বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। তবুও থেমে নেই মাদকের বেচাকেনা। কৌশল পাল্টেছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। মোবাইল ফোনে খদ্দেরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন স্থানে গাঁজা বা ইয়াবা পৌঁছে দিচ্ছে তারা। অথবা তাদের কথামতো নির্ধারিত স্থানে গিয়ে চাহিদা মতো মাদক কিনছে মাদকসেবীরা। তবে একটু পরপরই অবস্থান বদলাচ্ছেন মাদকের কারবারিরা। তাই নির্দিষ্ট স্থানে তাদের অবস্থান ট্রেস করা সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ ও কয়েকজন মাদকসেবীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বনানী থানাধীন বেদে বস্তির চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মাঈনুদ্দিন ওরফে ভাগিনা মাঈনুদ্দিন পেশায় ড্রাইভার। একসময় পুলিশের সোর্স থাকা অবস্থায় বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ালেও পুলিশের সাথে থাকার সুবাদে কেউ তাকে কিছুই বলেনি। এছাড়া প্রকাশ্যে বেদে বস্তির মাঠে রাত হলেই জুয়ার আসর সহ মাদকের আড্ডা বসিয়ে নিজেকে ছাত্রলীগ নেতার ভাই হিসেবে পরিচয় দেন ভাগিনা মাঈনুদ্দিন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাঈনুদ্দিনের বাবা ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের নিচে কাঁচা তরকারি বিক্রি করেন। আর তার ভাই ছাত্রলীগ নেতা। সেই প্রভাবে খুব দপটের সাথে মাদক ব্যবসা করছেন মাঈনুদ্দিন। ড্রাইভিং পেশার আড়ালে ভ্রাম্যমান ভাবে বিভিন্ন স্থানে কৌশলে মাদক পৌঁছে দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মাদকসেবী জানায়, ইয়াবা ব্যবসা আড়াল করতে ড্রাইভার হিসেবে পরিচয় দেন মাদক কারবারি ভাগিনা মাঈনউদ্দিন। তিনি মূলত ভ্রাম্যমাণ ইয়াবা ব্যবসায়ী। বিকাশে টাকা দিলে জায়গামতো পৌঁছে দেন ইয়াবা। সঙ্গে রয়েছে তার আরেক সহযোগী মরম আলী।
জানা গেছে, বনানী ৩ নাম্বার রোডের ‘এফ’ ব্লকের ৭৯নং বাড়িতে ড্রাইভিং পেশাটা মাইনুদ্দিনের লোক দেখানো মাত্র। তার আড়ালে চলে মাদক ব্যবসা। মূল উদ্দেশ্য অন্যের গাড়ি ব্যবহার করে এক গন্তব্য থেকে আরেক গন্তব্যে মাদক দ্রব্য পৌঁছানো। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে মাদক কেনাবেচা করেন তিনি।
এর আগে মাইনুদ্দিনের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে অপরাধ বিচিত্রার সাংবাদিক হাবিব সরকার স্বাধীনের বাসায় (খিলক্ষেত থানার ক-৮১ মা ভিলায়) ভ্রাম্যমান আদালতের পরিচয়ে মরম আলী, মাঈনুদ্দিন ও পুলিশের সোর্স সুমন সহ ৮/৯ জনের সংঘবদ্ধ দল জোরপূর্বক প্রবেশ করে হামলা চালিয়েছিল। এ বিষয়ে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন হাবিব সরকার। এছাড়া খিলক্ষেত থানায় সাধারন ডায়রিও করেছিলেন।
এদিকে আরেক ভ্রাম্যমাণ ইয়াবা ব্যবসায়ী বনানীর ওয়্যারলেছ গেইটে ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় সংলগ্ন বুলুর বাড়ীর গাড়ি চালক কাশেম। তিনি কৌশলে ড্রাইভারের ছদ্দবেশে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে কড়াইল বস্তিসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা করেন। প্রভাবশালী মালিকের ছত্রছায়ায় থাকার কারনে এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে কাশেম। জানা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে সব মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকা ছাড়া হলেও ওয়্যারলেস গেইট এলাকায় বর্তমানে কাশেম একমাত্র মাদক ব্যবসায়ী। খুব কৌশলে তিনি ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে মহাখালী সাততলা বস্তিতে এক সময় মাদকের রমরমা ব্যবসা ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে সব মাদক স্পট ভেঙে দিয়েছে। এই বস্তিতে এক সময় যারা প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করতো, বর্তমানে তারা পলাতক থাকলেও বস্তির বাইরে ভ্রাম্যমান মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করছেন আতর আলী।