বেনাপোল-পেট্রোপোল সীমান্ত এলাকা।
মোঃ আসাদুজ্জামান (বেনাপোল) : ভারতে পাচারের শিকার ২০ নারী, শিশুকে উদ্ধারের পর স্বদেশ প্রত্যাবাসন আইনে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে কার্যক্রম শেষে তাদেরকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ভালো কাজের প্রলোভনে দালালের খপ্পরে পড়ে বিভিন্ন সময় তাঁরা দেশের বিভিন্ন সীমান্ত পথে ভারতে পাচার হয়েছিল। বাংলাদেশে ফেরার পর আইনি সহায়তায় তাদেরকে তিনটি মানবাধিকার সংস্থা গ্রহণ করেছে। সীমান্তে হস্তান্তরের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে পাচার প্রতিরোধে বিভিন্ন সংগঠন কাজ করলেও কোনো ভাবে থামছে না এসব কার্যক্রম। তবে পাচার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, সচেতনতায় কমাতে পারে পাচার কার্যক্রম। আর ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের আইনি সহায়তা নিয়ে।
সরেজমিন দেখা যায়, চোখে–মুখে ঘরে ফেরার আনন্দ বলে দেয় বন্দী জীবন থেকে তাদের মুক্তির স্বাদ। কেউ প্রেমিকের প্রতারণা, কেউ উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন, আবার কেউ ভালো কাজের আশায় দালালের হাত ধরে পাড়ি জমায় ভারতে।
এমন পাচারের শিকার ২০ নারী, শিশুকে উদ্ধারের পর আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠায় কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তারা। পাচারের শিকার এসব বাংলাদেশিদের একেক জনের জীবনে রয়েছে লোমহর্ষক কাহিনি।
ফেরত আসা এক কিশোরী বলে, ‘আমাকে ড্যান্সার বানানোর কথা বলে ভারতে নিয়ে বিক্রি করে প্রেমিক। পরে বুঝতে পেরে পুলিশের হাতে ধরা দেই।’সে আরও বলে, ‘বন্দীদশা থেকে ফেরত আসতে পারব ভারতে পারেনি। এ ভুল পথে আর পা বাড়াব না।’
ফেরত আসা এক কিশোরীর অভিভাবক বলেন, ‘মেয়েকে ফিরে পেয়ে তিনি খুশি। তবে পাচারের ঘটনায় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাই। কিন্তু টাকা দিতে পারেনি বলে সহযোগিতা পাইনি।’
ফেরত আসা এক নারী বলেন, তিনি দেশে কিশোরী থাকা অবস্থায় হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে এক মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করেন। কিন্তু তিনি তখন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাঁর বাবা মামলা করেন। সেই মামলায় তিনি জেল খেটে বেরিয়ে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে পুলিশ আটক করেছিল। দুবছর পর তিনি বাড়ি ফিরছেন।
মানবাধিকার সংস্থা জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার এস এস মুহিত হোসেন জানান, ফেরত আসা ২০ জনের মধ্যে ৩ জন পুরুষ ও ১৭ জন নারী ও শিশু রয়েছে। এদের মধ্যে ৭ জনকে জনকে জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার, ৮ জনকে রাইটস যশোর ও ৫ জনকে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি গ্রহণ করেছে আইনি সহায়তা দিতে।
পাচার প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের পরিচালক বিদোষ চন্দ্র বর্মণ জানান, পাচার প্রতিরোধে সরকার বিভিন্ন ভাবে কাজ করছে। সবার সহযোগিতায় পাচার প্রতিরোধ সম্ভব।