বিশেষ প্রতিবেদক : ৮২১ কোটি টাকা ব্যয়ে পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আরও একটি স্বপ্নের সেতু বেকুটিয়ায় কঁচা নদীর ওপর সেতু নির্মণ কাজে এগিয়ে চলছে। প্রায় অর্ধেক ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। ২০২১ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে এ সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ
চীন সরকারের অনুদান সহায়তায় বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহা সড়কের বেকুটিয়ায় কঁচা নদীর ওপর ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণের জমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, স্থাপনা অপসারণ এর প্রাথমিক কাজ শেষ করে মূল সেতু নির্মাণের কাজের প্রায় অর্ধেক সম্পন্ন হওয়ার পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। এ সেতুটির নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাওয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ স্থল বন্দর বেনাপোল থেকে যশোর-খুলনা-বাগেরহাট-পিরোজপুর-ঝলকাঠী-বরিশাল-ভোলা এবং দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলা অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ আনন্দিত হয়েছে।
স্বপ্নের সেতু পদ্মার সাথে প্রায় একই সময় শেষ হবে বেকুটিয়া সেতুর নির্মাণ কাজ। ২০১৭ সালের জুন মাসে রাজধানীর সড়ক ভবনে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ব্রীজ ম্যানেজমেন্ট উইং এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পরিমল বিকাশ সুত্রধর এবং চীন সরকারের পক্ষে আর্ন্তজাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা এজেন্সির ডেপুটি ডিরেক্টর জিয়াং জিং ৮ম বাংলাদেশ-চীণ মৈত্রী সেতু নির্মাণের চূড়ান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। প্রাথমিকভাবে এ মূুল সেতু নির্মাণের খরচ নির্ধণ করা হয়েছিল ৬শত ২০ কোটি টাকা। যার পুরোটাই চীন সরকার অনুদান হিসেবে দিতে সম্মত হয়েছে। মূল সেতুর দুই দিকের সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণের মূল্য এবং সড়ক নির্মাণের খরচ বহণ করছে বাংলাদেশ সরকার। এছাড়া নির্মাণ কাজে বিদ্যুৎ, মাটি ভরাট এবং চীনের প্রকৌশলীবৃন্দসহ চীনা কর্মীদের আবাসন ব্যবস্থার দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের। পিরোজপুর শহরে ৫ কিলোমিটার পূর্বে কঁচা নদীর ভাটিতে বেকুটিয়া ফেরীঘাটের সন্নিকটে এ সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
বেকুটিয়া ফেরীঘাট থেকে ৮শত ৩৫ মিটার দক্ষিণে এবং কাউখালী প্রাান্তের ফেরীঘাট থেকে ১১৫ মিটার উত্তরে ৯৯৮ মিটার দীর্ঘ ও ১০.৩ মিটার প্রশস্ত এবং সেতুর উভয়পাশে মোট ১৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। যাবতীয় নদী শাসন, আবহাওয়া. বাতাসের গতি. নদী ভাংগনসহ অন্যান্য বিষয় চীনা বিশেষজ্ঞদল কয়েকবার জরিপ করে এসে এলাকা ঘুরে সবকিছু চ’ুড়ান্ত করার পরপরই এ সকল কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায়। এদিকে দীর্ঘদিনের সীমাহীন দুর্ভোগ লাঘব হতে যাওয়ায় এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি, শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মুখেমুখে এখন পদ্মা ও বেকুটিয়া সেতু। বেকুটিয়া সেতুর কাজ সমাপ্ত হলে বেকুটিয়া নৈকাঠী ও চরখালী-টগড়া ফেরী সার্ভিসের আর কোন প্রয়োজন হবে না। এদিকে দেশের একমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর পায়রা এবং সমুদ্র সৈকত সাগর কন্যা কুয়াকাটার সাথে সর্ববৃহৎ স্থল বন্দর বেনাপোল এবং সমুদ্র বন্দর মংলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে এ বেকুটিয়া সেতুটি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের পিরোজপুরের নির্বার্হী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন জানান, ইতোমধ্যেই প্রায় ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি আরো জানান এ সেতুটি নির্মিত হলে পিরোজপুর জেলার চারটি উপজেলার সাথে জেলা সদরের সরাসরি সড়ক সংযোগ স্থাপিত হবে। এছাড়া এ সেতুটি পদ্মার এপাড়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতুতে পরিণত হবে। পিরোজপুরের সম্মিলিত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকিব জানান, বেকুটিয়া সেতুটি উন্মুক্ত হলে এ অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হবে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান অকল্পনীয়ভাবে উন্নীত হবে।