ঢাকা ওয়াসার সিআরও এস এম মোস্তফা কামাল মজুমদার।
নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ ঢাকা ওয়াসার রাজস্বখেকো দলের কমান্ডার ইন চীফ তথা সিআরও এস এম মোস্তফা কামাল মজুমদার কে নানা দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৩০/৫/২০২২ তারিখে সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুর আলম সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত পত্রে ৬/৬/২০২২ তারিখে জিজ্ঞাসাবাদেও জন্যে দুদকে তলব করা হয়েছিল।
তবে তিনি ৬ জুনের স্থলে ১৩ জুন দুদকে হাজিরা দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে। ২৮/১/২০২২ তারিখে ঢাকা ওয়াসার পাম্প অপারেটর মো: হারুনুর রশিদ ও ১/৬/২০২২ তারিখে ওয়াসার বিলিং সহকারী নাজমুল হোসেন সহ অনেকে বিভিন্ন সময়ে ওয়াসার সিআরও এস এম মোস্তফা কামাল মজুমদার এর নানা দুর্নীতির অভিযোগ এনে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে।
দুদকে দাখিলকৃত অভিযোগের বিবরন অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা(মূল পদ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী; সায়দাবাদ প্রকল্পের ডিপিডি। ঘুষ লেনদেনের অপার সুযোগ থাকায় তদবির করে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা(সিআরও) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন) এস এম মোস্তফা কামাল মজুমদার নিয়োগ,বিশেষকরে আউটসোর্সিং নিয়োগ,বদলি,ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। ১৩৫ , পশ্চিম কাফরুল ,এস.বি. নগর ,ঢাকা-১২০৭ নম্বর হোল্ডিং এ অবস্থিত বিলাসবহুল বহুতল ”প্রশান্তি” ভবনের মালিক তিনি।
এছাড়াও ঢাকায় তার ২টি বিলাসবহুল ফ্লাট রয়েছে। সাভার ও গাজীপুরে একাধিক প্লট ক্রয় করেছেন। গাজীপুরে রিসোর্ট করেছেন। চেইন মেডিসিন শপ ”প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট” এর মালিকও তিনি।ঢাকায় করেছেন একটি হাসপাতাল। রয়েছে একাধিক প্রাইভেট কার। তার বেতনের বেসিক ৬৯,৮৫০ টাকা এবং সর্বসাকুল্যে বেতন ১২৯,০৭৫.০০ টাকা। তার উক্ত সম্পদ জ্ঞাত আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ন নয়। সম্পদের উৎস হচ্ছে ঘুষ বাণিজ্য।
ওয়াসার রাজস্ব বিভাগে স্থায়ী-অস্থায়ী সকল নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানত: তার পরিবার,এলাকাবাসী ও আত্মীয়দের নিয়োগ দিয়েছেন। আউটসোসির্ং নিয়োগ প্রক্রিয়া তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। ঠিকাদারদের সাথে পারস্পরিক যোগসাজসের মাধ্যমে আউটসোর্সিং নিয়োগের সকল জনবল তিনি সরবরাহ করে বিশাল অংকের নিয়োগ বাণিজ্য করেন। ঢাকা ওয়াসার ১১টি রাজস্ব জোনের প্রধানদের তথা ডিসিআরও এবং আরও দের নিকট থেকে বড় অংকের মাসোহারা আদায় করেন।
ডিসিআরও এবং আরও গণ আবার রাজস্ব পরিদর্শকদের চাপ দিয়ে মাসোহারা আদায় করেন। রাজস্ব পরিদর্শকগণ তখন ইচ্ছা-অনিচ্ছায় মিটার টেম্পারিং,আন্ডার বিলিং করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে একদিকে রাজস্ব কর্মকর্তাদের মাসোহারা দিচ্ছেন অন্যদিকে সুযোগে নিজের পকেটও ভারি করছেন। এই প্রক্রিয়ায় ওয়াসায় চলে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার মহোৎসব। এমতাবস্থায় রাজস্ব বিভাগের সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পড়তে হয় বিপাকে।
রাজস্ব বিভাগে যত পদায়ন ও বদলী হয়েছে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে তার এলাকাবাসী এবং জাকির হোসেন প্রধানীয়া, এম এম ইকরাম, ইব্রাহিম খলিল, সোহেল রানা, সফিকুল ইসলামদের মত হেফাজত-জামায়াত পন্থী কর্মকর্তাদের পদায়ন ও বদলী করেছেন।তিনি ঢাকা ওয়াসায় স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক। মোস্তফা কামাল মজুমদার ও উল্লেখিত কর্মকর্তাগণ জামায়াত-হেফাজতের রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিয়মিত অনুদান দিয়ে থাকেন। জামায়াত-হেফাজতের নেতা-কর্মীরা ওয়াসার কার্যালয়ে এসে তাদের সাথে বৈঠকও করেন।
সম্প্রতি মিটার ক্রয় পর্যবেক্ষণের জন্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে তুরস্ক সফর করার কথা ছিল। তবে কোন কারনে তিনি যাননি। অবশ্য মিটার ক্রয় বাবদ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের ঘুষ গ্রহন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, এই প্রথম ঢাকা ওয়াসার কোন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকে তলব করা হয়েছে।