রাত ১০.৩০-১০.৩১ পর্যন্ত ১ মিনিট নিরাবতা পালন করা হয়।
২৬ শে মার্চ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নতুন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় , ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে হাতে ফুল ও ব্যানার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে প্রভাত ফেরীতে সকল কর্মকর্তা কর্মচারী রংপুর এর মর্ডাণ মোড় সংলগ্ন অর্জন শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
বাদ যোহর বিএসটিআই বিভাগীয় অফিস রংপুর এর মসজিদে ১০ জন হাফেযের মধ্যমে কুরআন শরীফ খতম করার ব্যবস্থা করা হয়।এরপর দোয়া মাহফিল ও ইফতার এর আয়োজন করা হয়।
এতে সকল শহিদ ও তাঁদের পরিবারবর্গ, ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট শাহাদৎবরণকারী স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক শেখ মজিবুর রহমান এর পরিবারবর্গসহ চলমান বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ঠ অনিষ্ট থেকে পানা চেয়ে সবার মঙ্গল ও মাগফেরাতের জন্য আল্লাহ’র কাছে দোয়া করা হয়।
দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন হাফেজ মোঃ শামীম হোসেন বিএসটিআই রংপুর বিভাগীয় অফিসের ইমাম।
