নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রবাসী স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য নিজ ছেলেকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার নাটক সাজাতেন বাবা। সেসব ছবি ও ভিডিও পাঠাতেন প্রবাসে থাকা স্ত্রীর কাছে। ভয় পেয়ে ও সন্তানের জীবন রক্ষায় স্বামীর কথা মতো টাকা পাঠাতেন স্ত্রী। স্ত্রী-সন্তানের প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণ করা ব্যক্তির নাম- আব্দুল জলিল।
গত রোববার (৪ জুন) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আ. জলিলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এর আগে গ্রেপ্তাকৃতের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণের শিকার ভুক্তভোগী শিশু রনির (১০) নানী।
পরে আদালতের নির্দেশে মামলা তদন্তভার পায় পিবিআই। দীর্ঘ দুই মাস তদন্ত করে মামলার আসামি আব্দুল জলিল ও ভুক্তভোগী রনির সন্ধান পায় পিবিআই। এরপর গত রোববার রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচা এলাকার উদ্ধবন স্কুল সংলগ্ন জামালের বাসা থেকে আব্দুল জলিলকে গ্রেপ্তার ও তার জিম্মা থেকে রনিকে উদ্ধার কে পিবিআই।
গতকাল সোমবার পিবিআই জানায়, মামলার বাদী তার কন্যা শারমিনকে প্রায় ২৩/২৪ বছর আগে আব্দুল জলিলের সাথে বিয়ে দেন। পরে শারমিন ও আব্দুল জলিলের ঘরে তিন কন্যা ও এক ছেলে জম্মগ্রহণ করে। আব্দুল জলিল কোনো কাজ কর্ম করতেন না। নেশাগ্রস্ত ছিলেন। স্ত্রী ও সন্তানদের প্রচণ্ড মারধর করতেন।
আর্থিক দুরবস্থা কাটাতে মামলার বাদী তার মেয়ে শারমিনকে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদিতে পাঠান। সেখান থেকে শারমিন সময় মতো টাকা পয়সা পাঠাতে না পারলে আব্দুল জলিল তার সন্তানদের অমানুষিক নির্যাতন করতেন। এসব নির্যাতনের কারণে শারমিনের বড় কন্যার অন্যত্র বিয়ে হয়। আরেক কন্যাকে তার চাচা ও ছোট মেয়েকে তার নানীর (মামলার বাদি) আশ্রয়ে চলে যায়।
একমাত্র ছোট ছেলে রনিকে তার বাবা মামলার আসামি আব্দুল জলিল রেখে দেন। এরপর থেকে জলিল তার স্ত্রীর কাছ থেকে চাহিদামত টাকা পেতে ভিকটিম রনিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেন। টাকা না পেলেই ছেলের প্রতি অত্যাচার শুরু করতেন।
পিবিআই’র এসআইএন্ডও (অর্গানাইজড ক্রাইম-দক্ষিণ) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান বলেন, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে জলিল তার ছেলে রনিকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিনয় করেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার কয়েকজন সহযোগীদের সহায়তায় রনিকে গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে সিলিং ফ্যানের রডের সাথে ঝুলিয়ে হত্যা নিশ্চিত করার অভিনয় করেন।
পরে ঘটনার ভিডিও করে ও ছবি তুলে ভিকটিমের মা শারমিনের ইমোতে পাঠায়। জলিল ও তার ছেলের সন্ধান না পেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন শারমিন। পরে আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটি তদন্ত শুরু করে।
দীর্ঘ দুই মাস তদন্ত করে মামলার আসামি জলিল ও ভিকটিম রনির সন্ধান পাওয়া যায়। পরে জলিলকে গ্রেপ্তার ও ভুক্তভোগী শিশু রনিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
ভিকটিম রনি জানিয়েছে, তার বাবা তাকে ফাঁসির মতো করে ঝুলিয়ে ভিডিও করে ও ছবি তুলে তার মায়ের ফোনে পাঠাত পাঠাতেন, যাতে তার মা ভয় পেয়ে দ্রুত বাবাকে টাকা পাঠান, না হলে মেরে ফেলবে। এভাবে তাকে নিষ্ঠুর ও অমানষিক আচরণ করত ভিকটিমের সাথে তার বাবা।
পিবিআই কর্মকর্তা সারোয়ার গণমাধ্যম কে বলেন, আব্দুল জলিলকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।