নিজস্ব প্রতিবেদক : কোকা কোলা বাংলাদেশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা অনুযায়ী এক বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত আলোচনা সভায় “দেশে কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে যৌথ প্রকল্পের গুরুত্ব” শীর্ষক ওয়েবিনার আয়োজন করেছে এসআর এশিয়া। ওয়েবিনার চলাকালে বাংলাদেশে এসআর এশিয়া এবং দ্য কোকা কোলা ফাউন্ডেশনের যৌথ প্রকল্প ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট অফ প্লাস্টিক অ্যাসর্টমেন্ট অ্যান্ড কন্ট্রিবিউশন টুওয়ার্ডস প্রিন ইকোনমি “ইমপ্যাক্ট জিই” এ প্রকল্পের ফলাফল উপস্থাপন করে। দেশে কার্যকর ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঐ প্রকল্পের গুরুত্বও তুলে ধরা হয়।
এছাড়া, ওয়েবিনারে ব্র্যাক ও কর্ডএইড-এর সাথে দ্য কোকা- কোলা ফাউন্ডেশনের অন্যান্য যৌথ প্রকল্পের পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়। প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশ এবং আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তাদের প্রকল্প উপস্থাপন করে।ওয়েবিনারটির উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে আরো কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যৌথ প্রকল্পের গুরুত্বের বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে অংশীদারদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা এবং উন্নয়নের পথ হিসেবে সার্কুলার ইকোনমির গুরুত্ব তুলে ধরা। এছাড়া রিসাইক্লিং, রিসাইক্লেবল উপাদান ও আরপেট বিষয়ে আলোকপাত করা এবং অংশীদারদের সাথে প্রকল্পের ফলাফল ও প্রভাব শেয়ার করা।
ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন এসআর এশিয়া বাংলাদেশ এর পরিচালক ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ড. মাহফুজুল হক। ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করে আলোচনায় অংশ নেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব এম. জিয়াউল হক এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও স্থায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রেসিডেন্ট জনাব অসিত বরণ বিশ্বাস। সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ওয়েবিনারে অংশ নেন। বেসরকারি খাত আইএনজিও এবং এনজিও-র প্রতিনিধিগণ। কোকা-কোলা এবং দা কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারাও এতে উপস্থিত ছিলেন।
ওয়েবিনার চলাকালীন এসআর এশিয়া তাদের প্রকল্পের মডেল উপস্থাপন করে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে টেকসই পরিবেশ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ উদ্যোগ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এই প্রকল্পের মডেলে ৩০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাদের পদ্ধতিগতভাবে পেট প্লাস্টিক সংগ্রহ করে রিসাইকেল করার জন্য সংগঠিত করা হয়। এর মাধ্যমে তারা এই খাতে আরো বেশি অবদান রাখতে পারেন।
এসআর এশিয়া-র পর ব্র্যাক কর্ডএইড আনেট অ্যান্ড ইয়াং এবং প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশ বাংলাদেশে বর্জ্যব্যবস্থাপনা বিষয়ে নিজেদের প্রকল্পের মডেল উপস্থাপন করে।পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব এম. জিয়াউল হক বলেন, “টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১০ বছর মেয়াদী মাল্টিসেক্টরাল অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে। এবং এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন এবং এসআর এশিয়ার উদ্যোগের মতো দেশীয় এনজিও এবং আইএনজিও পার্টনার কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং প্রশংসা করতে হবে।”আলোচনায় বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বর্তমান চিত্র তুলে ধরা হয়। একইসাথে এই সমস্যা মোকাবেলায় ও এরসমাধানে সকলের সম্পৃক্ততার ওপরও জোর দেওয়া হয়।
“কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যা নিরসনে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নানা ধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। আমি রেজিলিয়েন্ট (RESILIENT) প্রকল্পে দ্য কোকা কোলা ফাউন্ডেশন এবং কর্ড এইড এর সাথে কাজ করেছি। যেখানে আমি দেখেছি যে, এই ধরনের উদ্ভাবনী উদ্যোগের প্রতি মানুষ দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়। এবং আমি বিশ্বাস করি যে এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্যগুলো কার্যকরভাবে অর্জন করা যেতে পারে।” বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও স্থায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রেসিডেন্ট জনাব অসিত বরণ বিশ্বাস।
এসআর এশিয়া-র কান্ট্রি ডিরেক্টর সুমাইয়া রশিদ বলেন, “এই যুগে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি পরিচ্ছন্ন ও সবুজ পৃথিবী রেখে যাওয়ার জন্য আমরা দায়বদ্ধ। বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দিনের বেশিরভাগ সময় রাস্তায় কাটান যাতে আমরা সুন্দরভাবে সমাজে বসবাস করতে পারি। একটি স্বাস্থ্যকর শহর নিশ্চিত করার জন্য তাদের অবদানকে আমাদের স্বীকৃতি দিতে হবে। এই ধরনের প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা আমরা প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করছি। এমন উদ্যোগে দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের সহায়তাকে আমি স্বাগত জানাই। সেইসাথে, আমি সব প্রতিষ্ঠানকে একসাথে এই সমস্যা মোকাবেলায় এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”
