নিজস্ব প্রতিবেদক : গৃহপরিচারিকা সেজে বাসায় কাজ নিয়ে সুযোগ বুঝে কৌশলে গৃহকর্তীকে অজ্ঞান করে বাসার নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সদস্য মোসাঃ বিলকিস বেগম @ কনা @ রুজিনা @ নুরজাহান (৪০), পিতা-মোঃ বিল্লাল খাঁ, মাতা-মোসাঃ আম্বিয়া বেগম, স্বামী-মোঃ ইসমাইল, পিতার ঠিকানা: গ্রাম-হাজংপাড়া, থানা-ধোবাউড়া, জেলা-ময়মনসিংহ, স্বামীর ঠিকানা: গ্রাম-রুকনাই, (লালমিয়া মেম্বারের বাড়ীর পাশে), থানা-মেলান্দহ, জেলা-জামালপুর, বর্তমান ঠিকানা: বাসা নং-২০২, ব্লক-ডি, রিয়াজনগর (আউটপাড়া) কাঁচাবাজার সংলগ্ন, থানা-বাসন, জেলা-গাজীপুর কে গত বুধবার ২ আগস্ট কোতোয়ালী থানা, ডিএমপি ঢাকা এলাকা হতে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর), ঢাকা এর একটি বিশেষ টিম অভিযান পরিচালনা করে আটক করে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ৩ আগস্ট, বেলা সাড়ে ১১ টায় পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ে আলোচিত চুরির এই রহস্য উদঘাটন সংক্রান্তে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিপিএম-সেবা, পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর)। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুর রউফ সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এবং সহকারী পুলিশ সুপার তৃপ্তি মন্ডল।
অত্র মামলার বাদী জনৈক মনোয়ার আলী (৬৬), পিতা-মৃত ইরফান আলী, সাং-২০নং দিলু রোড, নিউ ইস্কাটন হাতিরঝিল থানায় হাজির হয়ে গত ১২/০৯/২০২২ সালে লিখিত অভিযোগ করেন যে, আসামী নুরজাহান (২৫), পিতা ও সাং-অজ্ঞাত কে পাশের বাসার দারোয়ান গোলাম মোস্তফা গত ০৮/০৯/২০২২ সালে বাদীর বাসায় কাজ করার জন্য পাঠায়। বাদী সরল বিশ্বাসে উক্ত কাজের মহিলাকে তার বাসায় কাজ করার জন্য প্রতি মাসে ৬,০০০ (ছয় হাজার) টাকা বেতনে নিয়োগ দেন। গত ১১/০৯/২০২২ সালে সকাল অনুমান ৯ টার সময় বাদীর স্ত্রী ও উক্ত কাজের মহিলাকে বাসায় রেখে বাদী অফিসে যান। অফিসে যাওয়ার পর আমেরিকা থেকে বাদীর মেয়ে মোমেনা মনোয়ার সকাল ১১ টা ৩৫ মিনিটের সময় বাদীকে ফোন করে জানান যে, বাসায় তার মা ফোন রিসিভ করছেন না।
তখন বাদী দ্রুত বাসায় গিয়ে দেখেন যে, তার স্ত্রী অজ্ঞান অবস্থায় বিছানার উপর পড়ে আছেন এবং বাসার মালামাল এলোমেলো অবস্থায়। নুরজাহান নামীয় নিয়োগ দেওয়া কাজের মহিলা বাসায় নেই। বাদী তখন তার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য মগবাজার ইনসাফ বারাকা হাসপাতালে ভর্তি করেন।
পরবর্তীতে বাদী জানতে পারেন যে, গত ১১/০৯/২০২২ সালের সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে সকাল ১১ টা ১৫ মিনিটের সময়ের মধ্যবর্তী যে কোনো সময়ে বাদীর স্ত্রী রেজিনা রহমান (৫৫) কে বাসায় একা পেয়ে কজের মহিলা নুরজাহান (ছদ্মনাম) ও অজ্ঞাত আরো ১ (এক) জন মিলে কৌশলে অজ্ঞান করে বাসার জিনিসপত্র এলোমেলো করে বাসায় থাকা নগদ ৪,৫০,০০০ (চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা ও একটি স্বর্ণের বালা ও একটি স্বর্ণের চামচ যার মোট ওজন অনুমান ১ (এক) ভরি ০৮(আট) আনা, মূল্য অনুমান ১,১২,০০০ (এক লক্ষ বার হাজার) টাকা চুরি করে পালিয়ে যায়।
বাদীর স্ত্রী কিছুটা সুস্থ হলে বাদী তার নিকট থেকে সংঘটিত ঘটনার বিস্তারিত শুনে হাতিরঝিল থানায় গিয়ে অত্র অভিযোগ দায়ের করেন। বাদীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে হাতিরঝিল থানার অফিসার ইনচার্জ হাতিরঝিল হাতিরঝিল থানার মামলা নং-২১, তারিখ-১২/০৯/২২ , ধারা-৩৮০/৩২৮ দঃ বিঃ রুজু করেন এবং তদন্তভার এসআই (নিঃ) মোঃ রহমত উল্লাহ রনীর উপর অর্পণ করেন। এসআই রনি মামলাটির তদন্ত শেষে মামলার ঘটনায় বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন।
হাতিরঝিল থানা পুলিশ কতৃর্ক দাখিলকৃত চূড়ান্ত রিপোর্ট এর বিরুদ্ধে বাদীর নারাজীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অ্যাডিশনাল আইজিপি, পিবিআই, ঢাকাকে নির্দেশ প্রদান করলে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে এসআই (নিঃ) মোঃ রবিউল ইসলাম কে নিয়োগ করেন।
মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে কাজের মহিলা সেজে কৌশলে বাসার লোকজনকে অজ্ঞান করে সুযোগ বুঝে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সদস্যদের সনাক্তকরণ সহ গ্রেফতারের জন্য অ্যাডিশনাল আইজিপি, পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সার্বিক নির্দেশনায় এবং বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিপিএম, সেবা, পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর নিবিড় তদারকিতে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর এসআই (নিঃ) মোঃ রবিউল ইসলাম, এসআই (নিঃ) আবু নাসের সরকার, এএসআই (নিঃ) জুবায়ের ইবনে সাইদ, কং -১৩৭৩ মোঃ সুজন মিয়া ও নারী কং-১২৪৩-রত্না’দের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ টিম উল্লেখিত মামলার আসামী নুরজাহানকে গত বুধবার ২ আগস্ট ডিএমপি ঢাকার কোতোয়ালী থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করেন। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী নুরজাহান জানান যে, সে ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ নেওয়ার সময় ভিন্ন ভিন্ন নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে।
প্রকৃতপক্ষে তার প্রকৃত নাম ও ঠিকানা: মোসাঃ বিলকিস বেগম @ কনা (৪০), পিতা-মোঃ বিল্লাল খাঁ, মাতা-মোসাঃ আম্বিয়া বেগম, স্বামী—মোঃ ইসমাইল, পিতার ঠিকানা: গ্রাম-হাজংপাড়া, থানা-ধোবাউড়া, জেলা-ময়মনসিংহ, স্বামীর ঠিকানা: গ্রাম-রুকনাই, (লালমিয়া মেম্বারের বাড়ীর পাশে), থানা-মেলান্দহ, জেলা-জামালপুর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত আসামী বাদীর এজাহারে বর্ণিত নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা এবং হাতিয়ে নেওয়া স্বর্ণালঙ্কার ডিএমপি ঢাকার খিলক্ষেত থানা এলাকা এবং জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানা এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রয় করার কথা স্বীকার করে।
উক্ত আসামী ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন বাসায় একই কৌশলে ভিন্ন ভিন্ন নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথাও স্বীকার করে।
অনুসন্ধান করে উক্ত আসামীর বিরুদ্ধে শেরে বাংলা নগর থানার মামলা নং-৩২, তারিখ-১৪/০৫/২০১৯ , ধারা-৩৮১ দঃ বিঃ, এবং ভাটারা থানার মামলা নং-৫৪, তারিখ-২০/১১/২০২০, ধারা-৩৮১ দঃ বিঃ ও ৩। উত্তরা পশ্চিম থানার মামলা নং-০৪, তারিখ-০২/০৪/২০২৩, ধারা-৩৮১ দঃ বিঃ রুজু হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য যে, শেরে বাংলা নগর থানার উল্লেখিত মামলায় উক্ত আসামী বিলকিস (৪৪), পিতা-বিল্লাল, সাং-আদ্দমপাড়া বাজারের পাশে নতুন বাড়ী, থানা-ধোবাউড়া, জেলা-ময়মনসিংহ নামীয় নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে মোঃ সোহেলের বাসা হতে নগদ ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা ও লকারের চাবি, ভাটারা থানার উল্লেখিত মামলায় উক্ত আসামী রুজিনা (৩৮), পিতা, সাং, থানা-অজ্ঞাত নামীয় নাম ব্যবহার করে মোঃ সিদ্দিকুর রহমানের বাসা হতে নগদ ১০,০০,০০০ (দশ লক্ষ) টাকা ও অনুমান তিন ভরি ওজনের বিভিন্ন প্রকারের স্বর্ণালঙ্কার যার মূল্য অনুমান ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ), উত্তরা পশ্চিম থানার উল্লেখিত মামলায় উক্ত আসামী কনা (৪০), পিতা-ও সাং-অজ্ঞাত, থানা-হালুয়াঘাট, জেলা-ময়মনসিংহ নামীয় নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে মোঃ মুশফিক ইসলামের বাসা হতে নগদ ১,৫০,০০০ (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা ও ৫,১২,০০০ (পাঁচ লক্ষ বার হাজার) টাকার বিভিন্ন প্রকারের স্বর্ণালঙ্কার টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ডিএমপি ঢাকার শেরে বাংলা নগর থানা, ভাটারা থানা ও উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ উক্ত আসামীর বিরুদ্ধে উল্লেখিত তিনটি থানার মামলার ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এ তদন্তাধীন হাতিরঝিল থানার মামলা নং-২১(০৯)২২, ধারা-৩৮০/৩২৮ দঃ বিঃ এর ঘটনায় লুন্ঠিত নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার সহ উক্ত আসামীর সাথে আরো কোন কোন আসামী উল্লেখিত মামলা সহ উল্লেখিত অপরাপর মামলায় জড়িত আছে তা সনাক্তকরণ সহ গ্রেফতারের নিমিত্তে গ্রেফতারকৃত আসামী মোসাঃ বিলকিস বেগম @ কনা (৪০) কে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।