দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) দুই ছাত্রলীগ নেতা হত্যার পাঁচ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছে পরিবার।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন নিহত ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান মিল্টনের মা রেবেকা খাতুন। এতে আবেগাপ্লুত হন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে নিহতের পরিবারকে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেন তিনি।
সোমবার (০৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তারা। এ সময় নিহত দুই ছাত্রলীগ নেতার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা অনুদান ও হত্যার বিচারের আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নিহত দুই ছাত্রলীগ নেতার পরিবারের সদস্যরা। একই সঙ্গে হত্যার বিচারের আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল হাবিপ্রবির ভেটেরিনারি অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের সঙ্গে ছাত্রলীগের অন্য অংশের সংঘর্ষে নিহত হন বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকারিয়া ও কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান মিল্টন।
ঘটনার পাঁচ বছর পরও খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে পারেনি পুলিশ। সব শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে পাঁচ বছর পর হলেও সুষ্ঠু বিচারের আশায় বুক বেঁধেছেন নিহত দুই ছাত্রলীগ নেতার স্বজনরা।
নিহত জাকারিয়ার বাবা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ছেলের খুনিদের বিচার চেয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর ঘুরেছি। কিন্তু বিচার পাইনি। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়েও পাইনি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার আমাকে আশ্বস্ত করেছেন আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার করবেন। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, এই হত্যার বিষয়টি এত দিন আমি জানতাম না। এখন জানলাম। এর বিচার হবেই। তাৎক্ষণিক নিজের পিএসকে বিষয়টি দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
নিহত মাহমুদুল হাসান মিল্টনের মা রেবেকা খাতুন বলেন, আমার ছেলে হত্যার বিচার চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এবার বিষয়টা আমি জেনেছি। খুনিদের বিচার হবেই। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
এরপর নিহত দুই ছাত্রলীগ নেতার স্বজনদের হাতে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পক্ষের নেতাকর্মীরা।
আন্দোলনরত অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল ভেটেরিনারি অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফতেখার ইসলাম রিয়েল ও সম্পাদক অরুণ কান্তি রায় গ্রুপের ওপর হামলা চালায়। এতে বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকারিয়া ও কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান মিল্টন নিহত হন।
এ ঘটনায় পরিবারের করা পৃথক দুটি মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়। নিহত মিল্টনের চাচা মাকসুদুর রহমান বাদী হয়ে ৩৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় উপাচার্য রুহুল আমিনকে এক নম্বর আসামি করা হয়।
অন্যদিকে নিহত জাকারিয়ার বাবা গোলাম মোস্তফা একই বছর দিনাজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু ইবনে রজ্জবকে এক নম্বর আসামি করে এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চনসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক বলেন, মিল্টন ও জাকারিয়া হত্যা মামলায় প্রকৃত আসামিদের বিচার করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা যা সাহায্য করার দরকার আমরা করব। দুই শিক্ষার্থী হত্যার বিচারের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য সহযোগিতা করব আমরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) ড. মো. আবুল কাশেম বলেন, আমরা চাই দুই শিক্ষার্থী হত্যার বিচার হোক। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে মামলার তদন্তের স্বার্থে যা যা সাহায্য করার দরকার তাই করব আমরা।