মামার জোরে চাকুরী পাওয়া প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ খান।
বিশেষ প্রতিবেদক : ১৯৯৬ সালে বিআইডব্লিউটিত্রতে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চাকুরীতে প্রবেশ করেন তিনি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ১০ জন নিয়োগের কঠোর সিদ্ধান্ত থাকলেও শুধুমাত্র মামার জোরে ১৩ নম্বর ব্যক্তিসহ সর্বমোট ১৩ জনকেই চাকরি দিতে বাধ্য করা হয় বিআইডব্লিউটিত্র কর্তৃপক্ষকে। এতে বেতন ভাতা বাবদ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাতে হয়েছে সংস্থাটিকে। মামার আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় সম্পূর্ণ গায়ের জোরে একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে তার কপাল খুলে যায়।
![](https://ajkerdesh.com/wp-content/uploads/2024/05/WhatsApp-Image-2024-05-31-at-21.07.07_c7f123fd.jpg)
যে কারণে তিনি আজ শতকোটি টাকার মালিক। তিনি জানতেন আওয়ামী লীগ অন্তত আগামী ২০৪১ সাল পর্যন্ত রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় আছে। যে কারণে তার টিকিটি স্পর্শ করার ক্ষমতা কারো নেই বিআইডব্লিউটিত্রতে। আলোচিত সমালোচিত সেই ভাগিনার নাম সুলতান আহমেদ খান। বর্তমানে তিনি বিআইডব্লিউটিত্রর ড্রেজিংয়ের মংলা-পাকশী প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
বিআইডব্লিউটিত্র সূত্র জানায়, তিনি অবৈধভাবে গায়ের জোরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০০৯ সালে একই স্টাইলে সহকারি পদে পদোন্নতি লাভ করেন। কারণ এখানেও রয়েছেন তার মামা কুষ্টিয়ার আলোচিত সাবেক এমপি মাহবুবুল আলম হানিফ। যিনি এক সময় স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মাহবুবুল আলম হানিফের বড় ভাই ১৯৯৬ সালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রাশেদুল হাসানের আশীর্বাদেই মূলত অবৈধভাবে সুলতান আহমেদ খানকে চাকরি দেওয়া হয়।
যেহেতু প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ খানের দুই মামা অত্যন্ত প্রভাবশালী সেহেতু তার ক্ষমতার হাত ছিল অনেক লম্বা। তিনি ৫ আগস্টের আগেই কাউকে পাত্তা দিতেন না। বলতে গেলে তার দাপটে ভবনের অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারি ছিল অসহায়। সূত্র জানায়, সহকারি প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও তাকে অনৈতিকভাবে সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৭ টি পদ শূণ্য থাকার পরও সুলতান আহমেদ খানকে পদোন্নতি দিতে বাধ্য হয়েছে বিআইডব্লিউটিত্র কর্তৃপক্ষ। প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ খানের ক্রমিক ছিল ৯ নম্বরে। সুতরাং তার পদোন্নতির ক্ষেত্রেও বিআইডব্লিউটিত্র কর্তৃপক্ষ আত্মসমার্পন করেন সুলতান আহমেদের ক্ষমতার কাছে।
২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মামা মাহবুবুল হানিফের দাপট দেখিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন সুলতান আহমেদ খান। বদলী ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাবনা জেলার শতাধিক লোকজনের কাছ থেকে মােটা অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করে তাদের চাকরি দিয়েছেন।
এদিকে সুলতান আহমেদ খান যে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সেই প্রকল্পের দুইজন পিডি যারা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তাদেরকে সরিয়ে তিনি প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন। এখানেও মাহবুবুল হানিফের দোহাই দিয়ে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী পদমর্যাদার একজন (৬ষ্ঠ গ্রেড) কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ খান উক্ত পদটি দখলে নেন। তিনি একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হয়েও ভুয়া সার্টিফিকেটের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি নেন।
তিনি ১২শ’ কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালক হয়ে পাবনা ও কুষ্টিয়া এলাকার ড্রেজিং এর মাধ্যমে খননকৃত মাটি বিক্রি করেই প্রায় ৬/৭শ কোটি টাকা লোপাট করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।এসব মাটি বিক্রি করে রাস্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে তিনি সমুদয় রাজস্ব আত্মসাৎ করেন।
যা নিয়ে সচেতনমহলে ব্যাপক ক্ষোভ থাকলেও মামার প্রভাবের কারণে এতোদিন কেউ প্রতিবাদ করতে পারেননি। কিন্তু এখন মুখ খুলছেন অনেকেই। এ ব্যাপারে ঢাকা বিভাগের দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।