কোকা-কোলার সাস্টেইনেবিলিটি কার্যক্রমের পক্ষ থেকে ভারত ও দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার সাসটেইনেবিলিটি পরিচালক রাজেশ আয়াপিল্লা বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ওয়েবিনারটি আয়োজন করার জন্য এসআর এশিয়াকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, “টেকসই প্যাকেজিংয়ের ব্যবহার বাড়াতে কোকা-কোলা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এসব প্যাকেজিংয়ের মধ্যে আছে লাইটওয়েট প্যাকেজিংয়কে নতুন করে ডিজাইন করা রিসাইকেলড উপাদানের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা এবং উদ্ভাবনী প্যাকেজিং সমাধান গড়ে তোলা। আমরা জানি যে, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমাজের মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আমরা ভারত ও দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে সমন্বিত প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর রিসাইক্লিংয়ের জন্য টেকসই প্রোগ্রাম গড়ে তোলার লক্ষ্যে সক্রিয়ভাবে আমাদের পার্টনারদের সাথে কাজ করছি।”
সমাপনী বক্তব্যে এসআর এশিয়া-র পরিচালক ড. মাহফুজুল হক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরের কাছ থেকে শিখতে এবং নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারবে। জাতিসংঘ নির্ধারিত এ বছরের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “প্লাস্টিক দূষণ এড়ানো (Beat Plastic Pollution) IM এই প্রতিপাদ্যের মধ্য দিয়ে কোকা-কোলা কোম্পানির বর্জ্যমুক্ত পৃথিবী (World Without Waste) গড়ে তোলার বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটে। কোম্পানির বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির সাথে মিল দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে বিভিন্ন পার্টনারের সাথে বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।২০২১ সালে টিসিসিএফ এর সহায়তায় ব্র্যাক আরবান ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কল্যাণের জন্য “বন্ধন” প্রকল্প চালু করে।
২০২২ সালে টিসিসিএফ ‘ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট অফ প্লাস্টিক অ্যার্টমেন্ট অ্যান্ড কন্ট্রিবিউশন টুওয়ার্ডস গ্রিন ইকোনমি (ইমপ্যাক্ট -জিই)” প্রকল্পে এসআর এশিয়া এবং “রিসাইক্লিং ফর দি এনভায়রনমেন্ট বাই স্ট্রেংদেনিং ইনকাম অ্যান্ড লাইভলিহুড অফ অন্ট্রাপ্রেনারস- রেজিলিয়েন্ট” প্রকল্পে কর্ড এইডকে সহায়তা প্রদান করে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে তোলা এই প্রকল্পগুলোর উদ্দেশ্য ছিল। বর্জ্যমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার বৈশ্বিক প্রতিজ্ঞা জোরদারে কোম্পানিটি ইউএনডিপির-র মতো প্রতিষ্ঠানের সাথে নতুন পার্টনারশিপের সুযোগ খুঁজে বের করতে ক্রমাগত কাজ করছে।
দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন (টিসিসিএফ): ১৯৮৪ সালে দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিবেশ সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং মানুষ ও কমিউনিটির সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য এ পর্যন্ত তারা বিশ্ব জুড়ে ১.৪ বিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে।
এসআর এশিয়া: সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি এশিয়া (এসআর এশিয়া) বাংলাদেশ হলো আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কিং সংস্থা এসআর এশিয়ার একটি অংশ। ২০১২ সাল থেকে টেকসই উন্নয়ন করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর) গ্রিন প্রোডাক্টিভিটি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবসা নিয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। এপিও জাপান ও সদস্য দেশগুলোর এনপিও দ্বারা আরওসি তাইপেই-এ প্রশিক্ষক পরিচালিত প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। সদস্য দেশগুলোর এপিও ও এনপিও এসআর এশিয়ার কৌশলগত বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। টেকসই ব্যবসায়িক অনুশীলনকে একীভূত করার জন্য বিভিন্ন লক্ষ্য ও কৌশল মিলিয়ে মাইক্রো, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি রোডম্যাপ তৈরিতে সহায়তা করছে সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি এশিয়া (এসআর এশিয়া) বাংলাদেশ। ব্যবসার জন্য রোডম্যাপে অন্তর্ভুক্ত মূল বিষয়গুলো হলো: উৎপাদনশীলতা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ সংরক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়ন, ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সামাজিক দায়বদ্ধতা, অংশীদারদের সাথে মিলিতভাবে দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণ। এসআর এশিয়া সরকার, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থা নাগরিক সমাজ সংস্থা, ব্যবসায়িক সহায়তা সংস্থা ইত্যাদির সাথে কাজ করছে।